ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

হযরত আমির খসরু একাধারে তুর্কি, আরবী ও ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী ছিলেন। তার সংগীতের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। তৎকালীন ভারতীয় সংগীতের একাংশ ছিল গ্রিক প্রভাবিত। অন্যাংশ ছিল আরব ও ইরান প্রভাবিত। হযরত আমির খসরু এই দুটি ধারার সমন্বয় বিধান করে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম ধারা প্রবর্তন করেন। ভারতীয় সংগীতের ক্ষেত্রে এটা একটি বড় ধরনের অগ্রগতি ও অর্জন। হযরত আমির খসরু যেহেতু ফারসি কবিতা ও সংগীতে পারদর্শী ছিলেন এবং একই সঙ্গে ভারতীয় সংগীতকলার বিষয়েও তার ব্যাপক জানাশোনা ছিল, ফলে এই দুয়ের মিলন সাধন তার পক্ষে অধিকতর সহজ ও সম্ভবপর হয়েছে। ইরানী সংগীতের ‘পরদা’ এবং ভারতীয় সংগীতের ‘রাগে’ সমন্বয় করে তিনি এক নতুন সংগীত প্রকরণ সৃষ্টি করেন। হযরত আমির খসরুর সংগীতের একটি বিশেষ ভঙ্গীকে বলা হয় ‘কাওল’। এটি দ্বিভাষিক সঙ্গীত। ফারসি ও হিন্দি ভাষার। সুফি-দরবেশদের মাহফিলে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কাওল গাওয়া হতো। হযরত নিজামউদ্দীন আওলিয়ার দরবারে হযরত আমির খসরু স্বয়ং কাওল গাইতেন। কাওল থেকে ‘কাওয়ালি’ শব্দের উদ্ভব। কাওলের বহুবচন কাওয়ালি। হযরত আমির খসরুকে কাওয়ালির উদ্ভাবক বা জনক বলা হয়। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে কাওয়ালি এখানো অত্যন্ত জনপ্রিয় সঙ্গীত।
কাওয়ালির মতো ‘খেয়াল’ও উপমহাদেশের সব দেশেই গাওয়া হয়। খেয়ালের পূর্বে উপমহাদেশে পরিচিত সংগীতধারা ছিল ‘ধ্রুপদ’। হযরত আমির খসরুর কৃতিত্ব হলো, কাওয়ালির মতো খেয়ালকেও তিনি জনপ্রিয় ও সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়া তার অনেক সংগীত ধারা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। ‘তারানা’র কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। তারানাও হযরত আমির খসরুর আবিষ্কার।
হযরত আমির খসরু অসংখ্য ‘রাগ’ ও ‘তাল’ সৃষ্টি করেন। তার রাগগুলোর মধ্যে সাহগাড়ি, ইয়ামানি, ইসাহাক, মুয়াফিক, গানাম, জিলাপ, ফারগানা সারপরদা, ঘারা, মুজির, সাহানা, খেয়াল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার আবিষ্কৃৃত তালগুলোর মধ্যে প্রধান হলো, সাওয়ারি, ফিরুদাস্ত, পাহলোয়ান, জাট, পুস্ত, কাওয়ালি, আড়াচৌতালি ইত্যাদি।
তিনি বহু বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবক ও বাইরের অনেক বাদ্যযন্ত্রের প্রচলক ছিলেন। সেতারা, তবলা প্রভৃতি তার আবিষ্কার। আর রতবার, দোলক প্রভৃতি ইরান ও আরব থেকে আনা।
বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসে উপমহাদেশীয় সংগীতের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও অবস্থান রয়েছে। এ ব্যাপারে মুসলিম সংগীত সাধকদের অবদান অবিস্মরণীয়। হযরত আমির খসরু হিন্দি-উর্দু ভাষা, কবিতা, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদিতে যে অবদান রেখে গেছেন, তা আমাদের বিস্ময়াবিষ্ট করে। (সমাপ্ত)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড