মৃত্যুর ৬৬ বছর পরেও লক্ষ লক্ষ টাকা আয়!

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

মৃত্যুর পর মানুষের দেহের কী হয়? কোনও কোনও ধর্মে লাশ আগুনের শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আবার কোনও ধর্মে কবরস্থ করা হয়। আবার অন্য কোনও ধর্মে দেহ স্থান পায় সাজসজ্জাযুক্ত কফিনে। কিন্তু ছোট থেকেই গৃহহীন বা পরিচয়হীন ভাবে জীবন কাটে যে সব মানুষের, তারা মারা যাওয়ার পর কী হয়? কখনও কখনও সরকারি সাহায্যে সমাহিত হয়। আবার কখনও বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঠাঁই হয় হিমঘরে। কিন্তু কখনও শুনেছেন, মৃত্যুর পরও ৬৬ বছর ধরে কোনও মৃতদেহ রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে? এমনটাই কিন্তু ঘটেছিল। মানুষটির নাম ছিল এলমার ম্যাককার্ডি।

এলমার এমন এক জন ব্যক্তি, যিনি নিজের জীবদ্দশায় অপরাধমূলক কাজের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু ‘সুখ্যাতি’ অর্জন করেন মৃত্যুর পর। ১৯১১ সালে মারা যান এলমার। কিন্তু ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তার লাশ অনেক মানুষের রোজগারের উৎস হয়ে ওঠে। কিন্তু কে এই এলমার ম্যাককার্ডি? ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অনাথ। জন্ম থেকে আমেরিকার মেইন শহরে নিজের চাচা-চাচির কাছে মানুষ হন। যৌবনে এলমার দস্তা খনির শ্রমিক, পাইপ মিস্ত্রি, এমনকি সৈনিক হিসেবেও কাজ করতেন। যৌবনে মাদকাসক্তও হয়ে পড়েন। এর পর পকেটে টান পড়তে চুরির পথও বেছে নেন। বেশ কিছু ব্যাঙ্ক এবং ট্রেন ডাকাতির চেষ্টা করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসফল হন। ১৯১১ সালে মত্ত এবং অসুস্থ এলমারকে কেউ বা কারা বুকে গুলি করে। সেই গুলিতেই মারা যান তিনি।

জীবনের মতো মৃত্যুর পরও একা ছিলেন এলমার। কোনও আত্মীয় তার লাশ দাবি করতে আসেননি। তবে তার লাশের দায়িত্ব নেন মর্গের প্রধান জোসেফ এল জনসন। এলমারের লাশ আর্সেনিকযুক্ত একটি সুগন্ধির প্রলেপে ঢেকে তা মমির মতো করে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এই মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন জোসেফ। কৌতূহলী জনসাধারণের কাছে এলমারের সুগন্ধযুক্ত সংরক্ষিত মৃতদেহ প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এলমারের লাশ দেখার সুযোগ দিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রবেশমূল্য হিসেবে অর্থ নিতে শুরু করেন। পাঁচ সেন্ট দিয়ে এলমারের নিথর দেহ দেখার সুযোগ পেতেন দর্শকরা।

পরে এই কথা জানাজানি হয়ে গেলে এলমারের লাশ নিয়ে শুরু হওয়া ব্যবসা হাতানোর চেষ্টা করেন কিছু অসৎ ব্যক্তি। কিছু মানুষ সফলও হন। ১৯১৬ সালে এলমারের ভাই বলে পরিচয় দিয়ে কিছু মানুষ সেখানে পৌঁছন। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে বলে এলমারের দেহ নিয়ে চম্পট দেন এই ছদ্মবেশীরা। কিন্তু মর্গ থেকে বেরনোর পরই এলমারের মৃতদেহ নিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই ঠগের দল। আবারও ব্যবসা শুরু হয় মৃত এলমারের দেহকে নিয়ে।

এর পরও বহু মানুষের হাত বদল হয় এলমারের দেহ। লস এঞ্জেলসের যাদুঘর, সার্কাস, কার্নিভালের প্রদর্শনী, ভূতের সিনেমায় ‘প্রপ’ হিসেবে ব্যবহৃত থাকে এলমারের দেহ। অনেক হাত বদলে অবশেষে এলমারের ঠাঁই হয় ‘ল্যাফ ইন দ্য ডার্ক’ নামক বিনোদন পার্কে। সেখানে ‘দ্য থাউজেন্ড ইয়ার ওল্ড ম্যান’ নাম দিয়ে একটি গাছে ফাঁস লাগিয়ে ঝোলানো হয় তার লাশ। এমনকি কালো রঙ দিয়েও তার শরীর ঢেকে দেয়া হয়। এলমারের লাশ নিয়ে ৬৬ বছর ধরে লাখ লাখ টাকা আয় করেন অনেক মানুষই। ১৯৭৭ একটি গোডাউন থেকে এলমারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। জায়গাটি ছিল অন্ধকার এবং নিস্তব্ধ। মাকড়সার জালে ভরে গিয়েছিল এলমারের মৃতদেহটি। তার দেহ নিয়ে চলা ব্যবসার গৌরবময় অতীতের কোনও আভাস ছিল না এই মৃতদেহে।

‘দ্য সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান’-এর সদস্যরা শুটিং করার জন্য এই গোডাউনে পৌঁছে মৃতদেহটি খুঁজে পান। এলমারের দেহ নামিয়ে আনার সময় হাতটি ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়াও মৃতদেহের হাড়েও পচন শুরু হয়ে গিয়েছিল। মৃতদেহের বুকে বুলেটের ক্ষত চিহ্ন এবং তার শরীরে লেগে থাকা ১৯২৪ সালের লস এঞ্জেলেসের একটি মিউজিয়ামের টিকিটের মাধ্যমে এলমারকে চিহ্নিত করা হয়। মৃত্যুর ছয় দশক পর, এলমারের মৃতদেহ ওকলাহোমার গুথ্রির বুট হিলে সম্মানজনক ভাবে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি
বিমান বিধ্বস্তের পর টিকিট বাতিলে হিড়িক
বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা
আরও

আরও পড়ুন

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম