ক্যাপ্টেন-ক্রু ছাড়াই চলবে জাহাজ
২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১১ এএম
নরওয়ের দক্ষিণে ফ্রায়ার ফিয়র্ড নামে সাগরের সাথে যুক্ত দীর্ঘ এবং গভীর জলপথ দিয়ে এগিয়ে চলা ইয়ারা বার্কল্যান্ড নামের কন্টেইনার-বাহী জাহাজটিকে বাইরে থেকে দেখে অস্বাভাবিক কিছুই মনে হবেনা। কিন্তু এই জাহাজটিকে নিয়ে এখন এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে যা ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক জাহাজে করে পণ্য পরিবহনের চরিত্র বদলে দিতে পারে।
এ বছরের শেষ নাগাদ ইয়ারা বার্কল্যান্ডে মাত্র দুজন ক্রু থাকবে। এবং সবকিছু যদি পরিকল্পনামত এগোয় তাহলে দু বছরের মধ্যে জাহাজটি চলবে কোনও ক্রু ছাড়াই। তখন জাহাজের ব্রিজটি – যেখান থেকে ক্রুরা জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং যেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার জায়গা - ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন সোয়েন ওডেগার্ড ৮০ মিটার লম্বা এই জাহাজের দায়িত্বে থাকবেন। “আমরা জাহাজটি স্বচালিত করতে কাজ শুরু করেছি,” বিবিসিকে বলেন মি ওডেগার্ড, “মূল জাহাজে যেসব প্রযুক্তি ছিল তার সাথে আমরা বাড়তি অনেক প্রযুক্তি জুড়ে দিচ্ছি।”
আশা করা হচ্ছে দু বছরের মধ্যে ইয়ারা বার্কল্যান্ড নামে মাঝারি আকৃতির এই কন্টেইনার-বাহী জাহাজটি চলবে সেন্সর, রেডার এবং ক্যামেরার সাহায্যে। এগুলো থেকে পাওয়া ডেটা থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) পানিতে চলার পথে নানা বাধা-বিপত্তি শনাক্ত করবে এবং সেমত তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেবে। ‘জাহাজের দুই দিকে এবং সামনে ও পেছনে ক্যামেরা লাগানো। ফলে চারদিকে কী হচ্ছে তা জানা যাবে,’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন ক্যাপ্টেন, “সামনে কোনা বাধা দেখা দিলেই জাহাজটি সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বিকল্প পথ নিতে হবে কিনা।"
প্রকল্প সফল হলে ক্যাপ্টেন ওডেগার্ডের কাজ তখন জাহাজের বদলে হবে ডাঙ্গায়, প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। ঐ কক্ষ থেকে একসাথে অনেকগুলো জাহাজের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সেখানে বসেই প্রয়োজনে জাহাজের গতি এবং পথ বদল করা সম্ভব হবে। ইয়ারা বার্কল্যান্ড জাহাজের মালিক নরওয়ের সার উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ইয়ারা। জাহাজটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা থেকে ব্রেভিক বন্দরে সপ্তাহে দুবার একশর মত সারভর্তি কন্টেইনার নিয়ে চলাচল করে। এসময় সেটি ১৩ কিলোমিটার রুটের সমস্ত ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করে তা জমা করে রাখে।
‘যেসব জাহাজ অল্প দূরত্বের কোনও রুটে নিয়মিত চলাচল করে, সেগুলোকে চালক বিহীন করে ফেলা অপেক্ষাকৃত সহজ,’ বলেন সিনিকা হার্টোনেন যিনি জাহাজ কোম্পানি এবং জাহাজ পরিবহণ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের যৌথ একটি সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে কাজ করছেন। এই সমিতি স্বচালিত জাহাজ প্রবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রকল্পের জন্য প্রযুক্তি সরবরাহ করছে কোঞ্জবার্গ নামে একটি কোম্পানি। তারা অসলোর কাছে একটি ফিয়র্ডে চালক-বিহীন বার্জ চালু করা নিয়ে কাজ করছে।
এছাড়া, আলেসুন্ডে শহরের কাছে স্বচালিত ছোট আকৃতির কন্টেইনার জাহাজ চালুর প্রকল্পেও তারা প্রযুক্তি যোগাচ্ছে। ‘কতগুলো প্রযুক্তি বেশ কবছর ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা সেগুলোকে সমন্বয় করে কাজে লাগাচ্ছি,’ বলেন কোঞ্জবার্গ ম্যারিটাইমের নেক্সট জেনারেশন শিপিং বিভাগের পরিচালক অ্যান-ম্যাগরিট রিস্ত। তিনি জানান, বাণিজ্যিক জাহাজ খাতের পাশাপাশি ফিশিং, যাত্রী ফেরি এবং সামরিক খাতও স্ব-চালিত নৌযানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
কোঞ্জবার্গ ইতিমধ্যেই ছোট আকৃতির স্বচালিত ডুবো যান (এইউভি) তৈরি করছে যেগুলো সাধারণত সাগরে জ্বালানি সন্ধানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, সমুদ্র গবেষণা এবং প্রতিরক্ষার কাজেও এসব ছোট আকৃতির স্বচালিত ডুবো-যান ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই কোম্পানি সাগরে মাছের ঝাঁকের অবস্থান শনাক্ত করার উপযোগী আট মিটার লম্বা একটি স্বচালিত নৌযান বিক্রি করেছে যেটিতে সোনার প্রযুক্তি, এআই, রেডার, ক্যামেরা এবং জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘এসব প্রযুক্তি ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা এখনও মানুষই দেখছে যাতে প্রয়োজনে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু জলযানটি একবারেই স্ব-চালিত,’ বলেন বিয়ন জালভিং, কোঞ্জবার্গের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
কোঞ্জবার্গ এখন বড় আকৃতির জলযানে একই প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছে। ‘প্রযুক্তি কোনও বাধা হবেনা। মূল যে বিষয়টি সামনে আসবে তা হলো সমুদ্র পরিবহণের নিরাপত্তা সম্পর্কিত যেসব বিধি-নিষেধ বর্তমানে রয়েছে তার সাথে এই প্রযুক্তির সমন্বয়। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা কতটা আগ্রহ দেখাবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন জালভিং। অবশ্যই জাহাজে ক্রু না রাখতে পারলে যে পয়সা বাঁচবে তা জাহাজ ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করতেই পারে। ডাঙ্গায় বসে কয়েকজনের একটি দল একসাথে কয়েকটি জাহাজ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, বলেন জালভিং। এছাড়া, জাহাজের বদলে ডাঙ্গায় বসে কাজ করা ক্রুদের জন্য অনেক নিরাপদও বটে। শুধু কোঞ্জবার্গ নয়, অন্য আরও কিছু কোম্পানিও স্বচালিত জাহাজ চালু করা নিয়ে কাজ করছে।
গত বছর জাপানে ২২২ মিটার লম্বা একটি গাড়ি-বাহী ফেরি মানুষ ছাড়াই চালানো হয়েছে। জাহাজ নির্মাতা মিৎসুবিসি ঐ ফেরিতে প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে। এছাড়া, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে একটি মালবাহী জাহাজ ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবার সময় অর্ধেক পথই স্বচালিত ছিল। ক্যাপ্টেন বা ক্রুরা সেসময় কিছুই করেনি। জাহাজটি নিজ থেকেই সবচেয়ে সহজ রুটটি বেছে নিয়েছে। ফলে, জাহাজে তেলের খরচ কম হয়েছে বলে জানিয়েছে এভিকাস যারা ঐ জাহাজটিতে প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল