ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আকবর দ্য গ্রেট-৯

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ইন্দ্র, বিষ্ণু, মহাদেবের প্রতি আকবর বেশ শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। হিন্দু ধর্ম বিষয়ে জানার সময় তাদের বিভিন্ন উৎসবের সাথেও আকবরের পরিচিতি ঘটে। রাখীবন্ধন, বসন্তোৎসব, দীপাবলী, দশহারার মতো উৎসবগুলোতে আকবর অংশ নিতেন। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে হিন্দু পÐিতদের আমন্ত্রণ জানাতেন। এমনকি আকবরের আগ্রহে যোগ, বলিষ্ঠ, রামায়ণ, মহাভারত, অথর্ব বেদ প্রভৃতি হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলো অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়। তখনকার হিন্দু পÐিতদের অনেকেই আকবরকে হিন্দু ধর্মের পরিত্রাতা বলে আখ্যায়িত করতেন। এমনকি পরম পূজনীয় হিসেবে বিশ্বাস করতেন অনেকেই। তারা ঘোষণা করেন, আকবর হচ্ছেন রাম-কৃষ্ণের অবতার। হিন্দু ধর্ম ও সমাজের সংস্কারে আকবরের ভ‚মিকা ও প্রভাব ছিলো সুদূরপ্রসারী।

বর্ণবাদ হিন্দুসমাজকে গিলে ফেলছিলো বহু শতাব্দী ধরে। তিনি এর বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন। উচ্চবর্ণ ও নি¤œবর্ণের মধ্যে সীমাহীন বৈষম্যকে তিনি ঘৃণা করতেন। অগ্রসর হিন্দুদের এ বিষয়ে সচেতন করেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মের স্বাধীনতায় তিনি বিশ্বাস করতেন। আইন করে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেননি তিনি। তিনি সতীদাহ প্রথাকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে সদ্যবিধবা স্ত্রীকে দাহ করা থেকে বিরত রাখতে আকবর শাস্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। বেঁচে যাওয়া বিধবা হিন্দু মহিলাদের পুনরায় বিবাহের জন্য আকবর সবসময় উৎসাহ দিতেন।

মুঘল শাসকদের মধ্যে একমাত্র আকবরের প্রশ্নে হিন্দুত্ববাদের অবস্থান কিছুটা উদার। যদিও তারা সাধারণভাবে তাকেও প্রতিপক্ষ মনে করে, তবুও বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে স্মরণ করার নজিরও কম নয়। ‘ইন্ডিয়া: মাদার অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক গ্রন্থে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, ধর্ম, সাধু-সন্ত, বিভিন্ন মহাপুরুষ ও শাসকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ এ মোদি সরকারের প্রকাশনা ‘ইন্ডিয়া: মাদার অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক গ্রন্থে ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, ধর্ম, সাধু-সন্ত, বিভিন্ন মহাপুরুষ ও শাসকদের বিবরণে সম্মানের সাথে আকবরকে উল্লেখ করা হয়। এতে মুঘল সম্রাট আকবরের পরিচয়ে লেখা হয়েছে, ‘সুশাসন হল সেটাই, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে সবার কল্যাণ হবে। তৃতীয় মুঘল পাদিশাহ আকবর সেই গণতন্ত্রেরই চর্চা করতেন।’

তার সম্বন্ধে স্মরণিকা গ্রন্থে আরও লেখা হয়েছে, ‘তিনি সুলহ-এ-কুল, অর্থাৎ সার্বজনিক শান্তির নীতি নিয়ে চলতেন। এই নীতি ছিল ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে।’

লেখা হয়েছে, আকবর এমন এক সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন, যেখানে সৌহার্দ্য বিরাজ করবে, সেজন্যই তিনি নতুন ধর্ম ‘দিন-ই-ইলাহি’র প্রচলন করেছিলেন। বস্তুত সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহি ও ধর্মনীতি হিন্দু সমাজ, সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গির অগ্রগতি নিশ্চিত করেছিলো। এর প্রতিফলন ঘটেছে সেই প্রকাশনার মন্তব্যেও। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আকবরের গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ছিল ব্যতিক্রমী এবং সময়ে থেকে অনেক এগিয়ে থাকা।’ রামায়ণে উল্লিখিত রাম, মগধের অজাতশত্রæ প্রমুখের ধারাবাহিকতায় আকবরকে সম্মান জানানো বস্তুত হিন্দু সংস্কৃতি ও সভ্যতায় তার বিপুল অবদানেরই জানান দিয়ে যায়।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-৬
আরও

আরও পড়ুন

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : চাঁদপুরে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : চাঁদপুরে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

শাহজাহান ওমরকে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ

শাহজাহান ওমরকে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ

জীবনে উত্তম কর্ম, জ্ঞান ও উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হলে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অবলম্বন আবশ্যক

জীবনে উত্তম কর্ম, জ্ঞান ও উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হলে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অবলম্বন আবশ্যক

নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় জেলা আ.লীগ সভাপতি কারাগারে

নড়াইলে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় জেলা আ.লীগ সভাপতি কারাগারে

নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের আনাদোলু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর

নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের আনাদোলু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর

শিক্ষার্থীদের মতের ভিত্তিতেই ছাত্রদলের রাজনীতি চলবে :  নাছির

শিক্ষার্থীদের মতের ভিত্তিতেই ছাত্রদলের রাজনীতি চলবে : নাছির

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধার, চলাচল স্বাভাবিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইনচ্যুত ট্রেন উদ্ধার, চলাচল স্বাভাবিক

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ৪৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ৪৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত

খরচ চালাতে লকার রুম, দরজা বিক্রি করছে রিয়াল মাদ্রিদ

খরচ চালাতে লকার রুম, দরজা বিক্রি করছে রিয়াল মাদ্রিদ

যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

যুক্তরাষ্ট্রে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

ক্ষেতের মধ্যে রেললাইন, জীবিকা হারানোর মুখে কাশ্মীরের আপেল চাষিরা

ক্ষেতের মধ্যে রেললাইন, জীবিকা হারানোর মুখে কাশ্মীরের আপেল চাষিরা

সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

মার্কিনের পর এবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা ইউক্রেনের

মার্কিনের পর এবার ব্রিটিশ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা ইউক্রেনের