দুয়া : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
১৫ জুন ২০২৩, ১১:৪০ পিএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩, ১২:০৯ এএম
দুয়া অর্থ প্রার্থনা করা, আপন রবকে একান্তে ডাকা; তাঁর সামনে নিজ সত্তাকে পেশ করা। নিজের প্রয়োজন, আরজি তুলে ধরা। দুয়া হলো মোনাজাত, প্রভুর সঙ্গে বান্দার একান্ত আলাপ। হাদিস শরীফে দুয়াকে বলা হয়েছে ইবাদতের মূল-মগজ। কারণ, দুয়ার মধ্যে রবের সামনে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। এসময় বান্দা আল্লাহ ছাড়া সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে, সব উপায়-উপকরণকে পিছে ঠেলে একমাত্র দয়াময় প্রতিপালকের সামনে হাজির হয়।
নিজের দীনতা ও হীনতা স্বীকার করে রবের সামনে নিজ উপায়হীনতা, অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে। নিজ সত্তা ও ক্ষমতা সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে কায়োমনে ধরনা দেয় প্রভুর দরবারে। এজন্যই দুয়াকে বলা হয়েছে ইবাদতের মূল-মগজ। বরং বলা হয়েছে ‘দুয়াই ইবাদত’ ইবাদতের প্রকৃত ও সর্বোচ্চ মাধ্যম।
নুমান ইবনে বাশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, দুয়াই ইবাদত। এরপর নবীজি (সা.) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন, আমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই অহংকার বশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সূরা মুমিন (৪০) : ৬০] (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৭৯)।
দুয়া হচ্ছে, স্রষ্টার নিকট বান্দার সাহায্য কামনা, তাঁকে ডাকা, তাঁর প্রতি নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন, সামর্থ্য সক্ষমতা তারই কাছে প্রার্থনা করা আর সকল কিছু থেকে নিজেকে বিমুখ করা। এতে আল্লাহর প্রশংসাও থাকে এবং অনুগ্রহপ্রাপ্তি তাঁরই প্রতি সম্পর্কিত করা হয়। (তাফসিরে কাবীর ৫/৯৭)।
ইমাম যাজ্জাজ (রাহ.) (মৃ. ৩১১ হি.) বলেন, দুয়া তিন প্রকার : ১. আল্লাহর প্রশংসা ও তাওহিদ। যেমন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। ২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা। যেমন, রাব্বিগফির লানা (হে আমার রব! আমাদের ক্ষমা করুন) বলা। ৩. দুনিয়ার সমস্যা সমাধান ও দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করা। যেমন, হে আল্লাহ রিজিক দিন, সন্তান দিন ইত্যাদি বলা। [দ্র. আদাবুদ দুয়া, ইউসুফ ইবনু আব্দুল হাদী, পৃ. ৩৫, দারুন নাওয়াদির, বৈরুত]
দুয়া শ্রেষ্ঠ ইবাদতের একটি। মহান রবের আনুগত্যের অংশ। মুমিন দুয়া-বিমুখ হতে পারে না। বান্দা ও স্রষ্টার গভীর বন্ধন দুয়া। বান্দার জ্ঞান অবগতি স্রষ্টা সম্পর্কে যত পূর্ণতায় পৌঁছে ততই তার দুয়া বৃদ্ধি পায়। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহকে যে যত বেশি চিনতে পারে সে তত বেশি প্রার্থনাকারী হয়। দুয়া বান্দার মুখাপেক্ষিতার প্রকাশ ঘটায়। আমাদের নবীজি (সা.) গুরুত্ব দিয়ে দুয়া করতেন। তেমনি সালাফে সালেহীন সকল অবস্থায় দুয়ায় মগ্ন হতেন।
কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ বিপদে পড়ার পর দুয়া করে। এটা ভুল পন্থা। মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুখ ও আনন্দ সর্বাবস্থায় দুয়ার প্রতি যতœশীল হওয়া। যখন সে আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করবে বিপদের সময় তার দুয়া কবুল হবে।
দুয়া রোগের আরোগ্য। শত্রæর মোকাবেলায় অস্ত্র। বিপদাপদ দূর করার সবচাইতে শক্তিশালী উপকরণ। নবী-রাসূল ও সালাফে সালেহীনের জীবনে দেখা যায় দুয়া তাঁদের সবচাইতে বড় অবলম্বন। আমাদের নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম দুয়ার খুব কদর করতেন। আমাদের জ্ঞানচচার্র ধারায় দুয়ার ভাÐার অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এগুলোর সাহিত্যমান ও মিষ্টতা অকল্পনীয়। কুরআন, ইসলামি আদব, আকিদা, আত্মশুদ্ধি ও আত্মিক উন্নয়নের বর্ণনায় সমৃদ্ধ। বান্দার আনুগত্যের সৌন্দর্যও মাছূর দুয়াগুলোতে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
নিরূপায় বান্দার দুয়ায় থাকে নিষ্ঠা। সেই দুয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। নিরূপায় অবস্থা হচ্ছে, এমন সময় বিপদাপদের সম্মুখীন হওয়া, যখন বান্দার পক্ষে তা প্রতিহত করার কোনো উপায় অবলম্বন করা সম্ভব হয় না। অথবা এমন অবস্থায় পড়া, যখন বান্দার কাছে কোনো বাহ্যিক উপায় বলতে কিছু থাকে না। যেমন ইবরাহীম (আ.)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে ছিলেন। তাঁরা আল্লাহকে ডেকেছিলেন, আল্লাহ সাড়া দিয়েছেন।
এমনকি মুশরিকরাও নিরুপায় হয়ে যখন আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তখন তাদের ডাকে সাঁড়া দেন। ইরশাদ হচ্ছে : তরঙ্গমালা যখন মেঘাছায়ার মতো তাদেরকে আচ্ছন্ন করে, তখন তারা আল্লাহকে এভাবে ডাকে যে, তখন তাদের ভক্তি-বিশ্বাস কেবল তাঁরই উপর থাকে। (সূরা লুকমান : ৩২)। জল, স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে সেই সময় কে তোমাদেরকে রক্ষা করেন, যখন তোমরা মিনতি সহকারে ও চুপিসারে তাঁকেই ডাক এবং বল যে, তিনি যদি এই মুসিবত থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেন, তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব? (সূরা আনআম : ৬৩)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা