ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

শের শাহ শুরি : প্রজ্ঞার প্রতাপ-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম


বাবর তার মন্ত্রী আমীর মীর নিজামুদ্দীন খলিফাকে বলেছিলেন : শের খানের দিকে নজর রাখুন, সে একজন চতুর লোক এবং তার কপালে রাজত্বের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমি অনেক আফগান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে দেখেছি, যারা তার চেয়েও বড়, প্রভাবশালী। কিন্তু তারা কখনোই আমার মনে ছাপ ফেলতে পারেনি। এই লোকটিকে দেখার সাথে সাথে এবং তার অভিব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছে, তাকে গ্রেফতার করা উচিত। কারণ, আমি তার মধ্যে মহানুভবতার গুণাবলী খুঁজে পেয়েছি। তার মধ্যে আছে রাজত্ব ও পরাক্রমের চিহ্ন।

অপরদিকে শেরশাহ নিজেকে তৈরী করছেন ভবিষ্যতের জন্য। মুগলদের তিনি পরাজিত করার পরিকল্পনা সাজিয়ে নিয়েছেন তখনই। এক বন্ধুর সাথে কথোপকথনের সময় শের শাহ মন্তব্য করেছিলেন: যদি ভাগ্য আমার পক্ষে থাকে, তবে আমি খুব শিগগিরই মুগলদের হিন্দুস্তান থেকে বিতাড়িত করব। কারণ মুগলরা দলবদ্ধ যুদ্ধে বা একক যুদ্ধে আফগানদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। কিন্তু আফগানরা তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে দিল্লী সাম্রাজ্যকে তাদের হাত থেকে পিছলে যেতে দিয়েছে। আমি মুগলদের মধ্যে ছিলাম, তাদের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানি। আমি ভালোভাবে জানি যে, তাদের কোন আদেশ বা শৃঙ্খলা নেই এবং তাদের রাজারা জন্মগত অহংকারে অন্ধ, ব্যক্তিগতভাবে তারা সরকারকে তত্ত্বাবধান করেন না এবং রাজ্যের সমস্ত বিষয় ও ব্যবসা অন্যের হাতে ছেড়ে দেন। তাদের উচ্চপদস্থ ও মন্ত্রীদের কথা ও কাজের প্রতি তারা নিখুঁত আস্থা রাখে। কিন্তু উচ্চপদস্থ ও মন্ত্রীরা সৈনিক বা কৃষক বা বিদ্রোহী জমিদারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।

শেরশাহের চোখের দিকে তাকিয়ে বাবর বুঝতে পারেন তিনি হুমকি। শের শাহও বুঝতে পারেন বাবর তাকে পাকড়াও করবেন। তিনি দ্রুত রাজধানী ত্যাগ করেন। চলে যান বিহারে।
বিহারের গভর্নরের অধীনে চাকরি নেন। ১৫২৮ সালে বিহারের গভর্নরের মৃত্যুর পর তিনি বিহারে একটি উচ্চ পদ লাভ করেন এবং ১৫৩০ সালে রাজ্যের ডি-ফ্যাক্টো শাসকে পরিণত হন। তিনি এই অঞ্চলের অভিজাতদের উচ্চাকাঙ্খার মোকাবেলা করেন এবং বাংলার সালতানাতের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।

বিচ্ছিন্ন আফগানদের একত্রিত করে তিনি বাংলা ও বিহারে প্রতিষ্ঠিত করেন। শের শাহ শক্তিবৃদ্ধি করেন ক্রমাগত, যা চারপাশকে আচ্ছন্ন করতো আপন প্রভাবে। এতে শঙ্কিত না হয়ে পারেননি বিহারের আমিরগণ। তারা সম্মিলিতভাবে বাংলার সুলতান মাহমুদকে শের শাহের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৫৩৪ সালে তাঁদের বাহিনীকে পরাজিত করেন শের শাহ। ফলে বিহার অঞ্চল পূর্ণরূপে তাঁর হস্তগত হয়। ১৫৩৭ সালে শের শাহ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করে গৌড় অধিকার করেন। ১৫৩৮ সালে মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে মুগল সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৭ সালে চুনার দুর্গ আক্রমণ করে দখল করে নেন শের শাহ ভিন্ন পথে আক্রমণ করে বারাণসী ও জৌনপুর অধিকার করেন এবং হুমায়ুন ফিরে যান আগ্রায়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন পুনরায় আক্রমণ করলে শের শাহ হুমায়ুনকে পরাজিত করেন। ফলে শেরশাহ দিল্লি আগ্রা জৌনপুর, বারাণসী, বিহার ও বাংলা সম্রাট হন। এভাবেই তিনি শুর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। শের শাহের শাসন ভূমি ছিল বিশাল বাংলা, বিহার, নেপাল ও পাকিস্তানের কিছু অংশ। তার রাজধানী ছিল সাসারামে, যা বর্তমানে ভারতের বিহারে অবস্থিত।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
আরও

আরও পড়ুন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা