ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গাড়ির কসরৎ দেখিয়ে বিখ্যাত কুইন অফ স্মোক

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম

 

গাড়ি চালানো শেখা অনেকের কাছে কঠিন মনে হয়। সেই গাড়ি নিয়ে কসরৎ দেখানো তো আরো বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার এক লাজুক কিশোরী সেই অসাধ্যসাধন করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন।

 

স্টেসি-লি মে ‘কুইন অফ স্মোক' হিসেবে পরিচিত। ‘প্রফেশনাল কার স্পিনিং' জগতে পুরুষদের আধিপত্য সত্ত্বেও স্টেসি-লি হাতে গোনা কয়েকজন নারীদের একজন। তিনি কি ভাবে পুরুষ প্রতিযোগীদের হারাতে পেরেছেন?

 

তবে ‘কুইন অফ স্মোক' হওয়ার পথে বাধা পেরোনোর কাহিনী শোনার আগে জানা যাক, ঠিক কোন বিষয়টি তাঁকে আকর্ষণ করে। স্টেসি বলেন, ‘‘আমার কাছে স্পিনিংই সব কিছু, কারণ এই কাজ আমাকে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের বৃত্ত থেকে বার করে এনে আমাকে দিয়ে অসাধারণ কিছু করিয়েছে। তখনো আমি এলদোসের ছোট্ট লাজুক মেয়ে ছিলাম।''

 

কার স্পিনিং নিয়ে তাঁর এই নেশা কীভাবে শুরু হয়েছিল, সে বিষয়ে স্টেসি বলেন, ‘‘বাবা যখন স্পিনিং করতেন, তখন তার এক বন্ধু ছিল। আজও তিনি স্পিনিং করেন। তার নাম ফানি। আমার যখন ১৬ বছর বয়স, ম্যাট্রিক করছি, তখন তিনি বাসায় এসেছিলেন। সে দিন আমি কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে ফিরেছিলাম, কারণ বাকিদের তুলনায় আমার বয়স কম হওয়ায় প্রায়ই সবাই আমাকে রাগাতো। তখন বাবা আর তিনি ঠিক করেছিলেন, তারা আমাকে পুরুষে পরিণত করবেন। তারা আমাকে গাড়ি স্পিন করতে দেবেন।''

 

স্টেসি-লি মে ধাপে ধাপে এই কসরৎ শুরু করেন। তার পর হাত পাকিয়ে এখন খ্যাতিপ্রোফেশনাল কার স্পিনার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন স্পিনিং শুরু করলাম, আমার একটা কালো রংয়ের ই-থার্টি ক্যাব্রিওলে ছিল। সেটাই ছিল আমার প্রথম স্পিনিং-এর গাড়ি। তারপর অন্য গাড়ি এলো। জানেন তো, গাড়িরও আয়ু রয়েছে। গাড়িটা পুরানো হওয়ায় বেশিদিন টেকে নি। তারপর আমরা চার দরজার সবুজ ই-থার্টি গাড়ি নিলাম। আমার বাবা তাতে হালকা গোলাপি রং লাগালেন। তখনই আমরা আরো পেশাদারি পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আমরা গাড়িটিকে স্প্রে পেইন্ট করে গোলাপি ও ধূসর করে তুললাম। স্তনের ক্যানসারের কারণে আমার দাদির মৃত্যু হওয়ায় আমরা সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে গোলাপি রং ব্যবহার করেছিলাম। সেটা আমাদের জন্য জরুরি ছিল। পাশের দরজাটি খুললে দেখবেন, যে গাড়ির ভেতরটা এখনো গোলাপি থেকে গেছে।''

 

এককালের ছোট লাজুক মেয়েটি সত্যি অনেক দূর এগিয়েছে। চালকের আসনে বসে সে নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যাংস্টার বা দুর্বৃত্তরা কার স্পিনিং জনপ্রিয় করে তোলে।

 

গোটা দেশ জুড়ে পরিচিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি মোটর স্পোর্টস হয়ে ওঠে। কিন্তু কিশোরী হিসেবে তিনি কেন এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন? স্টেসি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর বয়সে আমি প্রথম কার স্পিনিং দেখেছিলাম। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ওরা গোপনে মিলিত হয়ে কার স্পিনিং করতো। এমন জায়গায়, যেখানে পুলিশ তাদের খুঁজে পাবে না। আমি জানতাম ওরা বেপরোয়া কাজ করছে। কিন্তু আমার বাবা-মা আমাদের সেই শো দেখাতে নিয়ে যেতেন। বাবা-মা-র সঙ্গে থাকার কারণে আমরা নিরাপদ থাকতাম। কিন্তু কিছু একটা ভিন্ন স্বাদ পেতাম। কার স্পিনিং রোমাঞ্চকর লাগতো। গোঁ গোঁ শব্দ, মানুষের উল্লাস। একেবারে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা, ভিন্ন এক জগত। আমরা গোটা জীবন জুড়ে সেটা নিয়ে আচ্ছন্ন রয়েছি।''

 

প্রফেশনাল কার স্পিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্টেসি-লি মে বলেন, ‘‘গাড়ি চালানো শেখানোর আগেই ওরা আমাকে সত্যি স্পিন করতে শিখিয়েছিল। ফলে আইন মেনে রাজপথে গাড়ি চালানোর আগেই আমি স্পিনিং করছিলাম। অ্যালবার্টনে হুইলস এন স্মোক-এ ‘কিংস অ্যান্ড কুইনস অফ স্মোক' নামের এক বাৎসরিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে কোভিডের আগে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি কুইন অফ স্মোক খেতাব জিতেছি। দ্বিতীয় বছর জেতার পর আমার মা আমাকে কুইন অফ স্মোক নামে ডাকতে শুরু করেন। চার্লিজ থেরন দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার আগে কেউই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি আমাকে কুইন অফ স্মোক নামে ডাকার পর থেকে সবই সেই নাম ব্যবহার করতে শুরু করে।''

 

এখন স্টেসি লি কুইন অফ স্মোক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু শীর্ষে পৌঁছানোর সেই পথ মোটেই সহজ ছিল না। কয়েক বছর ধরে তিনি বেশ কয়েকটি ক্রিড়া ও মোটর গাড়ির বিজ্ঞাপন করে আসছেন। এখনো পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা