ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

যে কারণে চীনের মুদ্রায় রাশিয়ার তেল কিনছে পাকিস্তান?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৬ জুন ২০২৩, ১০:৩১ এএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩, ১০:৩১ এএম

সম্প্রতি পাকিস্তান রাশিয়া থেকে ছাড়ে কেনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রথম চালানের মূল্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করেছে। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এটি পাকিস্তান সরকারের জন্য বেশ বড় একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। কারণ এর আগে দেশটি তেল কেনার জন্য মার্কিন ডলার ব্যবহার করতো।

রাশিয়া থেকে হ্রাসকৃত মূল্যে জ্বালানি ক্রয় পাকিস্তানের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।

পাকিস্তান এখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে, দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ বিদেশী ‍মুদ্রার রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের নিয়ন্ত্রিত আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

চলতি বছরের প্রথম দিকে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে হ্রাসকৃত দামে তেল কেনা নিয়ে চুক্তি হয়।

সেই চুক্তির আওতায় রোববার তেলের প্রথম কার্গো করাচিতে পৌঁছায়।

চুক্তিতে পাকিস্তান কী বলেছে?
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী মোসাদ্দেক মালিক চুক্তির বিস্তারিত জানিয়েছেন। তবে তেলের দাম কিংবা কী পরিমাণ ছাড় পাকিস্তান পেয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

তিনি শুধু বলেছেন, “তেলের মূল্য চীনা ইউয়ানে পরিশোধ করা হয়েছে।”

পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম সরকারি পর্যায়ের এই চুক্তির আওতায় মোট এক লাখ টন অপরিশোধিত তেল কেনা হয়েছে। এই চুক্তিটি পাকিস্তান এপ্রিলে করেছে। এপ্রিলে দেয়া এই ক্রয়াদেশের মধ্যে ৪৫ হাজার টন তেল করাচি বন্দরে পৌঁছে। বাকিটা আসছে বলে জানান মালিক।

পাকিস্তান’স রিফাইনারি লিমিটেড (পিআরএল) প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করবে।

মালিক বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো এক-তৃতীয়াংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা।"

পাকিস্তানের বেশির ভাগ অপরিশোধিত তেল সৌদি আরব এবং পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হয়।

কেন চীনা মুদ্রা?
পাকিস্তানই একমাত্র দেশ নয় যারা চীনা মুদ্রায় বাণিজ্য করছে।

বাংলাদেশও সম্প্রতি একটি রুশ প্রকল্পের জন্য ডলারের পরিবর্তে চীনা ইউয়ানে অর্থ প্রদান করা যায় কিনা সেই বিষয়ে ভাবছে।

নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়াকে চীনা মুদ্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার দেবার পরিকল্পনার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে অন্য মুদ্রায় লেনদেন শুরু করার চেষ্টা করছে। ভারতও রুপী ব্যবহার করে রাশিয়ান অশোধিত তেল কেনার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।

বর্তমানে রাশিয়া ভারতের অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারী। কিন্তু এই সরবরাহ এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

কারণ রাশিয়াকে যে পন্থায় অর্থ প্রদান করতে হবে সেটা নিষিদ্ধ করেছে আমেরিকা।

ভারতকে অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য রাশিয়াকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে।

কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত এক বছর ধরে এ অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

ভারত আশঙ্কা করছে, তারা যদি অর্থ পরিশোধ করে তাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়া রুপিতে পেমেন্ট নিতে প্রস্তুত নয়।

ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলোতে ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, যাতে রুপি দিয়ে তেল কেনা যায়। সমস্যা হলো ভারতের কাছে তেল বিক্রয় বাড়ানোর পর রাশিয়া অনেক রুপি পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখন রুপির পেমেন্টে আগ্রহী নয়।

ইউয়ান নিয়ে কোনো সমস্যা নেই কারণ রাশিয়া ক্রমাগত চীনের সাথে ব্যবসা করে আসছে।

চীন, পাকিস্তান, রাশিয়া সবাই লাভবান
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এখন তার তেলের গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সরিয়ে অন্য দিকে নেবার চেষ্টা করছে।

গত কিছুদিন ধরে চীন ও ভারতই দেশটির তেলের প্রধান ক্রেতা, এবার তার সাথে পাকিস্তানও যুক্ত হলো।

ইসলামাবাদ পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র। এদিকে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত আবার ঐতিহাসিকভাবেই মস্কোর মিত্র। তার মধ্যেও অপরিশোধিত তেলের এই চুক্তি তুমুল অর্থনৈতিক সংকটে পড়া পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন পথ খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষজ্ঞ অতুল ভারতদ্বোয়াজ বলছেন “ডি-ডলারাইজেশন যে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে রাশিয়া ও চীন এটা সফলও হতে পারে। চীনের সাথে রাশিয়ার বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং এই মুদ্রা ব্যবহৃতও হবে।"

তার মতে, “রাশিয়া ভারতের সাথে যেরকম সম্পর্ক ভালো রাখতে চায় তেমনি পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চাইছে। এসব দেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া একটা শক্ত অবস্থানেই থাকবে।"

ইসলামাবাদ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া, আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে পণ্য বিনিময় বাণিজ্য পদ্ধতি শুরুর একটি অবকাঠামো দাঁড় করিয়েছে। একেও ডলারবিহীন পণ্য কেনাবেচার আরেকটি পথ খোলার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এসব পদ্ধতির মাধ্যমে পাকিস্তান পশ্চিম থেকে পূর্বে নির্ভরশীল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : বিবিসি


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা