কুরআন কারীমের আলোকে জুলুম-২
২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম

যত নিয়ামত আল্লাহ আমাদের দান করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ইমান ও ইসলামী শরিয়ত। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ ও রাসূলের নিখুঁত আনুগত্য প্রকাশ করতে পারি। বেঁচে যেতে পারি নিজের প্রতি জুলুম থেকে। কারণ শরিয়তের বাইরে মনচাহি জীবনযাপন প্রকৃতপক্ষে নিজের প্রতিই জুলুম ও অবিচার। মুশরিক নর-নারীর সাথে বিবাহ নিষিদ্ধকরণ, পারিবারিক জীবনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক-নির্দেশনার পাশাপাশি অতি প্রয়োজনে বিচ্ছেদ বা ছাড়াছাড়ির পথে হাঁটতে হলে তার জন্যও পবিত্র কুরআন উৎকৃষ্টপন্থা বাতলে দিয়েছে। পরিশেষে এসব বিধানকে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘সীমা’ বলে। নীতিসম্মত এসব বিধান অমান্য করাকে বলা হয়েছেÑ ‘সীমালঙ্ঘন’। আর এই সীমালঙ্ঘন যে করবে তাকে বলা হয়েছেÑ ‘জালিম’। সূরা বাকারার ২২৯ নং আয়াতের শেষে বলা হয়েছে : ‘এটা আল্লাহর স্থিরীকৃত সীমা। সুতরাং তোমরা এসব লঙ্ঘন করো না। যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে তারা বড়ই জালিম’।
ইসলামী শরিয়ত আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এক মহা নিয়ামত। এই নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি। আর সেটি হতে পারে একমাত্র শরিয়ত অনুসরণের মাধ্যমেই। ইরশাদ হয়েছে : (হে রাসূল!) আমি তোমাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরিয়তের ওপর রেখেছি। সুতরাং তুমি তারই অনুসরণ কর এবং যারা প্রকৃত জ্ঞান রাখে না, তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। (সূরা জাসিয়া : ১৮)।
এক হলো শরিয়ত অনুসরণে ত্রæটি কিংবা অলসতা করা; কিন্তু যদি সরাসরি বিমুখতা প্রদর্শন করা হয়, বা ছলে-বলে-কৌশলে শরিয়তের বিধিবিধানকে পাশ কাটিয়ে মনচাহি জীবনযাপন করা হয়, জেনেও না জানার ভান করে আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ-উপদেশকে উপেক্ষা করা হয়, তবে তা মহা অপরাধ এবং বড় জুলুম। ইরশাদ হয়েছে : সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নিজ কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? (সূরা কাহফ : ৫৭)।
এছাড়াও আরও বহু আয়াত ও হাদিস রয়েছে, যেখানে শরিয়তের বিধান উপেক্ষা করাকে নিজের প্রতিই জুলুম সাব্যস্ত করা হয়েছে। কাজেই মুমিনের উচিত, এমন জুলুম থেকে সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকা।
সব যুগেই কুপ্রবৃত্তির অনুসারী লোকদের জন্য ঐশী অনুশাসন মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়ে থাকে। তাই একেক সময় একেক উদ্দেশ্যে তারা শরিয়তের ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত যেহেতু মক্কার মুশরিকদের আকিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থি, তাদের পৌত্তলিকতাকে রদ করে, তাদের চিন্তা-চেতনার বিভ্রান্তি প্রমাণ করে এবং খেয়াল-খুশিমতো জীবনযাপনের নিন্দা করে, তাই একে মেনে নিতে তাদের কষ্ট হতো।
এ কারণেই তারা রাসূল (সা.)-এর কাছে কুরআনের রদবদল চেয়েছিল। তারা বলেছিল : ‘অন্য কোনো কুরআন নিয়ে এসো অথবা এতে পরিবর্তন আন।’ আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে তার জবাব শিখিয়ে দিয়েছেন। পরিশেষে বলেছেন : ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে? বিশ্বাস কর, অপরাধীরা কৃতকার্য হয় না। (সূরা ইউনুস : ১৭)।
অর্থাৎ তারচেয়ে বড় জালিম আর কেউ নেই, যে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে, তাঁর কালামকে পরিবর্তন করে এবং তার মধ্যে সংযোজন-বিয়োজন করে। এমনকি এই কুরআনকে প্রত্যাখ্যান বা অস্বীকার করে। (দ্র. তাফসিরে কুরতুবী ৮/৩২১)।
অন্যের হক নষ্ট করা বা যে কোনোভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া ভয়াবহ জুলুম। এটি হয়ে থাকে সাধারণত শক্তিশালী কতৃর্ক দুর্বলের প্রতি, বড়র পক্ষ থেকে ছোটর প্রতি, ধনী কতৃর্ক গরিবের প্রতি, মালিক কতৃর্ক শ্রমিক বা কর্মচারীর প্রতি এবং শাসক কতৃর্ক জনগণের প্রতি। অথচ একটুও চিন্তা করা হয় না যে, যদিও আজ সে দুর্বল হওয়ার কারণে তার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে, কাল আল্লাহ তাকে সবল করে দিতে পারেন। দুনিয়াতে যদিও কোনোভাবে পার পাওয়া যায়, কিন্তু আখেরাতে কী উপায়? কুরআন কারীমে এর জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা এসেছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : যারা নিজেদের ওপর জুলুম হওয়ার পর (সমপরিমাণে) বদলা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে ও পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। এরূপ লোকদের জন্য আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। (সূরা শূরা : ৪১-৪২)।
জুলুম হয় কখনো শারীরিকভাবে, কখনো মানসিকভাবে, কখনো সম্পদ লুট করে, কখনো সম্ভ্রমহানি করে। তা যেভাবেই করুক কিয়ামতের দিন তার মূল্য দিতেই হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো! কেননা জুলুম কিয়ামতের দিন বহু অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে। (সহিহ বুখারী : ২৪৪৭)।
জুলুমের রয়েছে আরও নানান রূপ, নানান ধরন। এখানে কিছু নমুনা পেশ করা হলো। আল্লাহ আমাদেরকে সকল প্রকার জুলুম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুনÑ আমিন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো