ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

সিয়াম সাধনার মাগফেরাত লাভের ১০ দিনের উপহার

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম

মাহে রমজানের সিয়াম সাধনাকে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করেছেন। প্রথম দশদিন রহমতের ধারায় পরিপ্লুত। দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফেরাত লাভের পুণ্যের প্রবাহে বিকশিত এবং শেষের ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নিষ্কৃতির জন্য নির্ধারিত। এই নিরিখে মাগফেরাত লাভের ১০ দিনে আল্লাহপাকের প্রশংসা ও স্তুতি অধিক হারে করাই শ্রেয়। এই শ্রেয়তর কর্ম প্রেরণাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আল কুরআনে প্রদত্ত দিক নির্দেশনার প্রতি নজর দেয়া সকলেরই দরকার। আসুন, এবার সে দিকে অগ্রসর হওয়া যাক।

আল কুরআনের ৩৭নং সূরাটির নাম ‘আস্সাফফাত’। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ১৮২। এই সূরার শেষ তিনটি আয়াত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাণস্পর্শী। এই তিনটি আয়াতেকারীমায় সম্পূর্ণ সূরার মর্মকথা তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ১৮০, তারা যা (আল্লাহর প্রতি) আরোপ করে, তা থেকে আপনার প্রতিপালক পবিত্র ও মহান, সকল ক্ষমতার অধিকারী। ১৮১. আর শান্তি বর্ধিত হোক রাসূলগণের প্রতি!। ১৮২. আর সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত উল্লেখিত তিনটি আয়াতের মধ্যে এই সূরার সমস্ত বিষয়বস্তুকে সন্নিবেশিত করেছেন।

এই সূরার সূচনা হয়েছিল তাওহীদের বর্ণনার মাধ্যমে। যার সারমর্ম এই যে, মুশারিক ও অংশীবাদীরা মহান আল্লাহপাক সম্পর্কে যে সব মনগড়া ও বাতিল বিষয় বর্ণনা করে, পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা সেগুলো থেকে মুক্ত ও পবিত্র। আল্লাহপাকের সত্ত্বা সার্বিকভাবে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। এই দিকনির্দেশনাটি প্রথমেই তুলে ধরা হয়েছে। এরপর এই সূরায় নবী রাসূলগণের ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে।

তারপর কাফের ও মুশরিকদের অবিশ্বাস, সন্দেহ ও আপত্তিকর উক্তি সমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যুক্তি ও উক্তির মাধ্যমে খন্ডন করা হয়েছে এবং এই ঘোষণা জারি করা হয়েছে যে, শেষ বিজয় সত্য পন্থিরাই অর্জন করবে। এ সকল বিষয়বস্তুই ব্যক্তি জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মনীষা ও অন্তদৃষ্টি সহকারে পাঠ করবে, সে অবশ্যই আল্লাহপাকের প্রশংসা ও স্তুতি পাঠের প্রতি অতি সহজেই অনুরক্ত ও অনুপ্রাণীত হবে। সে মতে আল্লাহর প্রশংসা এবং স্তুতির উপরই এই সূরায় সমাপ্তি টানা হয়েছে। কী সুন্দর পরিসমাপ্তি!

তাছাড়া এই তিনটি আয়াতের মাঝে যে ধরনের পারস্পরিক সামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়, তা খুবই চিত্তাকর্ষক ও হৃদয়গ্রাহী। এর প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফের মুশরিকরা যে সকল খারাপ গুণে মহান আল্লাহতায়ালাকে চিত্রিত করার অপচেষ্টা ও অপপ্রয়াস চালিয়েছে, তা থেকে তিনি প্রকৃতই পবিত্র ও মুক্ত। তাদের কথা, প্রচারণা ও কাজ কর্ম মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মর্যাদার সামান্যতম হেরফের করার ক্ষমতা রাখে না। তারা তাঁকে খারাপ গুণে বিভূষিত করতে চায়।

অথচ নবী ও রাসূলগণ তাঁকে সঠিকভাবে জানে ও চিনে বিধায়, তাঁর জন্য সমস্ত সত্য নাম ও সত্য গুণসমূহ উচ্চারণ করে। তাই তারা সালাম ও নিরাপত্তা লাভের যোগ্য। তাদের নিরাপত্তা লাভের কারণ এই যে, তারা আল্লাহপাকের ব্যাপারে সত্য, সঠিক ও নিরাপত্তার বেষ্টনী অবলম্বন করেছে। আল্লাহর সঠিক ও যথার্থ গুণগুলোকে তারা স্বীকার করেছে এবং উচ্চকিত করে তোলেছে।

তারা তাঁকে তাঁর সঠিক নাম ও গুণসমূহ দ্বারা গুণান্বিত করেছে এবং সেগুলোর ওসিলায় তাঁর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছে। তাই, তাদের আহ্বানে তিনি সাড়া দেন। কারণ তিনিইতো প্রশংসিত সত্তা। দুনিয়া এবং আখেরাতে সর্বত্র, সর্বদা, সর্বাবস্থায় তিনি প্রশংসিত। এই বিশেষ সত্যটিই এই সূরার শেষ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

এতে করে এ কথা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, নবী ও রাসূলগণ আল্লাহপাকের পরিচিতি ও সার্বভৌমত্বকে সঠিকভাবে জানতে, বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন বিধায়, তারা মহান প্রতিপালকের প্রশংসা ও স্তুতি যথাযথভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন।

তাই, আল্লাহপাকের পক্ষ হতে তাদেরকে মুক্তি, নিষ্কৃতি ও সফলতার খোশ-খবরী প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং নবী ও রাসূলগণের অনুসরণে যে সকল ঈমানদার বান্দাহ মাহে রমজানের মাগফেরাত লাভের দশকে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও গুণগান একান্ত আন্তরিকতার সাথে আদায় করবে, তারা অবশ্যই শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবে, এতে কোনোই সন্দেহ নেই। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে এর তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান