বাংলাদেশের বৃহত্তম ভাসমান বাজার পিরোজপুরের নাজিরপুরের বৈঠাকাটা বাজার
০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম

শুধু থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা ভারতের কেরালা নয় বাংলাদেশে রয়েছে ভাসমান বাজার। যা দুই শত বছরের বা তারও বেশি পুরাতন। এ বাজারটি পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দুরে নাজিরপুর উপজেলার বৈঠকাটা বেলুয়া নদীর মোহনায়। বিস্তৃতি প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে কোনো রাস্তাঘাট না থাকায় প্রয়োজনে ২শ’ বছর পূর্বে বৈঠাকাটা খালে ভাসমান বাজারটি শুরু। স্বাধীনতার পর বাজারের পরিধি বাড়তে থাকলে মূল বাজারটি এখানে চলে আসে বর্তমান স্থানে। বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন এ বাজারটি সম্পূর্ণ পানির ওপরে বেলুয়া নদীর বুকে এর অবস্থান। নদী-খালবেষ্টিত নাজিরপুর উপজেলার কৃষিজ পণ্য বিক্রয় এবং এলাকার মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে চলাচলের সুবিধার্থে এ বাজারের উদ্ভব। সকাল ৫টা থেকে বিকাল ১২টা পর্যন্ত চলে এ বাজার। এখানে মূল বাজার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। তবে কখনো কখনো বাজারে চাল ডাল, ধান, সুপারী, গাছের চারা, শাক সবজিরসহ অন্যান্য মালামাল পাইকারী বেচাকেনা বিকাল ৪টা পর্যন্ত গড়ায়। হয় কয়েক কোটি টাকার লেনদেন। দিনের আলো ফোটার আগেই পণ্য নিয়ে নানা ধরনের নৌকা করে চলে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতা। কেউ আসেন উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য, আবার কেউ আসেন কেনাকাটার জন্য এ ভাসমান হাটে। সবই চলে নৌকা বা ট্রলারে। বেলুয়া নদী বা বৈঠাকাটার আশ পাশের কলারদোয়ানীয়া, মুগারঝোর, পদ্মডুবি, মনোহরপুর, বিল ডুমুরিয়া, সোনাপুর, গাওখালী, কলাখাল, মধুভাংগ, পাকুরিয়া, দেউলবাড়ী, দোবরা, চাঁদকাঠীসহ ২০ থেকে ২৫টি এলাকার মানুষ তাদের বাজার করতে আসে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে এ বাজার। নৌকা ট্রলার বা ছোট লঞ্চ এ বাজারের প্রধান বাহন। নদীতে অবস্থান এবং খাজনা কম থাকায় পইকাররাও ভিড় করেন এ বাজারে। বড় বড় ট্রলারে করে পণ্য কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে। অন্যান্য বাজারের মতো দর কাষাকষি করে চলে কেনাবেচা। যে কোনো বাজার যেখানে পাইকাররা যান বিক্রেতাদের কাছে মাল কিনতে, সেখানে এ ভাসমান হাটের কেনা বেচার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছোট ছোট নৌকায় করে আসা চাষিরা তাদের পণ্য নিয়ে যান পাইকারদের ট্রলারের কাছে, দরদামে বনলেই হয় পণ্য হাতবদল। পণ্য ওঠে ছোট নৌকা থেকে পাইকারের বড় ট্রলারে। এখানে একটা একটা নৌকা বা ট্রলারই এক একটি দোকান। এ এলাকায় কৃষি পণ্যের মধ্যে শাক সবজির চাষাবাদ বেশি হয়। সেই কৃষিপণ্যই এ ভাসমান হাটের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকা ও সারা দেশ এবং রফতানি হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ দেশের বাইরে। গ্রামের মানুষের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে নিজেরাই আসেন এ হাটে বিক্রয় করতে। খেত থেকে তুলে নৌকায় সাজিয়ে সরাসরি এ বাজারে বিক্রয় করতে নিয়ে আসার কারণে পণ্য থাকে তরতাজা। নানা পণ্যে বৈচিত্র্যময় এ বাজার। ভাসমান খাবারের দোকানে চা-পান থেকে শুরু করে ধান, চাল, শাক-সবজি, নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন ধরনের চারা, এমনকি নাশতা বা সিঙাড়া-পুরি পেঁয়াজু পাওয়া যাবে এ বাজারে। বিস্ময়ের বিষয় এখানে পানিতে জন্মানো কচুরীপানা ও শেওলা বিক্রি হয়। চারা তৈরিতে ব্যবহৃত এ জলজ আগাছা কৃষকেরা কিনে নেন পাইকারী দামে। কচুরীপানা দিয়ে ভাসমান ধাপ তৈরি করে তার ওপর শেওলার গোল-গোল দৌলা (স্থানী ভাষায়) তৈরি করে তাতে বীজ বপণ করে চারা তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা, ফুলের চারা, ফলের চারা, ধানের চারা, গাছের চারা, তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এবং ভাসমান বাজার হওয়ায় পাইকাররা এখানকার চারা কিনে সরবরাহ করে সারা দেশে। এ বাজারটি সাধরণত পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ এই সকল জেলার মানুষ তাদের পণ্য কেনা-বেচা করে। নদীর বা ভাসমান হাটের এক এক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পণ্য বিক্রয় হয়। শীতকালে বাজারের ব্যাপ্তি থাকে বেশি। তবে তরমুজের সিজনেও বড় বাজার বসে। এক সময় ঢাকা-বৈঠাকাটা রুটে বড় বড় লঞ্চ চলাচল করায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এ লঞ্চে করে মালামাল পরিবহন করা হত। পদ্মা সেতু হওয়ার পর একদা ব্যস্ত এ রুটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাইকারদের খরচ বেড়ে গেছে। ভাসমান এ বাজারের কাছাকাছি ভাল কোনো সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ দুটোই হয় বেশি। নদীবেষ্টিত এলাকায় বাজার হওয়ায় কোনো প্রকার দুর্ঘটনায় এখানে নেই কোন উদ্ধার করার লোক বা সরঞ্জাম। দক্ষিণবঙ্গের বড় বাজারগুলোর একটি বৈঠাকাটা বাজারটি মূলতঃ এ ভাসমান বাজার থেকেই সৃষ্টি। উপজেলা ও জেলা শহরের সাথে সড়ক পথ তৈরি হওয়ায় বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন খালের ওপর সেতু এবং বেলুয়া নদীতে একটি ব্রিজ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। বাজারের ইজারাদার উত্তর কলারদোয়ানীয়ার বাসিন্দা মহিউদ্দিন বাহাদুর জানান, বেলুয়া নদীর কয়েটি স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ব্লক ফেলে পাইলিং দেয়া প্রয়োজন। একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় রাস্তাটি প্রশস্ত করে দ্রুত সংস্কার করা দরকার। কাশ্মীরি উলা বাসিন্দা ফারুক মোল্লা জানান, নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং নদীতে ভাসমান বৃহৎ বাজার হওয়ায় ছোট খাটো দুর্ঘটনায় কোনো উদ্ধার ব্যবস্থা না থাকায় এখানে একটি ফায়ার সার্ভিসের সাবস্টেশন-এর দাবি এলাকাবাসীর।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়িকে তুলে নেয়ার চেষ্টা, যুবক আটক

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতু নির্মিত চীনে, জুনেই উদ্বোধন

ভারতে মুসলমানদের উপর নির্যাতনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নিন্দা ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা

হঠাৎ করেই কি একটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে যায়?

ভারতের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ

কেউ যখন সংস্কারের কথা ভাবেনি তখন শহীদ জিয়া ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন: নজরুল ইসলাম খান

রাবির ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ: পাশের হার মাত্র ২০.৪৩%, দেখুন আপনার ফল

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা ঠেকিয়ে দিলেন ট্রাম্প

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের ডাস্টবিন স্থাপন

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন