ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহ. : দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন মুজাদ্দিদ সাহেবের সমসাময়িক। তাঁর প্রথম যুগে আহমদ সিরহিন্দি বন্দি ছিলেন। তার সাধনার পূর্ণ বিকাশ ঘটে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী ব্যাপকভিত্তিক অবদান রাখেন তাসাউফে। সুফিবাদে ঘটেছিলো অনেক বিকৃতি। সেখানে ছিলো বহু অপপ্রথা, যা শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। সুফিবাদ শরিয়তের সীমা অতিক্রম করেছিল এবং বিকৃতি চরম পর্যায়ে পড়েছিল। সিরহিন্দি তাই সুফিবাদের সংস্কারে মনোযোগ দিলেন। সুফিবাদকে তিনি বহিরাগত উপাদান থেকে মুক্ত করলেন। প্রমাণ করলেন যে, সুফিবাদের ভিত্তি হচ্ছে শরীয়ত। যা শরিয়ত সম্মত তা সুফিবাদে বৈধ এবং যা শরিয়তে নেই, তা সুফিবাদেও বৈধ নয়। সুফিবাদে যে সকল নতুন প্রবণতা এসেছে, তিনি এর প্রতিটি দিক ও দিগন্তে কাজ করেন। ইসলামী আকীদা ও শরীয়তের বিধি-বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোর উচ্ছেদ ছিলো তাঁর অগ্রাধিকার। তিনি বহু পৌরাণিক বিশ্বাস ও কাহিনীর জঞ্জাল থেকে সাফ করেন সুফিপন্থাকে।
শায়খ আহমদ সিরহিন্দের অবদানের আরেকটা বড় ক্ষেত্র ছিলো আহলে সুন্নাতের আকিদা রক্ষা। সম্রাট হুমায়ুনের সময় থেকে এই আকিদা গুরুতর সঙ্কটে পড়ে। শেরশাহ সুরির কাছে পরাজয়ের পর হুমায়ুনের শাসন পুনরুদ্ধারে ইরানের সাফাভি শাসকদের অবদান ছিলো। এর সুবিধা নিয়ে শিয়া চিন্তাধারা ভারতে বিস্তার লাভ করে। শিয়া চিন্তাধারা যখন প্রচণ্ড আগ্রাসি রূপ নেয়, তখন আহমদ সিরহিন্দ এর পাল্টা জবাব দেন এবং আহলে সুন্নাহর আকিদাকে সবলে উপস্থাপন করেন। তিনি খেলাফত ব্যবস্থার ন্যায্যতা, খুলাফায়ে রাশেদার মহিমা ও সত্যতা, সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও শিক্ষাকে বিপুলভাবে তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে সুন্নী মুসলমানদের বিশ্বাসের উপর যে দোদুল্যমানতা চেপে বসেছিলো, তার মোকাবেলা হয়।

দ্বীনে ইলাহীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শাইখ আহমদ সিরহিন্দের প্রধান সাধনার প্রধান খাত। দ্বীনে ইলাহী দাবি করে, গত হাজার বছরে ধর্মের ব্যাখ্যা এবং ধর্মের জ্ঞান কাঠামো পুরোনো হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন ধর্মের নতুন ব্যাখ্যা এবং নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামো। দ্বীনে ইলাহীর আলেমরা বলেন, বাদশাহ যাবতীয় কর্তৃত্বের মালিক এবং ধর্মের নবায়নের জন্য সকল মুজতাহিদের মুজতাহিদ। ফলে তিনি চিন্তা ও জ্ঞানের একটি নতুন কাঠামো তৈরি করলেন। নতুন ধর্ম গঠনের প্রকল্প এগিয়ে চললো। কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পাশাপাশি ফকীহদের মধ্যে যে কোনো মতভেদের সমাধান করবেন স্বয়ং সম্রাট। তিনি যা বলবেন তা হবে দ্বীন এবং যা ঘোষণা করবেন তা হবে শরীয়ত।

ভারতে বসবাসকারী সমস্ত ধর্মকে স্থান দেওয়ার চেষ্টা হয় দ্বীনে এলাহীতে। শিখরা হয়তো এই যুগে পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। দ্বীনে এলাহীতে হিন্দু, খ্রিস্টান, পার্সি, অগ্নিপূজক এবং ইসলামের মধ্যে সমন্বয় বিধান করা হয়। সূর্যের উপাসনা এবং আল্লাহর উপাসনা ছিলো এই ধর্মের বিধান। হালাল ও হারামের আদেশ বদলে দেওয়া হয়। শূকরের মাংস এবং মদকে জায়েজ ঘোষণা করা হয়। ব্যভিচারকেও কিছু শর্তে জায়েজ করা হয়। দ্বিতীয় বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আরো বহু সর্বনাশের দরোজা খুলে দেওয়া হয়।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড