রাস্তার হক ও আমাদের করণীয়-১

Daily Inqilab আবদুল ওয়াহিদ বিন মঞ্জুরে এলাহী

০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৫ এএম

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন দ্বীন দান করেছেন, যা শুধু কিছু ইবাদত-আকীদার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। এর বিধানাবলি জীবনের সব বিষয়কে বেষ্টন করে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের যতো ধাপ ও স্তর সবক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা। ফলে একজন মুসলিম জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে হেদায়েত গ্রহণ করতে পারে এবং তা মেনে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে।

এই নিবন্ধে পথ ও পথিকের হকের বিষয়ে ইসলামের কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হচ্ছে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, তোমরা রাস্তার পাশে বসে থেকো না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়। পরস্পরে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। রাসূল (সা.) বললেন, বসতেই যদি হয় তবে রাস্তার হক আদায় করে বসো। সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কী?
রাসূল (সা.) বললেন, রাস্তার হকÑ ১. দৃষ্টিকে অবনত রাখা। ২. কাউকে কষ্ট না দেয়া। ৩. সালামের জবাব দেয়া। ৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা। (সহীহ বুখারী, ৬২২৯) (বিভিন্ন বর্ণনায় আরো কিছু বিষয় এসেছে।) ৫. পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেয়া। ৬. মযলুম ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা। ৭. বোঝা বহনকারীকে (বোঝা উঠানো বা নামানোর ক্ষেত্রে) সহযোগিতা করা। ৮. ভালো কথা বলা। ৯. হাঁচির জবাব দেয়া। (সুনানে আবু দাউদ, ৪৮১৯) ১০. দম্ভভরে না চলা (বিনয় অবলম্বন করা)। (সূরা বনী ইসরাঈল, ৩৭)
প্রথম নির্দেশনাÑ রাস্তায় বসো না, কারণ এতে যাতায়াতকারীদের কষ্ট হয়। রাস্তা তো বৈঠকখানা নয়; চলাচল করার জন্য। কিন্তু রাসূল (সা.) যখন সাহাবায়ে কেরামের অপারগতা দেখলেন, হক আদায় করার শর্তে প্রয়োজন পরিমাণ বসার অনুমতি দিলেন।

দৃষ্টি অবনত রাখা : সেই হকের একটি হচ্ছে, নযরের হেফাজত। যে ব্যক্তি রাস্তায় চলবে বা দাঁড়াবে কিংবা বসবে সে নজর নিচু রাখবে। কারণ রাস্তায় বেগানা নারী যাতায়াত করবে, নাজায়েয দৃশ্য নজরে পড়তে পারে। এসব থেকে নজরের হেফাজত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেনÑ ‘মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।’ (সূরা নূর, ৩০) নারীদের ব্যাপারে বলেছেনÑ ‘এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং নিজেদের ভূষণ প্রকাশ না করে।’ (সূরা নূর, ৩১)

এই দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষদের আলাদাভাবে সম্বোধন করেছেন। যাতে তারা যথাযথভাবে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অন্যান্য আহকামের ক্ষেত্রে সাধারণত নারী-পুরুষকে একত্রে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এই হুকুমের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন সম্বোধনে উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা যায়। এর উপর আমল করলে অসংখ্য গুনাহ থেকে বাঁচা যাবেÑ ইনশাআল্লাহ।

অনেক নারী সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে বের হয়, ফলে সে নিজেও গুনাহগার হয়, অন্যের গুনাহেরও কারণ হয়। পরপুরুষের সাথে পর্দা করা ফরজ। এই ফরজ ত্যাগ করা নামায, রোযা, হজ্ব বা যাকাত ত্যাগ করার মতই কবিরা গুনাহ। নামায-রোযা ছাড়লে শুধু নিজে গুনাহগার হয়, কিন্তু পর্দা না করলে নিজেও গুনাহগার হয় সাথে অসংখ্য মানুষেরও গুনাহের কারণ হয়। এ জন্য ঘর থেকে বের হতে হলে শরয়ী পর্দার সাথে ঘর থেকে বের হওয়া প্রত্যেক মুসলিম নারীর জন্য ফরজ। এই ফরজ আদায় করা হলে অনেক মানুষ চোখের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে।

কুদৃষ্টি গুনাহের প্রথম ধাপ। যদি প্রথমেই নজর নিচু করে নেয়া হয়, সামনের সব গুনাহ হতে বেঁচে যাবে। আর যদি আল্লাহ না করুন প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন না করে তখন একটি গুনাহ থেকে আরেকটি গুনাহ, এভাবে অসংখ্য গুনাহের ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে শয়তান চরম গুনাহে পৌঁছে দেয়।
কাউকে কষ্ট না দেয়া : রাস্তায় দাঁড়ানো বা বসা ব্যক্তির খেয়াল রাখা উচিত, যেন তার দ্বারা কোনো চলাচলকারীর সামান্য কষ্টও না হয়। কষ্ট দেয়ার বিভিন্ন পন্থাÑ এমনভাবে দাঁড়ানো বা বসা যে যাতায়াতকারীর কষ্ট হয়। কিংবা রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলা, টায়ার জ্বালানো, অহেতুক রাস্তা বন্ধ করা, ফলের খোসা, ময়লা, উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলা; আল্লাহ রক্ষা করুনÑ পানের পিক ফেলা, দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন কোনো জিনিস ফেলে রাখাÑ সবই কষ্ট দেয়ার নানা উপায়। তেমনি ফুটপাতে বা রাস্তায় হকার মার্কেট বসানো, যার কারণে চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে যায় এটিও কষ্ট দেয়ার অন্তর্ভুক্ত।

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

একটি হাদিস : জীবন পরিবর্তনকারী চারটি কথা-১
রাস্তার হক ও আমাদের করণীয়-২
সন্তান : আমার হাতে আল্লাহর আমানত-২
সন্তান : আমার হাতে আল্লাহর আমানত-১
একটি বর্ষের বিদায়ে নতুন বর্ষের আগমন
আরও

আরও পড়ুন

সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে ৭টি ভারতীয় গরু জব্দ

সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে ৭টি ভারতীয় গরু জব্দ

১৫ পুলিশ হত্যা মামলা : কারাগারে পাঠানো হলো সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসকে

১৫ পুলিশ হত্যা মামলা : কারাগারে পাঠানো হলো সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসকে

পেকুয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ

পেকুয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ

সুপ্রিম কোর্টে আরও এক হেল্পলাইন চালু, মিলবে আইনি সেবা

সুপ্রিম কোর্টে আরও এক হেল্পলাইন চালু, মিলবে আইনি সেবা

চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস

চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস

ভারতের ছত্তিশগড়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার

ভারতের ছত্তিশগড়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার

বিএনপি নেতা এস এ খালেকের মৃত্যুতে বাসায় ছুটে গেলেন জামায়াত আমির

বিএনপি নেতা এস এ খালেকের মৃত্যুতে বাসায় ছুটে গেলেন জামায়াত আমির

এনআইডি সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রধান ফটকে অফিস করার নির্দেশ

এনআইডি সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রধান ফটকে অফিস করার নির্দেশ

ছাত্রদল আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে : শিবির সভাপতি

ছাত্রদল আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে : শিবির সভাপতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির কর্মসূচি শুরু আজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির কর্মসূচি শুরু আজ

জকিগঞ্জের সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে : ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ

জকিগঞ্জের সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে : ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ

এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবার মালয়েশিয়ায়

এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবার মালয়েশিয়ায়

গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা : চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউর ১৫ জন বরখাস্ত

গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা : চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউর ১৫ জন বরখাস্ত

ভারতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ভারতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

সাভার ও আশুলিয়ায় খাঁটি খেজুরের রস খেতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ

সাভার ও আশুলিয়ায় খাঁটি খেজুরের রস খেতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ

‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা

‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?

রাজধানীতে অটোরিকশায় মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই যুবকের

রাজধানীতে অটোরিকশায় মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই যুবকের

নবীনগর - চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ

নবীনগর - চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ