ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

শায়খ নাসির উদ্দীন মাহমুদ চেরাগ-ই-দেহলভী-১

Daily Inqilab ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ এএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২২ এএম

শায়খ নাসির উদ্দীন মাহমুদ নিজামী চিশতী (১২৭৪-১৩৩৭) মরমীকবি এবং চিশতী তরিকার এক বিখ্যাত সুফি সাধক। তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা তাঁকে ‘রওশন চেরাগ-ই-দেহলভী’ বলে অবহিত করেন, যার অর্থ ‘দিল্লির আলোকিত বাতি।’ তিনি ছিলেন সুফি সাধক শায়খ নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার শিষ্য এবং পরবর্তীকালে তাঁর উত্তরসূরি। শায়খ নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার ধর্মপ্রচার ও মানবসেবার মিশনকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন দূরদূরান্তে। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে তাঁর সময়ের একজন মহান সাধক ও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, ‘জাতি, বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি দয়া প্রসারিত করা উচিত। প্রতিটি মানুষের উচিত আল্লাহ নির্দেশিত নৈতিকতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, যিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টির প্রতি তাঁর দানশীলতা ও দয়া প্রসারিত করেন। যখন সূর্য উদিত হয়, এটি তাদের অবস্থান নির্বিশেষে সকলকে আলো এবং উষ্ণতা দেয়। বৃষ্টি হলে সবাই এর সুফল পায়। এগুলো হল আল্লাহতায়ালার রহমত ও নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ এবং মানুষের উচিত, যতটা সম্ভব সেগুলোকে অনুকরণ করার চেষ্টা করা।’

তিনি মানুষকে তিন ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করেন, ১. সাধারণ মানুষ (আওয়াম), ২. নির্বাচিত (খাওয়াস), ৩. সুপার-ইলেক্ট (আখাস-উল-খাওয়াস)। এই শ্রেণীবিভাজন সামাজিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে নয়, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। এটি সাধারণ মানুষের চেয়ে নির্বাচিতদের জন্য আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা আরও কঠিন করে তোলে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা আল্লাহ তায়ালার দর্শনকে বাধা দেয় তাহল পাপ; নির্বাচিতদের ক্ষেত্রে এটি অবহেলা (গফলাত) বা বৈধ আনন্দে লিপ্ত হওয়া; সুপার-ইলেক্টের ক্ষেত্রে পর্দা হল হাসানাত (গুণ)। শেষ শ্রেণীর একজনের কাছে তার ধার্মিকতায় শ্রেষ্ঠত্বের আশা করা হয়, কারণ নিছক মঙ্গল তার জন্য কিছুই নয়।

সময়ের ব্যবধানে তিনি দিল্লীতে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। দিল্লী থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলে ইসলামের বিস্তৃতির আশায় জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। হযরত খাজা নাসির উদ্দীন চেরাগ-ই-দেহলভীর আমলে এমন কোনো ব্যক্তিত্ব ছিল না, যিনি এই ধরনের প্রচেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যরা ইসলামের বাণী নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। বিশেষভাবে তাঁর শিষ্যগণ দাক্ষিণাত্যে ইসলামের শিক্ষা ও প্রচারের জন্য স্থানান্তরিত হন এবং তাদের প্রচেষ্টা সেখানে সফলতা লাভ করে। তাঁর শিষ্য ও উত্তরসূরিদের মধ্যে হযরত বুরহান উদ্দীন (রহ.), যিনি আওরঙ্গাবাদে গিয়ে সেখানে শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেন এবং তিনি সেখানেই বনে যান সবচেয়ে সফল ব্যক্তি। খাজা চেরাগ-ই-দেহলভী শিষ্যদের যে নির্দেশ দেন, তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তিনি বলেন, ‘একজন মরমীবাদীর এমন আচরণ করা উচিত নয়, যেন সে অন্যদের থেকে আলাদা। শ্রেষ্ঠত্বের একটি ঘৃণ্য অনুভূতির প্রজনন ছাড়াও, এটি তার এবং মানুষের মধ্যে একটি উপসাগর তৈরি করে। তাকে বিভিন্ন মেজাজ ও পেশার মানুষের সাথে মিশতে হবে এবং এমন আচরণ করতে হবে, যেন সে তাদের একজন।’


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
আরও

আরও পড়ুন

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা