ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

৭ নভেম্বর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় গৌরবের প্রতীক

Daily Inqilab সালাহউদ্দিন আহমেদ

০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনটি দিনÑ ২৬ মার্চ ১৯৭১, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এবং ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ একসূত্রে গাঁথা। এ তিনটি দিবস স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংহতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। জনগণের মুক্তি, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে রক্ষা করার এ দিবসগুলো জাতির ইতিহাসে চির অম্লান ও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় সংকল্পে সিপাহী ও জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। এ ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ জাতীয় সংহতির শক্তি প্রদর্শন করে স্বাধীনতার চেতনা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় ধাবিত করে। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র অর্থাৎ গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়। রাষ্ট্র পরিণত হয় এক ব্যক্তি শাসিত রাজার রাজ্যে, যেখানে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার রুদ্ধ হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায় সিপাহী-জনতা স্বাধীনতার ঘোষক ও রণাঙ্গনের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সাহস ও নেতৃত্বের ওপর আস্থা স্থাপন করে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এক চক্রান্তের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে বন্দি করা হলে দেশ ও জাতি চরম সংকটে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর, দেশপ্রেমিক সিপাহী ও জনতা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করে। গণআকাক্সক্ষার প্রতিফলনে জিয়াউর রহমান এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসেন, জাতিকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথিকৃৎ হয়ে উঠেন। তিনি সকল মত ও পথের মানুষের সন্নিবেশ ঘটিয়ে গণমানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করেন।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন, তার মূল ভিত্তি হলো রাষ্ট্রের সকল নাগরিক, অর্থাৎ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে মানুষকে একত্রিত করে একক জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলা। এ আদর্শে জাতির জন্য একটি অভিন্ন ও গৌরবময় পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা গণতন্ত্রকামী জনগণের সহাবস্থানের পাথেয় হয়ে ওঠে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দর্শন নয়; বরং গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি সমন্বিত জাতীয় পরিচয়। এ আদর্শকে ধারণ করে আজও স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতিষ্ঠিত দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, দেশ ও জনগণের মুক্তির রাজনীতি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সকল গুরুত্বপূর্ণ সূচনা, অর্থনৈতিক দিক-নির্দেশনা এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই শুরু হয়, যার সুফল আজও জাতি হিসেবে আমরা পেয়ে যাচ্ছি। তিনি পোশাক শিল্প, জনশক্তি রপ্তানি, প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশ, শিল্প ও কৃষি বিপ্লব এবং উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বহুমাত্রিক নীতিমালা প্রণয়ন করেন। তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারার মাধ্যমে একদিকে যুবসমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়ন ও খাল খনন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন ঘটে।

স্বাধীনতার পর অনুসৃত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে, তার পরিবর্তে জিয়াউর রহমান সার্ক গঠনের পাশাপাশি জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। আধুনিক পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশে তিনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার দ্বার উন্মুক্ত করেন এবং দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে আসেন।

২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা ও সূচনা এবং ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হলেও, অরক্ষিত স্বাধীনতার কবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ৭ নভেম্বর। এ দিনটি আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তর ঘিরে আবর্তিত। কারণ এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশী জাতি উপলব্ধি করে যে, জনগণই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের ঐক্যই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র ছিল জনগণের অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত অভিব্যক্তিস্বরূপ আইনের শাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, যার ভিত্তি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে, যেখানে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার হবে সহিষ্ণু, জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক। শত-সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অর্জিত একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক বিপ্লব আমাদের সামনে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও আইনের শাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির আগামীর রাজনীতি সেই আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে, মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্তের ঋণকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্নকে ধারণ করে একটি কার্যকর, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবো।

লেখক: জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী লীগের বেলাগাম পুঁজিলুণ্ঠন
বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পটভূমিতে এবারের বিজয় দিবস
ইসলামোফোবিয়া
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, যার মর্মমূলে স্বাধীন জাতিসত্তার চেতনা
স্মৃতি রোদ
আরও

আরও পড়ুন

জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন

জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন

নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু

নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু

ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, হামাস নেতা হানিয়া তেহরানে নিহত

ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, হামাস নেতা হানিয়া তেহরানে নিহত

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

হাওয়াইয়ের কিলাওয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার প্রবাহ শুরু

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

ম্যাট গেটসের বিরুদ্ধে যৌন ও মাদক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতন-নাকে খত দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

গাজার হাসপাতাল ও ত্রাণ বহরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনছে পাকিস্তান, ছাড়িয়ে যাবে ভারতকেও

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি