কর্তৃত্ববাদের সদর অন্দর
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ এএম
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব পলিটিক্সে অথোরিটারিয়ানিজম বা কর্তৃত্ববাদের সংজ্ঞার প্রথম বাক্যটি হচ্ছে, A style of government in which the rulers demand unquestioning obedience from the rules. . কর্তৃত্ববাদের স্বরূপ অন্বেষণের জন্য এই বাক্যটিই যথেষ্ট। পৃথিবীর সর্বত্র এখানে অথবা সেখানে শাসকগোষ্ঠী দাবি করে প্রশ্নহীন আনুগত্য। কর্তৃত্ববাদ নাগরিকদের বিশ^াস এবং আচরণকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ফ্রেডারিক দ্য গ্রেট বলতেন, ‘আমার প্রজা সাধারণের সাথে এই চুক্তি হয়েছে যে, প্রজা সাধারণ যা বলতে চায় তা বলতে পারবে। অপরদিকে আমি যা করতে চাই তাই করতে পারবো।’ কর্তৃত্ববাদ সাধারণ অর্থে শাসক ও দলের সবকিছুকে জায়েজ করার একটি প্রক্রিয়া মাত্র। এখানে সরকার হবে অসহিষ্ণু। কোনরকম যৌক্তিকতা ছাড়াই যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। আসলে কর্তৃত্ববাদ স্বৈরাচারের নামান্তর মাত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কর্তৃত্ববাদ শব্দের সাথে সাথে আর একটি শব্দ স্নায়ুযুদ্ধের সময় সংযোজিত হয়, তা হলো সর্বাত্মকবাদ। কর্তৃত্ববাদ দ্বারা সামরিকতন্ত্র, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ইত্যাকার অভিধাকে চিহ্নিত করা হয়। সর্বাত্মকবাদ দ্বারা পশ্চিমা বিশ^ তখনকার দিনের সমাজতান্ত্রিক তথা কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করতো। কর্তৃত্ববাদ ব্যক্তি জীবনের জন্য কিছু না কিছু ছাড় দেয়। অপরদিকে সর্বাত্মক ব্যবস্থায় সর্বাত্মকভাবেই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেখানে নাগরিক অধিকার বা স্বাধীনতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। অবশ্য কর্তৃত্ববাদের নানা রং ও ঢং রয়েছে। অতীতেও কর্তৃত্ববাদের নামে রাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যতন্ত্র ছিল। এরিস্টেটল ও প্লেটো এইসব রাজতন্ত্র ও সম্রাজ্যতন্ত্রের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে কর্তৃত্ববাদ বা সর্বাত্মকবাদের সাথে তাদের বক্তব্যের ভিন্নতা ছিল। ভিন্নতা এই যে, রাজা বা কর্তৃত্বপরায়ন শাসক প্রজা সাধারণের শুধুমাত্র কল্যাণ সাধনে তাদের আদেশ নিষেধ জারি করবেন, অন্যবিধভাবে নয়। সাম্প্রতিককালে কতিপয় রাষ্ট্রে ভালো ভালো কথা বলে নাগরিকদের তুষ্ট করে মন্দ মন্দ কাজ করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একে বলা হচ্ছে জনতুষ্টিবাদ বা পপুলিজম। এই পপুলিজম ও জনতুষ্টিবাদ কর্তৃত্বতন্ত্রের আধুনিক রূপ বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন। সোভিয়েত শাসনমুক্ত পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য ইউরোপেও এই জনতুষ্টিবাদ ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। যুক্তি হিসেবে সমাজতন্ত্র পরিত্যাগকৃত রাষ্ট্রসমূহে গণতন্ত্রের অনুশীলন কঠিন হতে পারে। কিন্তু মধ্য ইউরোপের দেশগুলো যেখানে গণতন্ত্র শত শত বছর ধরে অনুশীলন হয়ে আসছে, সেখানে গণতন্ত্রের বদলে একনায়কতন্ত্র বা জনতুষ্টিবাদের আবির্ভাব বিস্ময়কর। তাও আবার খ্রিস্ট মৌলবাদ আদৃত জনতুষ্টিবাদ। কর্তৃত্ববাদের তথা জনতুষ্টিবাদের পক্ষেও যুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয় এটি গতিশীল, সিদ্ধান্তে ত্বরিত এবং উন্নয়নে অগ্রণী। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, সকল ধরনের কর্তৃত্ববাদ গণতন্ত্রের আদলে তাদের বৈধতা দাবি করেন। এরা প্রচার করে যে, তাদের গণতন্ত্রই প্রকৃত গণতন্ত্র। যেমন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান বলতেন ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’। তার দেওয়া গণতন্ত্র হচ্ছে আদি, আসল এবং মৌলিক। এরশাদ সাহেব নয়া গণতন্ত্রের কথা বলতেন। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের গণতন্ত্রের কথা বলছে। আসলে একজনের শাসন বা একনায়কতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মোড়ক দেওয়া হচ্ছে।
ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদের বিকাশ ও বিস্তৃতির কারণ অনুসন্ধান করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের আদলে শতবর্ষব্যাপী যে অনুশীলন হয়ে আসছে তাতে সংশ্লিষ্ট জনগণ হয়তো ত্যক্ত, বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট। যখনই কোন ‘ডেমাগক’ বা বক্তৃতাবাগীশ নেতানেত্রী মানুষের অসন্তুষ্টি, রাগ, দুঃখ, কষ্ট ও ক্ষোভকে সম্বল করে কর্মসূচি দেয়, তখন জনগণ তুষ্ট হয়ে তাদের ক্ষমতায় পাঠায়। এই জনতুষ্টিবাদ বা কর্তৃত্ববাদের আরেকটি কারণ হতে পারে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও সাম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজন। ভারতে মোদিকর্তৃত্ববাদের প্রধান সম্বল হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, মুসলিম বিদ্বেষ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি কর্তৃত্ববাদের পতন হয়েছে। নেপালে সাম্যবাদভিত্তিক কর্তৃত্ববাদের চর্চা দেখা যায়। পাকিস্তানে সামরিকতন্ত্রনির্ভর কর্তৃত্ববাদের সাম্প্রতিক প্রতিষ্ঠা একটি উদাহরণ। মায়ানমারে সামরিক কর্তৃত্ববাদের পরিণতিতে দেশটি এখন গৃহযুদ্ধ আক্রান্ত। বাংলাদেশে ১/১১ পর থেকে কর্তৃত্ববাদের বৈশিষ্ট্যাবলী ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো দেশে ইমিগ্রান্ট প্রশ্নে কর্তৃত্ববাদের সূচনা শুরু হয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে ক্রমাগত অভিবাসীদের চাপ সেখানে মধ্যপন্থী বা মানবিকতাপন্থী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জনমত লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো সমাজতত্ত্ববিদ কর্তৃত্ববাদকে ফ্যাসিবাদের সমার্থক মনে করেন। উইলিয়াম রেইখ তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত ‘‘The Mass Psychology of Fascism’ গ্রন্থে কর্তৃত্ববাদের উত্থানের পেছনে আদর্শগত বা তত্ত্বগত অবস্থানকে কারণ মনে করেন। যেমন কিম এল সুঙের উত্তর কোরিয়া, ইরানের ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি। এরিক ফ্রম এর মতো মনস্তত্ত্ববিদ কর্তৃত্ববাদের উত্থানের জন্য গত দুই দশকে উত্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিপ্লবকে দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রকারান্তরে জনতুষ্টিবাদ তথা কর্তৃত্ববাদের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম, যার আরম্ভ হয়েছিল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও সহজ সরল ও প্রাঞ্জল করবার জন্য তা শাসকগোষ্ঠী বিরুদ্ধবাদীদের খোঁজখবর, তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই উদ্ভাবনকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নাগরিকদের অধিকার হরণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এগুলো কর্তৃত্ববাদী শাসনকে স্থায়ীত্ব এবং দীর্ঘায়িত করার জন্য কাজ করছে।
কতিপয় গবেষকের মতে, বিগত বৈশি^ক মহামারী তথা কোভিড-১৯ কর্তৃত্ববাদের বিকাশ, স্থায়িত্ব এবং সাংবিধানিক অপপ্রয়োগের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতে এই বৈশি^ক মহামারীকালে কীভাবে সাংবিধানিক ধারাকে স্থগিত রেখে বা বৈশি^ক যোগাযোগকে রেখে কীভাবে মোদি সরকার কর্তৃত্ববাদের সদ্ব্যবহার করেছে তার বর্ণনা পাওয়া যায় কে ভার্দোয়াজ লিখিত এক গবেষণা নিবন্ধে। ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘Digital Surveillance Systems to Combat COVID-19 May Do More Harm Than Good’’ শীর্ষক তাঁর নিবন্ধে এসব বর্ণনা রয়েছে। উন্নত গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহেও এই প্রবণতা দেখা গেছে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশে^র অনেক দেশে লকডাউনের নামে রাজনৈতিক সমাবেশ ও আন্দোলন সংগ্রামকে প্রতিহত করা হয়েছে। এভাবে তারা দল ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছে। সহিংসতা সৃষ্টি করেছে এবং সীমাহীন ক্ষমতার সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। এই একক কর্তৃত্ববাদের কবলে নিপতিত হয়ে অনেক দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন শ্রীলঙ্কা। ২০২১ সালে ফ্রিডম হাউজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশি^ক গণতন্ত্রের দ্রুত অবনতি ঘটেছে। তারা দেখান যে, বিশে^র জনসংখ্যা শুধুমাত্র ৫ ভাগের ১ ভাগ গণতন্ত্রের সুবিধাদি ভোগ করছে। বৈশি^ক গণতন্ত্রের প্রবক্তা ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা অবশ্য বলেছিলেন যে, একবিংশ শতাব্দি হবে গণতন্ত্রের বিশ^। কিন্তু ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদ তার জন্য নিশ্চয় এক হতাশার কারণ ঘটিয়েছে। একজন গবেষক ভবিষ্যৎ কর্তৃত্ববাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যদি কর্তৃত্ববাদ এভাবে অবাধ শাসনের সুযোগ পায় তাহলে তা জনগণের স্বাধীনতাকে আরও সংকুচিত করবে। এটি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করবে। এমনকি বিচার ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করবে। একই সাথে জনগণের উপর তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে। জনগণের নিষ্পৃহ দৃষ্টিভঙ্গি পরোক্ষভাবে কর্তৃত্ববাদকে দীর্ঘায়িত করবে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো, যারা গণতন্ত্রে বিশ^াস করে তাদের উচিৎ কর্তৃত্ববাদের অবসানে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। জনগণের ঐক্য এ ধরনের গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য অনিবার্য। সুতরাং গণসম্পৃক্ততার মাধ্যমে তথা গণ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদের অবসান ঘটাতে হবে। আশার কথা এই যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্রোহ এবং আন্দোলন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পর্যালোচনা ও গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ১/১১ ঘটনাবলীর মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদের সূচনা ঘটেছে। এটা আর গোপন কথা নয় যে, ঐ সরকারটি ছিল সামরিক শাসক প্রভাবিত। এমনিতেই কোনো সময় কোনো কালেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল না। সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে জাতির পথচলা। একটি ভালো সংবিধান দিয়ে তার যাত্রা শুরু। কিন্তু র্দর্ভাগ্যের বিষয়, যারা গণতন্ত্রের প্রবক্তা তাদের হাতেই গণতন্ত্রের অবসান ঘটে। ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা আরোপের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ নয় সর্বাত্ম‘কবাদের সূচনা ঘটে। কর্তৃত্ববাদের সংজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যশীল স্লোগানও উত্থিত হয়। এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। ২০২০ সালে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদের উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। শাফী মোহাম্মদ মোস্তফা এবং ডিবি সুবেদি দ্বৈতভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণাটির শিরোনাম ছিল Rise of Competitive Authoritarianism in Bangladesh ২০২০ সালের ১৩ জুলাই ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয় প্রেস থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা নিবন্ধে বলা হয় যে, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদের উৎস হচ্ছে রাজনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থা। বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদকে তারা বলতে চান তুলনামূলক কর্তৃত্ববাদ। তার মানে হচ্ছে যে, তারা প্রথম থেকে বিগত ৫০ বছরে সকল সরকারের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ করেছেন। সেখানে কর্তৃত্ববাদের মূল প্রবণতা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিঃশেষ করা। নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসন দেওয়া। কর্তৃত্ববাদকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রয়োজনে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল উপায় উপকরণকে দলীয়করণ। এই গবেষকদ্বয় বাংলাদেশের সব শাসককূলের সাথে ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদের সংযোগ আবিষ্কার করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম একটি শক্ত শক্তি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে ব্যবহারের বিপরীতে নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনাও কম নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিগত ১৭ বছরের শাসনে ধর্মীয় কর্তৃত্ববাদকে মোকাবেলা করার জন্য তারা ‘স্টিক এন্ড ক্যারট’ বা লাঠি ও মূলোর দ্বৈত ব্যবহার ঘটিয়েছে। তারা যেমন হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে নির্মম রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেষ করেছে, অপরদিকে হেফাজতের প্রধানকে বঙ্গ ভবনে ডেকে নিয়েছে। অবশেষে এ ধরনের ধর্মীয় নেতৃত্ব থেকে ‘কওমী জননী’ খেতাব নিতেও সরকার প্রধান দ্বিধা করেননি। এ বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা ভয়-ভীতি এবং লোভ দেখিয়ে কিছু ইসলামিক রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণে বাধ্য করে। অপরদিকে দু’একজনকে কথিত অনেক মূল্যের বিনিময়ে ক্রয় করে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদের সন্ধানে আরও একটি মূল্যবান গবেষণা সম্পন্ন করেন আকন্দ আকতার হোসেন। তাঁর নিবন্ধের শিরোনাম Anatomy of creeping authoritarianism in Bangladesh: a historical analysis of some events that shaped the present state of Bangladesh’s culture and politics. পঁষঃঁৎব ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপং. ২০২০ সালে ২২ মার্চ অনলাইনে এটি প্রকাশিত হয়। লেখক দাবি করেন যে, বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদের উৎস এর রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে নিহিত। ১৯৪০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা ও নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করে তিনি কর্তৃত্ববাদের লক্ষণসমূহ স্পষ্ট করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদের উৎসের সাথে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় সংকট বা ক্রাইসিস অব আইডেন্টিটিকে সম্পৃক্ত করেন। এই মৌলিক সংকটের তিনি তিনটি উপাদান নির্ণয় করেন। প্রথমত বাঙালি জাতিসত্ত্বা, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। দ্বিতীয়ত, মুসলিম জাতীয়তাবাদ। তৃতীয়ত, এই দুটোর সংমিশ্রণে জাতীয় পরিচয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়াস নিশ্চিতকরণ। মুসলিম বিশে^ ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের যে আন্দোলন চলছে বাংলাদেশ তার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে বলে গবেষক প্রমাণ দেখান। তিনি এভাবে উপসংহারে পৌঁছান যে ‘Since neither assertive secularism nor theocratic Islamism can flourish in Bangladesh, a competitive democratic political order that accommodates aspects of both secularism and Islamic ethical- moral codes should be a feasible model for the achievement of social, cultural and political stability that is so fundamental to the promotion of steady economic growth and social justice.’ লেখকের এই মন্তব্যের সাথে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একমত পোষণ করতে নাও করতে পারেন। রাজনৈতিক সফলতা ও ব্যর্থতার জন্য তাদের স্ব স্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখা যায় যে, শাসক আওয়ামী লীগ শাসন ব্যবস্থা তথা নির্বাচন ব্যবস্থার উপর এতোটা কর্তৃত্ববান হয়েছে যে ভিন্নমত ও ভিন্ন চিন্তা করাও একরকম অসম্ভব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিথ রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন ব্যবস্থার আলোকে বলতে চান যে, নির্বাচন ব্যবস্থা চিরকালের জন্য তিরোহিত হয়েছে। ক্রমশ নির্বাচন ব্যবস্থার অকার্যকারিতা কর্তৃত্ববাদের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে। এই অবস্থায় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ব্যতীত নির্বাচন তথা শাসকের সম্মতি অর্জন সম্ভব নয়।
এর অর্থ এই নয় যে, কর্তৃত্ববাদ চিরস্থায়ী হবে। এজন্য আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, সিভিল সোসাইটির সদস্যবৃন্দ, পেশাজীবী ব্যক্তিত্ববৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি নির্দেশনা বৈঠক বা সেমিনারে একত্রিত হওয়া প্রয়োজন। সেখানে কর্তৃত্ববাদের বিপরীত স্ট্রাটেজি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা সূত্রে বলা যায় যে, একটি গণআন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল এই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব। সম্ভাব্য গণআন্দোলনের জন্য গণঐক্য প্রয়োজন। গণঐক্য নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতিক নেতাদের সম্মিলিত ও সমন্বিত আন্দোলন প্রয়োজন। যত শীঘ্রই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জনগণের মুক্তি ততই তরান্বিত হবে।
লেখক: সাবেক ভিসি পটোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে মিছিল থেকে আ.লীগের ৬ নেতাকর্মী আটক
এক ইসরায়েলি সহ গাজায় নিহত ১৪ ফিলিস্তিনি
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল সারা দেশ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে দেয়া আইনজীবী সাইফুলের সেই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র
দেশে সম্প্রীতি নষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়ে চিন্ময় কাজ করছিল: উপদেষ্টা নাহিদ
চিন্ময় সম্পর্কে দিল্লির বক্তব্যকে বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে ঢাকা
দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ইবি
চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্সে লাখো আশেকে রাসূলের ঢল
১৪ মিনিটের ঝড়ে শেষ ধুঁকতে থাকা সিটির জয়ের ধারায় ফেরার স্বপ্ন
বায়ার্নের বিপক্ষে ফের হারল পিএসজি
লেভা-ওলমোয় বার্সার অনায়াস জয়
আইনজীবী হত্যায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান
ঢাবিতে আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা
মায়ামিতে মেসিদের নতুন কোচ মাশ্চেরানো
চিন্ময় সম্পর্কে দিল্লির বক্তব্যকে বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে ঢাকা
উত্তাল ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন
আদানির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিহার বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ