ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

আকবর দ্য গ্রেট-৪

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম


খান জামান নামে পরিচিত আলী কুলী খান মাহরাম ছিলেন আকবরের জন্য বড় হুমকি। যিনি ছিলেন বড় যোদ্ধা এবং জৈনপুরের শাসক। শুরুতে তাকে বারবার ক্ষমা করলেও শেষে নিষ্ঠুরভাবে তাকে ধ্বংস করেন আকবর। কাবুলের শাসনকর্তা আকবরের সৎ ভাই মির্জা মুহম্মদ হাকিমকে উৎখাত করে কাবুল দখল করে নেন বাদাখশানের সুলায়মান মির্জা। মির্জা হাকিম তার হাতে থাকা অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে পাঞ্জাবে এসে ঘাঁটি গাড়েন। আকবরের সহযোগিতার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজধানী থেকে সহায়তা না পেয়ে নিজেই লাহোর অবরোধ করে বিদ্রোহের পতাকা উড়ান। আকবর একে দমন করলেও আভ্যন্তরীণ সঙ্কটের আশঙ্কা পিছু ছাড়ছিলো না।

এ পরিস্থিতিতে ভারতের হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাতে বিদ্রোহ না জাগে, আকবর সেই প্রশ্নে মনোযোগী হলেন। স্থায়ী শাসনের জন্য তাদের আস্থা জরুরি ছিলো। তাদের মধ্যে রাজপুতদের বীরত্ব ও প্রতিপত্তি প্রবল। ভারতে আধিপত্যের প্রয়োজনে রাজপুতদের সহযোগিতা দরকার। আকবর তার প্রশাসনে রাজপুত কর্মকর্তাদের উচ্চাসন দেন, রাজপুতদের উচ্চ মনসব প্রদান করেন এবং অনেক রাজপুত সর্দারকে সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাজা ভগবান দাস, রাজা মান সিং এবং রাজা টোডরমলের মতো রাজপুতদের মুগল দরবারে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়। আকবর স্থির করেন রাজপুতদের সাথে আত্মীয়তা স্থাপন করবেন। রাজস্থানের রাজপুত রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা হীরাবাইকে বিয়ে করেন তিনি। ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ে সম্পন্ন হয়। হীরা কুমারী বা হীরাবাই যোধাবাঈ নামেও পরিচিত ছিলেন। মুগল রাজদরবারে তিনি মরিয়ম উজ জামানী নাম ধারণ করেন। শাহজাদা সেলিম অর্থাৎ সম্রাট জাহাঙ্গীর ছাড়াও তিনি ছিলেন আকবরের ৫ পুত্র ও ৬ মেয়ের জননী। ক্রমেই আকবরের রাজপুত ও হিন্দু নীতি বিশেষ সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়।

মুগল প্রশাসনের সকল উচ্চপদগুলি তিনি হিন্দুদের জন্য উন্মুক্ত করেন। হিন্দুদের জন্য ব্রাহ্মণ বিচারক নিযুক্ত করেন। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি অনুবাদ বিভাগ স্থাপন করেন। সুলহেকুল্লি বা সামগ্রিক মৈত্রীর নীতি প্রবর্তন করেন। হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থাবলী ফারসি ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করেন।

সেকালে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস বানানোর চল ছিলো। ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দে আইন করে হিন্দু যুদ্ধবন্দীদের ক্রীতদাস বানানোর আইন বন্ধ করেন আকবর। ১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুদের উপর থেকে তীর্থকর তুলে নেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর হিন্দুদের ওপর থেকে জিজিয়া কর প্রত্যাহার করেন। কিন্তু যেসকল হিন্দু রাজা সুলহেকুল্লি বা সামগ্রিক মৈত্রীকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি হননি, তাদের বিরুদ্ধে আকবর সংঘর্ষের নীতি অনুসরণ করেন। তিনি গুজরাট বিজয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এ পথে চিতোর ছিল প্রধান অন্তরায়। দিল্লী ও আমেদাবাদের মধ্যে যোগযোগ ব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্যও চিতোর দখল প্রয়োজন ছিল। তাই আকবর ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে চিতোর আক্রমণ করেন। ১৫৬৮ সালে চিতোর মুগল বাহিনী কর্তৃক অধিকৃত হয়। ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আকবর রণথম্ভোর দখল করেন। এরপর কালিঞ্জরের বিরুদ্ধে মুগল অভিযান প্রেরিত হয়।
১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের যুদ্ধে রাণা প্রতাপকে পরাজিত করে আকবর মেবার অধিকার করেন।

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
আরও

আরও পড়ুন

রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য

রাজপথে পরিকল্পিত নৈরাজ্য

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩

বেগম খালেদা জিয়াকে পেয়ে সেনাকুঞ্জ গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা

বেগম খালেদা জিয়াকে পেয়ে সেনাকুঞ্জ গর্বিত : প্রধান উপদেষ্টা

এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া : যার হাসিতে হেসে উঠেছে বাংলাদেশ

এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া : যার হাসিতে হেসে উঠেছে বাংলাদেশ

নতুন জেনারেশনের চিন্তা-চেতনা সবাইকে বুঝতে হবে : এ এম এম বাহাউদ্দীন

নতুন জেনারেশনের চিন্তা-চেতনা সবাইকে বুঝতে হবে : এ এম এম বাহাউদ্দীন

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন

পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক : শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে

পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক : শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোয় গোটা জাতি আনন্দিত : মির্জা ফখরুল

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোয় গোটা জাতি আনন্দিত : মির্জা ফখরুল

পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মিলার :  বাংলাদেশে মানবাধিকার বহাল থাকবে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা

পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মিলার :  বাংলাদেশে মানবাধিকার বহাল থাকবে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ পেলেন টবি ক্যাডম্যান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ পেলেন টবি ক্যাডম্যান

হাইকোর্টের অভিমত :  কুরআন অবমাননা ও মহানবীকে কট‚ক্তির শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করতে পারে সংসদ

হাইকোর্টের অভিমত :  কুরআন অবমাননা ও মহানবীকে কট‚ক্তির শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করতে পারে সংসদ

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ আছে : সিপিডি

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ আছে : সিপিডি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল : খুনি হাসিনার পক্ষে লড়বেন জেড আই খান পান্না

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল : খুনি হাসিনার পক্ষে লড়বেন জেড আই খান পান্না

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যারা অপরাধ করেছেন তাদের শাস্তির সুপারিশ : সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যারা অপরাধ করেছেন তাদের শাস্তির সুপারিশ : সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন : ট্রাম্প ফেরায় বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন : ট্রাম্প ফেরায় বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা

এডিস মশার ভয়াবহ রূপ : একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৯ জনের মৃত্যু

এডিস মশার ভয়াবহ রূপ : একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৯ জনের মৃত্যু

ব্যবসায়ীরা হতাশ : বাংলাদেশিদের ভিসা না দিয়ে উল্টো বিপাকে ভারত!

ব্যবসায়ীরা হতাশ : বাংলাদেশিদের ভিসা না দিয়ে উল্টো বিপাকে ভারত!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ -এ পদার্পণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ -এ পদার্পণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প, ব্যয় ২৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা

ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্প, ব্যয় ২৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা