নিরাশা নয় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-২
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম

আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের হৃদয়ে অসীম ইয়াকীন ও বিশ্বাসের সম্পদ দান করেন। নবীগণের সীরাতের প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা আল্লাহ তাআলার রহমতের প্রতি গভীর ও অটুট বিশ্বাসের অনন্য দৃষ্টান্ত দেখতে পাই- আদম আলাইহিস সালাম ইবলিসের চক্রান্তে জান্নাত থেকে হঠাৎ অজানা অচেনা পৃথিবীতে নেমে এলেন। কিন্তু তিনি একমনে আল্লাহর দরবারে দুআ করতে থাকেন এবং আপন দায়িত্ব পালনে রত থাকেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁকে রহমতের চাদরে আচ্ছাদিত করে নেন। (দ্র. সূরা বাকারা : ৩৫-৩৭; সূরা আরাফ : ১১-২৫)
ইউনূস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে কী গভীর বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকলেন। আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত তিনি মাছের পেট থেকে জীবন নিয়েই বেরিয়ে আসেন। (দ্র. সূরা আম্বিয়া : ৮৭-৮৮) ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে ফেলে দেয়া হলো। অদ্ভুত অবিচলতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও যথাযোগ্য পুরস্কারে ভূষিত করেছিলেন তাঁকে সর্বসমক্ষে। চরম বিস্ময় নিয়ে নমরূদ ও নমরূদের গোষ্ঠী সেদিন দেখেছিল, আগুন ইবরাহীমের লেশমাত্র ক্ষতি করছে না। (দ্র. সূরা আম্বিয়া : ৬৮-৭০)
ফেরাউনের জুলুম থেকে বাঁচাতে মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়কে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মিসর থেকে বেরিয়ে এলেন। ফিলিস্তিন যাওয়ার রাস্তা ছিল দুটি। স্থলপথ ও সমুদ্রপথ। স্থলপথে দূরত্ব কম, সমুদ্রপথে দূরত্ব বেশি। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালাম সমুদ্রপথ অতিক্রম করে যাওয়ার ইচ্ছা করেন। কিন্তু ফেরাউন গোষ্ঠী তাদের গতিবিধি টের পেয়ে যায়। পিছনে ধাওয়া করে এসে সমুদ্র অতিক্রমের আগেই তাদের নাগাল পেয়ে যায়। বেগতিক অবস্থা দাঁড়ায় তখন- সামনে বিশাল সমুদ্র আর পেছনে শত্রুর বহর!
জুলুমের আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর গোলামির জিঞ্জিরে আটকে রেখেছিল মিসরীয়রা বনী ইসরাইলকে। মূসার বদৌলতে গোলামির লাঞ্ছনা থেকে মুক্তির যে আশাটুকু জেগেছিল তাও শেষ হয়ে গেল। হতাশার আওয়াজ শোনা গেল- ‘আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম’। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালাম! লোহিত সাগরের তীরে তাঁর প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠ ধ্বনিত হলোÑ কিছুতেই নয়, আমার রব আমার সঙ্গে আছেন। তিনি অবশ্যই আমাকে পথ দেখাবেন। (সূরা শুআরা : ৬২)। মূসার রব সত্যিই মূসাকে পথ দেখিয়েছিলেন। সেদিন পৃথিবী অবাক হয়ে দেখেছিল, লোহিত সাগরের পানি দু’পাশে সরে গিয়ে মাঝখানে পথ তৈরি হয়ে গেছে! (দ্র. সূরা শুআরা : ৬২)
আইয়ূব আলাইহিস সালাম দীর্ঘ অসুস্থতা সহ্য করে যাচ্ছিলেন। এত দীর্ঘ অসুস্থতায় সাধারণ কারো পক্ষে নিরাশ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি অনড় বিশ্বাস নিয়ে দুআ করে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একসময় তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে পূর্ণ সুস্থতা দান করেন। (দ্র. সূরা আম্বিয়া : ৮৩-৮৪)
যাকারিয়া আলাইহিস সালাম বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সন্তান জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না তাঁর স্ত্রীর। একদিন মারইয়াম আলাইহাস সালামের কাছে গিয়ে দেখেন অসময়ের ফল। মৌসুম ছাড়া মৌসুমী ফল দেখে তার মনে জেগে ওঠে- আল্লাহ তো আপন রহমতে আমাকে এই অসময়েও সন্তান দান করতে পারেন। আল্লাহর দরবারে তিনি সন্তান প্রার্থনার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব সীমাবদ্ধতা দূর করে তাঁকে সন্তান দান করেন। (দ্র. সূরা আলে ইমরান : ৩৭-৪১)
মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার সময় কাফেররা ছাওর গুহার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আবু বকর (রা.) কিছুটা চিন্তিত হন। কিন্তু নবী (সা.) ছিলেন শান্ত সমাহিত। পূর্ণ ইয়াকীনের সঙ্গে তিনি অভয় জানালেনÑ ‘উদ্বিগ্ন হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা তাওবা : ৪০) ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নববী প্রজ্ঞাময় উপদেশ ও কর্মনীতি এবং উপরিউক্ত অন্যান্য নবীগণের ঘটনাবলি থেকে আমরা শিক্ষা পাই, মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো, আল্লাহর রহমতের আশা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা। বরং প্রত্যাশা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টাই মুমিন জীবনের একমাত্র অবলম্বনীয় ও করণীয়।
জীবনে আমরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হই। শত আকাক্সক্ষা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অপ্রাপ্তির বেদনা আমাদের আশাহত করে। দীর্ঘ অসুস্থতা ও জটিল রোগ-ব্যাধিতে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। সমাজের অন্যায়, অনাচার ও অবিচার আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। কখনো বিপদের প্রবল ঝড় আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী তছনছ করে দিয়ে যায়। প্রত্যাশার শেষ রশ্মিটুকু মুছে গিয়ে জীবনে নেমে আসে হতাশার ঘন কালো অন্ধকার।
কুরআন কারীম তখন প্রত্যাশার আলোকবর্তিকা হয়ে আমাদের পথের দিশা দেয়। নিরাশার সব অন্ধকার বিদীর্ণ করে জ্বলে উঠে কুরআনের দীপ্ত-মশালÑ ‘আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় কেবল সেই লোকেরাই, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না।’ (সূরা ইউসুফ : ৮৭)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৮৪, মানবিক সংকট চরমে

মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে 'বরবাদ' ঝড়

সৌদির পবিত্র নগরীতে কনসার্ট আয়োজন,মুসল্লিদের ক্ষোভ প্রকাশ

পাবনায় চররে জমি দখল নিয়ে সংর্ঘষে গুলবিদ্ধি ৫

আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ

মার্কিন উচ্চশিক্ষার চরম পতন

পরিশুদ্ধ-পরিবর্তিত বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে-সাহাদাত হোসেন সেলিম

গাজায় ইহুদী হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি শহীদ

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

রাজনৈতিক দল গঠন এখন ছেলেখেলা!

সাভারে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

নর্থ সাউথে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

কোরআনবিরোধী নারী সংস্কার প্রস্তাবনা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ

পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

নারী কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে

তারেক রহমান ‘নিয়তির সন্তান’

অতিদারিদ্র্য বৃদ্ধির শঙ্কা

২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ১০৭২ আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ নেতা গ্রেফতার