ঢাকা   বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ | ১৫ কার্তিক ১৪৩১

পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থার বিপক্ষে বেইজিং রাশিয়া ভাঙবে, চীন নতুন করে গড়বে

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

০১ জুন ২০২৪, ১০:২৭ এএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১০:২৭ এএম

 

এই কঠিন এবং হিংস্র সময়ে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কূটনৈতিক সমন্বয়হীনতার বিষয়ে উদ্বেগ করা অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। তবে এর কাঠামোটি নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে একটি বাঁধা। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার ভারসাম্য রক্ষা হয় দুই বছরের মেয়াদে আরও দশটি নির্বাচিত দেশ দ্বারা।
জাতিসংঘের এই পরিষদের নীতিমালাগুলি বছরের পর বছর ধরে নিপীড়ক, সন্ত্রাসবাদী এবং বিদ্রোহকারী নেতাদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, শান্তিরক্ষা অভিযান, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, নূন্যতমভাবে আন্তর্জাতিক তদন্ত আরোপ করে আসছে, যারা অন্যথায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করতে পারতো। এখন সেই ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে।
জাতিসংঘের উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক সদস্য রাষ্ট্রের সাথে মতো অনেক পশ্চিমা দেশ গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে, এমন প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার জন্য এবং নিরাপত্তা পরিষদকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে। এছাড়া, ১৯৪৫ সাল-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যও দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরপরই মার্কিন কর্মকর্তারা রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে। চীনা কূটনীতিকরা ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে যথাযথভাবে দায়ী করে। বেইজিং যুক্তি দিয়েছে যে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর বিস্তার রাশিয়াকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। এরপর, যুক্তরাষ্ট্র-পন্থী কূটনীতিকরা নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার নির্ভরযোগ্য সমর্থক চীন সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন।
চীন নিজেকে জাতিসংঘ ব্যবস্থার রক্ষক বলে মনে করে। স্থায়ী সদস্যদের ভেটো অধিকার সহ নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামোটি একটি সুশৃঙ্খল বিশ্বের জন্য চীনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে যায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বৃহৎ এবং ছোট দেশগুলির মধ্যে ন্যায্যতা এবং সমতার একটি ভারসাম্য রাখার কথা বলেন।
চীনের বক্তব্য পশ্চিমা বিরোধী হয়ে উঠলেও, বিশেষজ্ঞরা নিরাপত্তা পরিষদে চীনা বাস্তববাদের নিদর্শন দেখেছেন। ২০২২ সালে চীন আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মিশনের পুনর্নবায়নের জন্য রাশিয়ার সমর্থন চেয়েছিল। উল্লেখিত প্রতিটি গুরুতর ক্ষেত্রে, সিরিয়া, মালি এবং উত্তর কোরিয়া জড়িত, যেখানে চীন রাশিয়ার সাথে যোগ দিয়ে ভেটো দেয়ার পরিবর্তে ভোট থেকে বিরত থেকে স্পষ্টতই মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়েছে। চীনের এই দৃষ্টিভঙ্গিটি কম নাটকীয়, তবে নি:সন্দেহে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আশঙ্কা বাড়ছে যে, চীন রাশিয়ার কাছ থেকে সুবিধা পেতে চায়। সিরিয়া, মালি ও উত্তর কোরিয়ার সার্বভৌম অধিকার উপেক্ষা করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা জারি করার সমালোচনাতে রাশিয়ার সাথে যোগ দিয়েছে চীন। গবেষণা সংস্থা ক্রাইসিস গ্রুপের রিচার্ড গোয়ান বলেন, ‘চীন তার দিনে আফ্রিকার দেশগুলিতে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলিকে দরকারী বলে মনে করেছে যেখানে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। তবে বিস্তৃতভাবে, আফ্রিকান দেশগুলি প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা পীড়িত এবং ক্লান্ত।’
গোয়ান বলেন যে, চীন ও রাশিয়া আফ্রিকান সদস্যদের আস্থা জয় করতে করতে আগ্রহী। ২৩শে মে আফ্রিকা সম্পর্কে একটি বিতর্কে চীনের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ফু কং আফ্রিকান সদস্যদের উপর আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী ঔপনিবেশিক যুগের পুরানো মানসিকতা, আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করা এবং সর্বদা চাপ ও নিষেধাজ্ঞার আশ্রয় নেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলির সমালোচনা করেন।
বেইজিং উত্তর কোরিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার লক্ষ্যে চীন-রাশিয়ার প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলিকে দোষারোপ করে। চীন মনে করে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সমৃদ্ধি লাভ করতে হলে বিশে^ স্থিতিশীলতার প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে জাতিসংঘ কীভাবে কাজ করবে, তাতে পশ্চিমারা ছড়ি ঘোরানোতে দেশটি অসন্তুষ্ট। রাশিয়াকে তার নিষেধাজ্ঞা এবং অধিকার লঙ্ঘনকারীদের উপর নজরদারি করা সহ পুরানো বিশ^ ব্যবস্থাটি ভেঙে ফেলার সুযোগ করে দিচ্ছে চীন। এবং পরবর্তী বিশ^ কেমন হবে, সেটি সম্ভবত নির্ধারণ করবে বেইজিং।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাজবাড়ীতে পুকুরের পানিতে ডুবে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু

রাজবাড়ীতে পুকুরের পানিতে ডুবে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু

সিংগাইরে একই দিনে সকাল-বিকেল পৃথক স্থান থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার

সিংগাইরে একই দিনে সকাল-বিকেল পৃথক স্থান থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার

সোনালী ব্যাংকের নতুন এমডি শওকত আলী খান

সোনালী ব্যাংকের নতুন এমডি শওকত আলী খান

চেচনিয়ায় ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নেবেন কাদিরভ

চেচনিয়ায় ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নেবেন কাদিরভ

কর্মকর্তারা বদলির তদবির করলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা : ইসি

কর্মকর্তারা বদলির তদবির করলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা : ইসি

এলসি কমছে, ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা

এলসি কমছে, ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা

কাশ্মীরে আবার কেন অশান্তি বাড়ছে?

কাশ্মীরে আবার কেন অশান্তি বাড়ছে?

সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ ৪ দিনের রিমান্ডে

সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ ৪ দিনের রিমান্ডে

উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরকে হেয় করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরকে হেয় করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

নর্ডিক রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনা জেলেনস্কির

নর্ডিক রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনা জেলেনস্কির

টেকনাফে জনতার কর্তৃক অস্ত্রসহ ডাকাত আটক

টেকনাফে জনতার কর্তৃক অস্ত্রসহ ডাকাত আটক

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অফিস প্রয়োজন আছে কি না দেখছি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অফিস প্রয়োজন আছে কি না দেখছি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দৌলতখানে ইউএনও পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা

দৌলতখানে ইউএনও পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা

১৬ ঘণ্টা পর আরেক এএসআইয়ের লাশ উদ্ধার

১৬ ঘণ্টা পর আরেক এএসআইয়ের লাশ উদ্ধার

৩২ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের

৩২ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্মে মেহজাবীনের 'কাজল'

আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্মে মেহজাবীনের 'কাজল'

সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘আইনি খড়গ’

সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘আইনি খড়গ’

শুরুতেই নড়বড়ে বাংলাদেশ

শুরুতেই নড়বড়ে বাংলাদেশ

এই ভূখণ্ডে ‘মুসলিম’ শব্দ মুছে দেয়ার অন্যতম ভিকটিম জাবি : শিবির সেক্রেটারি

এই ভূখণ্ডে ‘মুসলিম’ শব্দ মুছে দেয়ার অন্যতম ভিকটিম জাবি : শিবির সেক্রেটারি

রাসমেলায় যেতে বন বিভাগের পাঁচ রুট

রাসমেলায় যেতে বন বিভাগের পাঁচ রুট