ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শের শাহ শুরি : প্রজ্ঞার প্রতাপ-৬

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

যথাযথভাবে ভূমি জরিপ নিশ্চিত করেন শের শাহ। ভূমি জরিপ করে খাজনা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় কর্মকর্তাদের। আবার প্রজারা চাইলে সরাসরি রাজকোষেও খাজনা জমা দিতে পারত। ভূমিকে ফসল দানের বিচারে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ১. উত্তম, ২. মধ্যম, ৩. অনুত্তম। প্রথম শ্রেণীর ভূমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ স্থির করা হয় ১৮ মণ, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১২ মণ, তৃতীয় শ্রেণীতে ৮ মণ ৫ সের। ভূমির ধরন অনুসারে ফসলের এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ খাজনা স্থির করা হয়। অনুত্তম জমির মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিলো সেচব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর নানা প্রয়াস। কৃষিকর পরিশোধ করতে হতো নগদ অর্থে অথবা ফসলের দ্বারা। এর ফলে কৃষকরা বিশেষ সুবিধা লাভ করে। শের শাহ সর্বপ্রথম চালু করেন ‘কবুলিয়াত’ (চুক্তি দলিল) ও ‘পাট্টা’ (ভূমি স্বত্ত্বের দলিল) প্রথা। কবুলিয়তে কৃষকরা জমির উপর নিজেদের দায়িত্ব ও অধিকার বর্ণনা করে সরকারকে অঙ্গীকার প্রদান করত। আর পাট্টা হলো কৃষকদের স্বত্ত স্বীকার করে সরকারের দেওয়া স্বীকৃতিপত্র।

এর ফলে জমির উপর প্রজার (রায়তের) মালিকানা সুনিশ্চিত হয়। এর পাশাপাশি কৃষিতে উৎসাহ দেবার জন্য শের শাহ বিশেষ কৃষিঋণ চালু করেন। ফসলের ক্ষতি, অনাবৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে খাজনা মওকুফও করতেন শের শাহ। শের শাহের ঘোষণা ‘আমি জানি, আমার কৃষক বন্ধুরা কৃষির কেন্দ্রবিন্দু। যদি তারা সুখে থাকে কৃষিকাজও ভালো হবে। যদি তাদের অবস্থা খারাপ হয়, কৃষির উৎপাদনও শোচনীয় হয়ে পড়বে।’ তাই যখন তার সেনাদল কোনো কৃষিক্ষেত্র বরাবর টহল দিত তখন যাতে কোনোভাবেই জমির ফসলের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে তিনি সর্বদা কড়া নজর দিতেন। সেনাবাহিনী কোনোভাবেই কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি করতে পারবে না। এমনটি ঘটলে কঠোর শাস্তি ছিলো অবধারিত।

উপমহাদেশের সর্বত্র চালু ছিলো বিভিন্ন ধরনের শুল্ক। শের শাহ তা বাতিল করেন ও কমিয়ে আনেন। কেবল সীমান্তে ও বিক্রয়স্থলে শুল্ক জারি করেন তিনি। ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্যে শের শাহ আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আব্বাস শিরওয়ানী লিখেছেন, ‘যখন বাংলা থেকে পণ্যদ্রব্য আসত, তখন গরহির (সিক্রিগলি) কাছে তা থেকে (প্রথম) শুল্ক আদায় করা হতো।’ কিন্তু সেগুলির আলাদা বিক্রয় শুল্ক নেওয়া হতো না। যখন (পণ্যদ্রব্য) খুরাসানের দিক থেকে আসত, তখন প্রথম শুল্ক আদায় করা হতো রাজ্যের সীমান্তে, আর দ্বিতীয় বারের শুল্কটা আদায় করা হতো পণ্যদ্রব্য বিক্রির সময়। স্থলপথে হোক বা জলপথে, গ্রামে হোক বা শহরে, (সেসব পণ্যের ওপর) কেউ আর অন্য কোনো শুল্ক আদায়ের সাহস দেখাতে পারত না।

মধ্যযুগে উপমহাদেশে কোনো একটি নির্দিষ্ট মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। নানা অঞ্চলে নানা ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিলো। শের শাহ মুদ্রা ব্যবস্থার মধ্যে সমতা আনেন। তিনি সোনা, রূপা ও তামার মুদ্রা চালু করেন। বিভিন্ন মুদ্রায় কোন ধাতু কতটা পরিমাণে ব্যবহার হবে তা তিনি স্থির করে দেন। আগেকার মিশ্র ধাতুর কম মূল্যবানের মুদ্রার পরিবর্তে একক ও মানসম্মত সিকি, আধুলি, দুয়ানি ইত্যাদি ছিলো শের শাহের মুদ্রার বৈশিষ্ট। মুদ্রাগুলোকে অবশ্যই উপাদানে নির্ভেজাল হতে হতো, ওজনে নির্ভেজাল হতে হতো ও গঠনরীতিতে তা ছিলো মনোরম।

তামার মুদ্রাগুলি ‘দাম’ নামে পরিচিত ছিল। আর রূপার মুদ্রাগুলির নাম ছিলো ‘রূপয়া’। শের শাহ ভারতীয় টাকার (রুপিয়া-রুপি) প্রথম প্রচলনকারী বলে স্বীকৃত। তিনি ওজন ও পরিমাপের একটি স্থায়ী ও নির্দিষ্ট একক ধার্য করার উদ্যোগ নেন।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-৬
আরও

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ