ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রোজায় শোকরগুজারির প্রশিক্ষণ-২

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১০ পিএম

রোজা রাখার দ্বারা উপলব্ধি করা যায় খাদ্য-পানি কত দরকারি জিনিস। পেটে ক্ষুধা, বুকে তৃষ্ণা, অথচ পানাহার দ্বারা তা নিবারণ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় এ কষ্ট বরদাশত করতে হচ্ছে আর ক্রমেই কষ্ট তীব্রতর হচ্ছে। অন্যসময় হলে তো ক্ষুৎ পিপাসা আঁচ করামাত্র তা নিবারণের চেষ্টা করা হতো, কিন্তু এ সময় প্রবৃত্তির যতই চাহিদা হোক এবং শারীরিক যত কষ্টই হোক পানাহার বারণ। ফলে বান্দা চাহিদা দমন করে কষ্ট সয়েই যায়। এভাবেই সময় বয়ে যেতে থাকে।

পরিশেষে সূর্যাস্ত কালে যখন ইফতার সামগ্রি নিয়ে বসা হয় তখন দিনমানের দমিত সেই চাহিদার উচ্ছ¡সিত স্ফূরণে অকিঞ্চিতকর খাবারও অমৃতসম মনে হয়। তখন সামনে যা-ই থাকে, পরম সমাদরে তা গ্রহণ করা হয়। এক পেয়ালা পানিতে হৃদয়-মন জুড়িয়ে যায়। রুখা শিরা-উপশিরায় প্রাণরস সিঞ্চিত হয় আর অনাহারক্লিষ্ট শরীর শক্তি-সজীবতা ফিরে পায়। অকস্মাৎ খুলে যায় চেতনার দ্বার। অনুভব-উপলব্ধির উন্মেষে তখন বুঝে আসে পানির কদর আর খাদ্যের মূল্য।

এ ছাড়া যে জীবন বাঁচে না, এর সাময়িক অভাবেও যে দেহমন চলচ্ছক্তি হারায়, সে সত্য তখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। তা দেহকে সচল রাখা ও জীবনকে রক্ষা করার এই অমূল্য অবলম্বন আল্লাহরই তো দান! কত দয়াময় মহান আল্লাহ, যিনি আমাদের জীবন রক্ষার ও আমাদের দেহমনে শক্তি যোগানোর জন্য কত অফুরান নিয়ামত বিশ্ব চরাচরে ছড়িয়ে দিয়েছেন! হররোজ-হরদম আমরা কত সহজে-সাচ্ছন্দ্যে তা ভোগ করে যাচ্ছি! কতটা আনন্দ, কতটা তৃপ্তি, কতটা সুখ-সুধায় আপ্লুত এ জীবন।

সুতরাং শোকর আল্লাহর! অশেষ শোকর তাঁর। শোকর এত সব নিয়ামত দানের জন্য।
শোকর এ নিয়ামতের উপলব্ধি দানের জন্য এবং শোকর তাঁর শোকরগোজারির প্রশিক্ষণ দানের জন্য। রোজা আমাদের অন্তরে এ উপলব্ধিকে উজাগর করারই এক উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। রোজা রেখেই আমরা বুঝতে পারি পানির মূল্য। উপলব্ধি করতে পারি খাদ্যের কদর। এ উপলব্ধির সত্যিকার স্ফূরণ ঘটে ইফতারকালে। তাই ইফতারের সময়টা শোকর ও কৃতজ্ঞতায় আনত হওয়ার সময়। এ সময় প্রাণখুলে শোকর আদায় করা চাই। ভক্তিরসে স্নাত কণ্ঠে বলে ওঠা চাই : ‘হে আল্লাহ! তোমারই সব প্রশংসা। তোমাকেই জানাই সব কৃতজ্ঞতা’। হে আল্লাহ! তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, তোমারই ওপর নির্ভর করেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করেছি।

এভাবে টানা এক মাস চলে নিয়ামতের মূল্য বোঝা ও শোকর আদায়ের প্রশিক্ষণ। দিনের বেলা পানাহার বর্জন করে ক্ষুৎ পিপাসার কষ্টভোগ ও সেই কষ্টভোগের মাধ্যমে জীবনের জন্য খাদ্য-পানীয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব, পরিশেষে ইফতার করে ক্ষুৎ পিপাসার কষ্ট নিবারণ ও তা নিবারণের মাধ্যমে খাদ্য-পানীয়ের মহিমা হৃদয়ঙ্গম-এ ধারাতেই রোজাদারের মন শোকরগোজারির অনুপ্রেরণা পায় এবং শোকরের ভাষা হৃদয়-মন ছাপিয়ে চোখে-মুখে বাঙময় হয়ে ওঠে।

টানা একমাস এবং মাত্র এক মাস। মাসের শেষদিকেই শরীর জবাব দিতে শুরু করে দেয়। তারপর আরও রোজা হলে বড় কষ্ট হতো। দয়াময় আল্লাহ সে কষ্ট হতে বান্দাকে মুক্তি দিয়েছেন। এমনকি মাসের ভেতরেও যদি কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যায় অর্থাৎ অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে রোজা রাখা সম্ভব না হয় তবে রোজা রাখার ফজিলত থেকে বান্দা যাতে বঞ্চিত না হয় সে সুযোগও রাখা হয়েছে। কাজা বা ফিদয়ার সে সুবিধাও তাঁর আরেক নিয়ামত। কৃতজ্ঞতাবোধকে বিকশিত করে তোলার এও আরেক সুযোগ।

অপারগতার ক্ষেত্রে রমজানের রোজার যদি কোনো বিকল্প না থাকত, তবে বান্দা পেত কি মননশীলতা চর্চার এ সুযোগ? কিংবা যদি সারা বছরই থাকত রোজা, তবে অখÐ চর্চায় সম্ভব হতো কি নিজেকে জুড়ে রাখা? সুতরাং বান্দা, শোকর আদায় কর আল্লাহ প্রদত্ত এ সুবিধার জন্য। শোকরগোজারিই এ সুবিধার লক্ষ্য। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই করতে চান। তোমাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে চান না, যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন সেজন্য আল্লাহর তকবির পাঠ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা বাকারা : ১৮৫)।

রমজানের পর রোজা ফরজ না থাকার ফলে রোজার অন্যান্য শিক্ষার সাথে শোকরগোজারির শিক্ষাকেও কাজে লাগানোর সুযোগ লাভ হয়েছে। যখনই পিপাসা তখনই পানি পান এবং যখনই খিদে তখনই খাদ্যগ্রহণ করতে পারার ফলে অন্তরে এই কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হতে পারে যে, ইয়া আল্লাহ! জীবনরক্ষা ও দেহমনে শক্তি যোগানোর এই যে আয়োজন, এতো তোমারই দান। রোজা রাখিয়ে তুমি বুঝিয়ে দিয়েছ, তোমার এ দান কত মূল্যবান এবং কত প্রয়োজনীয়! সেই মহামূল্যবান নিয়ামত আবার এই দিনগুলোতে করে দিয়েছ অবারিত। এখন যখনই ইচ্ছা ও যখনই প্রয়োজন তা ভোগ করতে পারছি।

হে আল্লাহ! বোঝা যাচ্ছে কম হলেও তোমার শোকরগোজার বান্দা বাস্তবে আছে। তুমি নিজ দয়ায় আমাদেরকেও সেই অল্পসংখ্যকদের কাতারভুক্ত করে নাও।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান