মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)-২

Daily Inqilab ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম

শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) ২৬ জুন ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে (৯৭১ হিজরি) ভারতের পাঞ্জাবের সিরহিন্দ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই, শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ) ব্যতিক্রমী বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা এবং ধর্মীয় অধ্যয়নের প্রতি প্রবল ঝোঁক প্রদর্শন করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছিল তাঁর পিতা শায়খ আবদুল আহাদের কাছ থেকে, যিনি একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন। তিনি ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং আধ্যাত্মিক রহস্য বোঝার আগ্রহের কারণে ইসলামী শিক্ষার প্রতি অনুরাগী হন। এদিকে শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) ইসলামী আইনশাস্ত্রে ইজতিহাদ ও কিয়াসের ব্যবহার স্বীকার করেন এবং উভয়ের ব্যবহারকে সমর্থন করেন। তিনি যুক্তি দেন যে কিয়াস এবং ইতজিহাদ বিদ’আতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

সুফিবাদে মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)-এর অবদানগুলো রূহানিয়ত অনুশীলনের সাথে ইসলামী শিক্ষার একীকরণের উপর জোর দিয়ে ঐতিহ্যের বিকাশে সাহায্য করেছিল। ইসলামের মৌলভিত্তির উপর তাঁর জোর সুফিবাদকে এর মূলনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিল, অপরদিকে তাঁর আধ্যাত্মিক নির্দেশিকাগুলোর অনুমোদন আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য একটি কাঠামোগত এবং খাঁটি পথ লালন করেছিল। দর্শনের পরিম-লে, অস্তিত্বের প্রকৃতি এবং ঐক্যের ধারণা সম্পর্কে আহমদ সিরহিন্দির অনুসন্ধানগুলো আধিভৌতিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রশ্নগুলির অন্বেষণের ভিত্তি স্থাপন করে, যা ইসলামী দার্শনিক চিন্তাধারার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। সুফিবাদ এবং দর্শন উভয় ক্ষেত্রেই তার অগ্রগামী ধারণার মাধ্যমে, শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) একজন বিশিষ্ট প-িত হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন যার বৌদ্ধিক উত্তরাধিকার বহু শতাব্দী ধরে টিকে আছে।

শায়খের অনুসারীরা তাঁর আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে তার টিকাগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও অধ্যয়ন করা হয়। শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.)-এর শরিয়াহ অনুশীলনের উপর জোর দেওয়া এবং নকশবন্দী সুফিধারার মধ্যে একজন সংস্কারক হিসেবে তার অংশগ্রহণ তাঁর সময় এবং পরবর্তী শতাব্দীতে ভারতের ধর্মীয় ভূগোল গঠনে অবদান রাখে। তার মতাদর্শ দেওবন্দী আন্দোলনকে সাহায্য করার জন্য যুগান্তকারী ছিল, যা পরবর্তীতে ১৯ শতকে আবির্ভূত একটি উল্লেখযোগ্য পুনরুজ্জীবন আন্দোলনে পরিণত হয়।

শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) স¤্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তাঁর আন্দোলনকে ভারতের বাইরে ছড়িয়ে দেন। একাডেমিক মিশনারি হিসেবে অনেক ছাত্রকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠান, যেমন: মুহম্মদ কাসিম নামে এক ছাত্রের নেতৃত্বে ৭০ জন ব্যক্তি তুর্কিস্তানে প্রেরণ করা হয়। ফারুক হোসেন নামে অন্য একজন ছাত্রের অধীনে ৪০ জনকে আরব উপদ্বীপ, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং আনাতোলিয়ায় পাঠানো হয়। চীনের কাশগরে মুহাম্মদ সাদিক নামের আরেক ছাত্রের অধীনে ১০ জনকে পাঠানো হয়। শায়খ আহমদ বাকরি নামে অন্য একজন ছাত্রের অধীনে ৩০ জন ব্যক্তি তুর্কিস্তান, বাদাখশান এবং খুরাসানের উপকণ্ঠে পৌঁছেন।

মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.) তাঁর সময়ে সুফিবাদের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আধ্যাত্মিক শুদ্ধি, ভক্তি এবং ইসলামের বিধিবিধান অনুশীলনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। এই পদ্ধতির মূল্য যোগ করে, তিনি তাঁর লেখা এবং উপদেশ দিয়ে যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা ভারতে এবং তার বাইরের সুফি ধারায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড