‘সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব ভবিষ্যত ক্রিকেটের জন্য হুঁশিয়ারি’
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাপুটে এক প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। তবে এর আগে দেশের ক্রিকেটে আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয়- দেশের ক্রিকেটের অন্যতম বড় দুই নাম সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়া। দুই মাস আগেও যার অধিনায়কত্বে বিশ^কাপে খেলার কথা, সেই তামিমকে ছাড়াই ভারত গেছে সাকিব বাহিনী। দেশসেরা ওপেনারকে বাদ দিয়ে যাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরেই চলছে আরেক খেলা- ভিডিও বার্তার খেলা। তামিম, সাকিবের পর সময়ের প্রয়োজনে সেই খেলায় যোগ দিয়েছেন দেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার সেই ভিডিও বার্তা জুড়ে থাকলো কিছু ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশের আভাস। তার মতে, যা কাটানো যেতো সাকিবের স্বদিচ্ছা থাকলেই! তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে সাকিব একটা কল বা মেসেজ দিলেই এখনকার আলোচনাগুলোর জন্ম হতো না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক এই অধিনায়ক। সাকিবের গ্রহণযোগ্যতা এমন, তিনি কিছু বললে সেটি তামিমও ফেলতেন না বলে মনে করেন মাশরাফি।
গত মঙ্গলবার তামিমকে ছাড়াই বিশ^কাপ দল ঘোষনা করে বিসিবি। তার পরদিনই এক এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, বিশ্বকাপের দলে তার না থাকার পেছনে পিঠের চোট বা এসবের কারণ নেই। বরং এর বাইরের কিছু ঘটনার প্রভাব আছে। তার মধ্যে আছে বোর্ডের শীর্ষ পর্যায়ে এক কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবের কথাও। সেদিন রাতেই বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, দলের প্রয়োজনে যে কারও যেকোনো জায়গায় খেলতে প্রস্তুত থাকা উচিত। সেটি না হলে ওই ব্যক্তি দলের আগে নিজের কথা ভাবছেন। এসব ব্যাপারে গতকাল নিজের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও বার্তা দেন মাশরাফি। তাতে সাকিবের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, সাকিব অনেক কথা বলেছে, যেগুলোর অনেক যুক্তি আছে। আরও কিছু কথা আছে, যেগুলো বলতে চাই। সাকিব একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বলেছে, সেটা হচ্ছে, অধিনায়কত্ব করতে চায় না। সাকিবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। অধিনায়কত্ব করে অর্জনের কিছু নেই ওর এখন আর, এটি আসলে পরিষ্কার বার্তা। তারপরও তামিম ছেড়ে দেওয়ার পর সাকিবকে পুশ করা হয়েছে। বাধ্য হয়েই সাকিবকে নিতে হয়েছে। এতে তাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।’
তবে অধিনায়ক হিসেবেই তামিমের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বটা সাকিব নিতে পারতেন বলে মনে করেন মাশরাফি। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এ পেসার বলেন, ‘সাকিব যেহেতু দলের অধিনায়ক, সে বলেছে, মাঠের বাইরে সব ঠিক করে মাঠে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সাকিব যেহেতু অধিনায়ক হয়ে গিয়েছে, যে ঘটনাগুলো ঘটছে, (তামিমের) প্রথম ম্যাচ খেলা বা ব্যাটিং অর্ডার বা যেকোনো আলোচনা- সে ক্ষেত্রে সাকিব নিজেই ব্যক্তিগতভাবে একটা কল করে মেসেজ দিয়ে (তামিমকে) বললে, এ আলোচনার জন্ম হতো না। সেটা নেতিবাচক হলেও দুজনের মধ্যে থেকে শেষ হয়ে যেত।’ সাকিব কিছু বললে তামিম সেটি মেনে নিতেন বলেও বিশ্বাস করেন মাশরাফি, ‘সাকিবে এমনই ব্যক্তি, আমরা যখন খেলেছি বা আগে যারা খেলেছে, সবার কাছেই সাকিবের গ্রহণযোগ্যতা এতটাই বেশি, সাকিব যদি চায়, বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারই সেটা ফেলবে না। সাকিব অধিনায়ক হিসেবে পারত তামিমকে একটা মেসেজ দিতে বা এক মিনিট কথা বলতে, “একটা প্ল্যান আছে, পরে বলব তোকে।” তাহলেই হতো।’
মিডল অর্ডারে তামিমকে খেলানো হবে বা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলানো হবে না- এমন আলোচনা ম্যাচের আগে হতে পারে বলে মনে করেন মাশরাফি। সাকিব গতকাল রোহিত শর্মার প্রসঙ্গ টেনে বলেছিলেন, তিনিও একসময় নিচের দিকে খেললেও পরে ওপেনিংয়ে উঠে এসেছেন। মাশরাফি এর প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘ওপেনার সাধারণত স্পেশালিস্ট জায়গা। প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিত শর্মার কথা। মিডল অর্ডার থেকে শুরু করে, এমএস ধোনি ২০১১-এরপর ওপেনিংয়ে আনে তাকে। ফলে রোহিত অভ্যস্ত, তামিম না। ট্যাকটিক্যালি সিদ্ধান্ত হতে পারে, (ফজলহক) ফারুকি এবং মুজিবের (মুজব উর রেহমান) বিপক্ষে সাফল্যের হার তামিমের কম। তবে আমার কাছে মনে হয়, মেকশিফট ওপেনার যারা আছে, দীর্ঘমেয়াদে চালানো যাবে কি না নিশ্চিত না।’
গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক তামিম। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তামিম যেন বিশ্বকাপে খেলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই মনোভাব প্রকাশের পর তামিমের বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়ে কোনো আলোচনারই প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করেন মাশরাফি।
তামিম তার ভিডিও বার্তায় জানান, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ভালোভাবে জড়িত এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, তামিম যেন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ম্যাচে না খেলেন। আর খেললেও ওপেনিংয়ের বদলে নিচের দিকে ব্যাট করেন। এমন প্রস্তাব ‘মেনে নেওয়া সম্ভব না’ হওয়ায় তামিম উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, তাঁকে যেন বিশ্বকাপে না রাখা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, তামিমের উত্তেজিত হয়ে বিশ্বকাপে না রাখার মন্তব্যটি সঠিক ছিল না, ‘বোর্ডের কেউ না কেউ তার সঙ্গে কথা বলেছে। এবং কথা বলার পর তামিম কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যায়। এবং সে দলে থাকতে চায়নি। আমি মনে করি যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’ তবে তামিমের উত্তেজিত হয়ে বলা মন্তব্যের চেয়েও তাঁকে বিশ্বকাপে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় প্রশ্ন মাশরাফির, ‘তামিম হয়তো উত্তেজিত হয়ে তাকে না রাখতে বলেছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে তাকে না রাখাটা আসলে কেমন হলো? দ্বিতীয়ত, তামিমকে যেটা বলা হয়েছে যে প্রথম ম্যাচটা খেলো না বা খেললেও নিচে ব্যাটিং করো, এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডের কারও বলার বিষয় না। এটা বলবে কোচ, অধিনায়ক এবং দলের সঙ্গে যাওয়া নির্বাচক, মূলত টিম ম্যানেজমেন্ট। টিম ম্যানেজমেন্ট বললে বাংলাদেশ থেকেও বলতে পারে, দল ঘোষণার পর ভারতে গিয়েও বলতে পারে। সেটা এত আগে করার কারণ কী, আমি জানি না।’
তামিম অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামে আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন উঠলে পরদিন প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকে পাঠান। সেদিন গণভবনে তামিমের পাশাপাশি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এবং মাশরাফি উপস্থিত ছিলেন। তামিমের অবসর ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘তামিম পরিষ্কারভাবে বুঝেশুনে অবসরে গেছে। তারপরে কী হলো। বোর্ডের কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না। একপর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জিনিসটা গড়িয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টার মতো। এবং শেষমেশ যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন তামিম যেন বিশ্বকাপে খেলে। তামিমকে যে আদেশটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তামিমও পরে মিডিয়ায় এসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছে যে, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে খেলতে বলেছেন। এরপরে আর কোনো কথা নেই। আমি অবশ্যই খেলব।”’
প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ উঠে আসার পর তামিম কোথায় কত নম্বরে খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার পরই নেওয়ার ছিল বলে মনে করেন মাশরাফি, ‘যে জিনিসটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াল, সেই জিনিস নিয়ে আমার কাছে মনে হয় না এরপরে আর আলোচনার প্রয়োজন ছিল। যদি দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, টিম ম্যানেজমেন্ট ভারতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিত, যেটা করার সেটা করত।’
তামিমকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর এমন প্রস্তাব দিলে সেটা যদি তিনি না মানতেন বা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেন, তাহলে বোর্ড চাইলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারত বলেও মন্তব্য করেন ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক। সাকিব ও তামিমের এভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়া ভবিষ্যতের ক্রিকেটারদের জন্য শিক্ষা বলেও মনে করেন মাশরাফি, ‘সাকিব-তামিম নিয়ে যে কথা হচ্ছে, সেটা তৃতীয় পক্ষের জন্য। তৃতীয় পক্ষ যে আসলেই ক্ষতিকারক, সেটি আবার প্রমাণিত। আশা করি, সামনে এমন কিছু হলে সেটির জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকল।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা কাম্য নয়
সচিবালয়ে আগুন সন্দেহজনক