দিনাজপুরে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের তুলনায় ক্রেতা কম হওয়ায় কৃষকরা কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। ক্ষেতে ৫/৬ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছে কেনা টমেটো দুই কিলোমিটার দূরেই বিক্রি হচ্ছে ৯/১০ টাকা কেজি দরে। এই টমেটো আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এলাকাভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি হিসেবে। দিনাজপুর থেকে প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় শত শত ট্রাক টমেটো যাচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে গ্রাম পর্যায়ের সচেতন মানুষেরা মত প্রকাশ করেছে। এছাড়া টমেটোসহ সবজি জাতীয় ফসল সংরক্ষণের জন্য এই অঞ্চলে কোন কোল্ড স্টোর না থাকায় স্থানীয়ভাবে পচনশীল এসব ফসল পুরটা বা পাকামাত্রই পানির দাম হলেও বিক্রি করে বাধ্য হচ্ছে কৃষক থেকে স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।

কৃষি নির্ভর দিনাজপুরে ধান চালের পাশাপাশি সবজির চাষ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে টমেটো অন্যতম। গত দুই বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুন আবাদ হয়েছে। জেলার সদর, চিরিরবন্দর ও বিরল উপজেলায় ব্যাপকহারে টমেটোর আবাদ বেড়ে গেছে। ৫নং শংকরপুর ইউনিয়নের কৃষক রহমান জানালেন, কৃষকরা বলছে বর্তমানে যে দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে তাতে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। দু’মাস বয়সী টমেটো আবাদে সার বীজ ও সেচ দিতে হয় প্রচুর পরিমানে। ফলন উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যেহেতু পচনশীল, তাই গম আলু ভুট্টার মত টমেটো ঘরে রাখা যায় না। তাই পাকা মাত্রই বিক্রি করতে হয়। একইভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও কৃষকের কাছ থেকে টমেটো কেনার পর দ্রুত ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। ফড়িয়ারা সকালে কিনে বিকেলেই ট্রাকে তুলে দেয় গন্তব্য জেলার বাজারের উদ্দেশে।

সদরের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার গাবুড়া বাজার থেকেই প্রতিদিন শত শত ট্রাক টমেটো দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। সরাসরি ক্ষেত থেকে দু’ভাবে বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয় টমেটো। ক্ষেত থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টমেটো কিনে বাজারে এনে বিক্রি করে। আবার কৃষকরাও ভ্যানে করে বাজারে আনছে। ঈদের পর থেকে গাবুড়া বাজারে ৪শ’ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গাবুড়া বাজারের স্থানীয় বেপারী মোতালেব জানান, সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে টমেটো কিনে ভাল মন্দ এবং সাইজ বাছাই করে ফড়েয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে থাকি। ফড়েয়ারা তা ক্যারেটে সুন্দরভাবে ভরে ট্রাকে তুলে দিয়ে থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে একেকজন শ্রমিক নিম্নে ৫শ’ টাকা রোজগার করে থাকে। বেকার যুবক থেকে অনেক ছাত্রকেও পার্টটাইম কাজ করতে দেখা গেছে।

বেপারীরা এই টমেটো বাছাই করে প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভরে ট্রাকে তোলা হয়ে থাকে। একটি ক্যারেটে ২৭ কেজি টমেটো ভর্তি করে ট্রাকে লোড করা হয়। প্রতিটি বড় ট্রাকে সাড়ে পাঁচশ ক্যারেট পরিবহন করা হয়। প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া লেগে থাকে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। এসব টমেটো চলে যায় বিভিন্ন জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে। তারা আবার তাদের ইচ্ছেমত দাম হাকিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, এবার দিনাজপুরে ৯৬০ হেক্টরে নাভিজাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। ফলন অনেক ভাল হয়েছে।