ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের অধঃপতন : আমাদের দায় কোথায়

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

২৬ মে ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

মানুষের মনুষ্যত্ব যেসব কারণে মৃত্যুবরণ করে তার অন্যতম হচ্ছে অহংকার। অহংকারীর মাঝে আনুগত্য থাকে না, সত্যগ্রহণের যোগ্যতা থাকে না, অন্যের গুণ স্বীকার করার মতো উদারতা থাকে না। সর্বোপরি তার মাঝে ন্যায় ও অন্যায়বোধ থাকে না। সে হয়ে ওঠে নির্মম-নির্দয়; দুর্বলকে দয়া করতে এবং অপরাধীকে ক্ষমা করতে জানে না। সে হয়ে ওঠে বন্য ও অসভ্য; সৌজন্য ও শালীনতা তার মধ্যে থাকে না। সে হয়ে ওঠে চরম স্বার্থপর; ত্যাগ ও পরার্থপরতা তার মধ্যে থাকে না।

এভাবে একে একে মনুষ্যত্বের গুণ ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে সে হয়ে ওঠে চরম হিংস্র ও স্বৈরাচারী দু’পায়ী প্রাণী। চারপাশের সকলের জন্য সে হয়ে ওঠে মূর্তিমান আতঙ্ক। তার জিহ্বা মানুষকে বিদ্ধ করে, হাত মানুষকে পীড়িত করে, তার পায়ের তলায় লাঞ্ছিত হয় মানুষের মর্যাদা।
তাই অহংকার একটি ব্যাধিমাত্র নয়। এ হচ্ছে ‘উম্মুল আমরায’ সব ব্যাধির শিকড়। এই ব্যাধি যখন কারো মাঝে বিস্তার লাভ করে তখন তার কলব ও রূহ অকেজো হয়ে পড়ে। তার রূহানিয়াত পারে না শয়তানিয়াতকে প্রতিরোধ করতে। অহংকার রূহ ও কলবের অন্যায়-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়।
অহংকারী ভুলে যায় তার আত্মপরিচয়। সে মানুষের বন্ধু নয়, প্রভু হতে চায়। অহংকারী তখন মানুষ থাকে না, সে হয়ে যায় শয়তানেরও অধম। শয়তান সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হয়েছিল; স্রষ্টার আদেশ অমান্য করে বলেছিল, ‘আমাকে তুমি আগুন দ্বারা বানিয়েছ আর তাকে বানিয়েছ মাটি দ্বারা’।

পক্ষান্তরে অহংকারী মানবসন্তানের কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে, ‘আনা রাববুকুমুল আলা’। আমিই তোদের বড় খোদা। অহংকারী মানব তার স্রষ্টাকেও অস্বীকার করেছিল। অহংকারী ভুলে যায় তার পরিণাম। সৃষ্টির ঘৃণা ও অভিশাপ তাকে নিয়ে যায় সৃষ্টিকর্তার আজাব ও গজবের কাছে। প্রতিমুহূর্তে সে অগ্রসর হতে থাকে চিরলাঞ্ছনার অতল গহ্বরের দিকে। অথচ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও তার বোধের উদয় হয় না। যখন হয় তখন আর সময় থাকে না। তাই অহংকার মানব-প্রবৃত্তির সবচেয়ে মারাত্মক প্রবণতা। এর চিকিৎসা হতেই হবে। ব্যক্তি ও সমাজ কোথাও তা বিকশিত হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু চিকিৎসার উপায় কী? একটি সহজ সত্য এই যে, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ। একটি মানবশিশু যখন পৃথিবীতে আগমন করে তখন সে থাকে ঘুমন্ত। ধীরে ধীরে চারপাশের পরিবেশ তাকে জাগ্রত করে। তার সুকুমার বৃত্তিগুলো জাগ্রত হয় কিংবা কুপ্রবৃত্তিগুলো। সে হয়তো বিনয়ী ও হৃদয়বান হয় কিংবা উদ্ধত ও নির্মম হয়।

আমাদের চারপাশের পরিবেশে কি আছে বিনয়-শিক্ষার উপাদান? দুর্বলের প্রতি সদয় আচরণের চর্চা? পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে কি আছে ক্ষমা ও সহনশীলতার অনুশীলন? যদি না থাকে তাহলে কেন নেই? কেন আমরা জাতি হিসেবে এত রিক্ত ও নিঃস্ব? এই রিক্ততা তো সামান্য বিষয় নয়, এতো আমাদের অস্তিত্বের সংকট! এই নির্মমতা ও হৃদয়হীনতার পরিবেশে যে প্রজন্ম বেড়ে উঠছে তাদের কাছে আমরা কীভাবে আশা করব সহৃদয়তা। তাদের আচরণ যদি হয় নির্মম ও অশালীন তাহলে তো আশ্চর্যের কোনো কারণ নেই।
নতুন প্রজন্মের এই অধঃপতনের জন্য কি এ জাতির অভিভাবকদের কোনো দায় নেই? একজন পিতা কি দায় এড়াতে পারেন তার বখে যাওয়া সন্তানের? একজন শিক্ষক কি কোনো দায়িত্বই বহন করবেন না তার হিংস্র ও নির্মম ছাত্রটির? আজ যে যুবক বিপথগামী হয়েছে তার বিপথগামীতার কোনো দায়ই কি গ্রহণ করবেন না সমাজের কা-ারী ও অভিভাবকগণ!

এই সত্য অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে, আমাদের অপরাধের বোঝা ভারী হয়ে চলেছে। পিতামাতা, শিক্ষক-উস্তাদ, নেতা ও পরিচালক সকলেই আমরা অপরাধী, শুধু ব্যক্তি ও সমাজের কাছে নয়, শুধু ওই যুবকটির কাছেও নয়, যে তার ভাইকে পায়ের তলায় পিষ্ট করতে পেরেছে; আমরা তো মহা অপরাধী সৃষ্টিকর্তার কাছে।
স্রষ্টা কি আমাদের দান করেননি আসমানী কালাম, যাতে আছে সকল ব্যাধির উপশম? রব কি আমাদের মাঝে পাঠাননি তাঁর রাসূল, যিনি ছিলেন মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ? সৃষ্টিকর্তা তো আমাদের পথ দেখিয়েছেন, কিন্তু আমরা সে পথে চলিনি। আলোর পথ ছেড়ে আমরা চলেছি অন্ধকারের পথে। মানবতার পথ ছেড়ে আমরা চলেছি পাশবিকতার পথে। তাই এখন চারপাশে শুধু শুনতে পাচ্ছি হায়েনার ডাক। একটি মানববসতি কীভাবে এমন বিরান হয়ে গেল? কেউ কি আছে, এই বিরান জনপদের উপর দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলবে?

এখনো সময় আছে। আল্লাহ তাঁর কালাম এখনো উঠিয়ে নেননি। তাঁর রাসূলের সুন্নাহ এখনো আছে আমাদের মাঝে। এখনো সুযোগ আছে বিনীত হওয়ার, তওবা করে জুলুম ও পাপাচার ত্যাগ করার। আরহামুর রাহিমীনের ক্ষমার দুয়ার এখনো খোলা। কিন্তু একদিন তা বন্ধ হবে। যেদিন বন্ধ হবে সে’দিন শত আর্তনাদেও তা আর খুলবে না।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ক্ল্যাসিকো ম্যচটি আবার খেলার দাবি বার্সা সভাপতির

ক্ল্যাসিকো ম্যচটি আবার খেলার দাবি বার্সা সভাপতির

মৌসুম শেষ ডি জংয়ের

মৌসুম শেষ ডি জংয়ের

কেরানীগঞ্জে সন্ত্রাস উগ্রবাদ নিরসনে সচেতনতা তৈরি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

কেরানীগঞ্জে সন্ত্রাস উগ্রবাদ নিরসনে সচেতনতা তৈরি শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ভোগান্তি চরমে

ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ভোগান্তি চরমে

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

লৌহজং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: যাচাই-বাছাইয়ে ৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল

লৌহজং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: যাচাই-বাছাইয়ে ৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল

পাঁচবিবিতে ১০৪০ লিটার চোলাই মদ সহ গ্রেফতার ৬

পাঁচবিবিতে ১০৪০ লিটার চোলাই মদ সহ গ্রেফতার ৬

ফরিদপুরে গ্যারেজ মিস্ত্রিকে হত্যার দায়ে দুই জনের যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে গ্যারেজ মিস্ত্রিকে হত্যার দায়ে দুই জনের যাবজ্জীবন

রাজধানীতে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পথচারীর মৃত্যু

রাজধানীতে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পথচারীর মৃত্যু

প্রিমিয়ার লিগ হল অব ফেমে অ্যাশলি কোল, এ্যান্ড্রু কোল ও টেরি

প্রিমিয়ার লিগ হল অব ফেমে অ্যাশলি কোল, এ্যান্ড্রু কোল ও টেরি

নোয়াখালীতে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

নোয়াখালীতে রেজাল্ট শীট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান টিটু নির্বাচিত

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান টিটু নির্বাচিত

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

উচ্ছ্বাসে ভাসছেন ইনজাগি

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

নগর প্রতিদ্বন্দ্বিদের হারিয়েই ইন্টারের শিরোপা উদযাপন

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

পুলিশ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নয়, মানবিক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে: ডিএমপি কমিশনার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

রুশ হামলায় ভেঙে পড়েছে খারকিভ টিভি টাওয়ার

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

ইউক্রেনের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যে

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

খান ইউনিসের এক গণকবরেই মিলল ৩০০ লাশ

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

দৌলতখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস