ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

শের শাহ শুরি : প্রজ্ঞার প্রতাপ-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ১২:২৩ এএম


বাবর তার মন্ত্রী আমীর মীর নিজামুদ্দীন খলিফাকে বলেছিলেন : শের খানের দিকে নজর রাখুন, সে একজন চতুর লোক এবং তার কপালে রাজত্বের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমি অনেক আফগান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে দেখেছি, যারা তার চেয়েও বড়, প্রভাবশালী। কিন্তু তারা কখনোই আমার মনে ছাপ ফেলতে পারেনি। এই লোকটিকে দেখার সাথে সাথে এবং তার অভিব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছে, তাকে গ্রেফতার করা উচিত। কারণ, আমি তার মধ্যে মহানুভবতার গুণাবলী খুঁজে পেয়েছি। তার মধ্যে আছে রাজত্ব ও পরাক্রমের চিহ্ন।

অপরদিকে শেরশাহ নিজেকে তৈরী করছেন ভবিষ্যতের জন্য। মুগলদের তিনি পরাজিত করার পরিকল্পনা সাজিয়ে নিয়েছেন তখনই। এক বন্ধুর সাথে কথোপকথনের সময় শের শাহ মন্তব্য করেছিলেন: যদি ভাগ্য আমার পক্ষে থাকে, তবে আমি খুব শিগগিরই মুগলদের হিন্দুস্তান থেকে বিতাড়িত করব। কারণ মুগলরা দলবদ্ধ যুদ্ধে বা একক যুদ্ধে আফগানদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। কিন্তু আফগানরা তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে দিল্লী সাম্রাজ্যকে তাদের হাত থেকে পিছলে যেতে দিয়েছে। আমি মুগলদের মধ্যে ছিলাম, তাদের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানি। আমি ভালোভাবে জানি যে, তাদের কোন আদেশ বা শৃঙ্খলা নেই এবং তাদের রাজারা জন্মগত অহংকারে অন্ধ, ব্যক্তিগতভাবে তারা সরকারকে তত্ত্বাবধান করেন না এবং রাজ্যের সমস্ত বিষয় ও ব্যবসা অন্যের হাতে ছেড়ে দেন। তাদের উচ্চপদস্থ ও মন্ত্রীদের কথা ও কাজের প্রতি তারা নিখুঁত আস্থা রাখে। কিন্তু উচ্চপদস্থ ও মন্ত্রীরা সৈনিক বা কৃষক বা বিদ্রোহী জমিদারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।

শেরশাহের চোখের দিকে তাকিয়ে বাবর বুঝতে পারেন তিনি হুমকি। শের শাহও বুঝতে পারেন বাবর তাকে পাকড়াও করবেন। তিনি দ্রুত রাজধানী ত্যাগ করেন। চলে যান বিহারে।
বিহারের গভর্নরের অধীনে চাকরি নেন। ১৫২৮ সালে বিহারের গভর্নরের মৃত্যুর পর তিনি বিহারে একটি উচ্চ পদ লাভ করেন এবং ১৫৩০ সালে রাজ্যের ডি-ফ্যাক্টো শাসকে পরিণত হন। তিনি এই অঞ্চলের অভিজাতদের উচ্চাকাঙ্খার মোকাবেলা করেন এবং বাংলার সালতানাতের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।

বিচ্ছিন্ন আফগানদের একত্রিত করে তিনি বাংলা ও বিহারে প্রতিষ্ঠিত করেন। শের শাহ শক্তিবৃদ্ধি করেন ক্রমাগত, যা চারপাশকে আচ্ছন্ন করতো আপন প্রভাবে। এতে শঙ্কিত না হয়ে পারেননি বিহারের আমিরগণ। তারা সম্মিলিতভাবে বাংলার সুলতান মাহমুদকে শের শাহের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৫৩৪ সালে তাঁদের বাহিনীকে পরাজিত করেন শের শাহ। ফলে বিহার অঞ্চল পূর্ণরূপে তাঁর হস্তগত হয়। ১৫৩৭ সালে শের শাহ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করে গৌড় অধিকার করেন। ১৫৩৮ সালে মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে মুগল সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৭ সালে চুনার দুর্গ আক্রমণ করে দখল করে নেন শের শাহ ভিন্ন পথে আক্রমণ করে বারাণসী ও জৌনপুর অধিকার করেন এবং হুমায়ুন ফিরে যান আগ্রায়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন পুনরায় আক্রমণ করলে শের শাহ হুমায়ুনকে পরাজিত করেন। ফলে শেরশাহ দিল্লি আগ্রা জৌনপুর, বারাণসী, বিহার ও বাংলা সম্রাট হন। এভাবেই তিনি শুর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। শের শাহের শাসন ভূমি ছিল বিশাল বাংলা, বিহার, নেপাল ও পাকিস্তানের কিছু অংশ। তার রাজধানী ছিল সাসারামে, যা বর্তমানে ভারতের বিহারে অবস্থিত।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড