সন্তান ভাবনা কুরআন মাজীদের একটি আয়াতের বার্তা

Daily Inqilab মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ

৩১ জুলাই ২০২৩, ১১:৩২ পিএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

দায়িত্বশীল বাবা-মা মাত্রই সন্তানকে নিয়ে চিন্তা করেন। সন্তানের জন্য দায়িত্বশীল পিতা-মাতার এই চিন্তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি নন্দিত। কেবল নন্দিত নয় শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ পিতা-মাতার অনিবার্য দায়িত্ব। মুসলিম সন্তানের জীবনের বিভাগ দু’টি, দ্বীনি জীবন ও পার্থিব জীবন। পার্থিব জীবন নিয়ে চিন্তা তো প্রায় সবাই করে থাকে। কিন্তু দ্বীনি জীবনের ক্ষেত্রে অনেকের মাঝে অবহেলা লক্ষ্য করা যায়।

সন্তানের দ্বীনি ও দুনিয়াবি উভয় জীবন সুন্দর করার লক্ষ্যে পিতা-মাতার কী কী দায়িত্ব ও করণীয় তা দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। সংক্ষিপ্ত এই প্রবন্ধে যার সুযোগ নেই। কিন্তু এটুকু কথা এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সঠিক উৎস থেকে জ্ঞানলাভ অতঃপর যথাযথ চর্চা-অনুশীলন ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার সঠিক প্রয়োগ খুবই জরুরি। গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধির অভাবে মানুষ যে বড় বড় বিষয়গুলোতে অবহেলার শিকার হয় এই বিষয়টি তার অন্যতম।

সন্তানের সুন্দর জীবন গড়ার লক্ষ্যে পিতা-মাতার করণীয় একটি বিষয়ে হেদায়াত আছে কুরআন মাজীদের সূরা কাহফে। সেই হেদায়াত নিয়েই আজকের আলোচনা। কুরআন মজীদ আমাদেরকে একজন ‘মহান পিতা’র সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যিনি নিজ সন্তানদের দেখাশোনা করার তেমন সুযোগ পাননি। কারণ তার সন্তানরা বড় হওয়ার আগেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। তিনি যখন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান তখন তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। স্বাভাবিকভাবেই তার পক্ষে সন্তানদের বেশি দূর এগিয়ে দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি এমন এক কীর্তির অধিকারী ছিলেন যা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য জামিন হয়ে যায়।
কুরআন মজীদে খিযির (আ.)-এর সঙ্গে মুসা (আ.) এর সফরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সেই ঘটনায় আছে, চলতে চলতে একসময় খিযির (আ.) ও মুসা (আ.) এর প্রচ- খিদে পেয়ে যায়। তাই এক জনপদে পৌঁছে তারা সেই জনপদবাসীকে মেহমানদারির অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমন ক্ষুধার্ত দু’জন লোককে খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানানো ছিল অমানবিকতা।

তারা সামনে চলতে থাকেন। পথিমধ্যে দেখতে পান, জনপদের একটি প্রাচীর ভেঙে পড়ছে। খিযির আলাইহিস সালাম প্রাচীরটি ঠিকঠাক করে দেন। জনপদবাসীর অমানবিক আচরণের কারণে মুসা আলাইহিস সালাম একটু রূষ্ট ছিলেন, বিনা তলবে প্রাচীর ঠিক করতে দেখে তিনি বললেন, আপনি চাইলে প্রাচীর ঠিক করার বদলে এদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। অর্থাৎ এরা তো এমনিতে ভদ্র ও মানবিক নয়। ক্ষুধার্ত মানুষকেও খাবার দিতে রাজি হয় না। তাই পারিশ্রমিক বাবদ এদের কাছ থেকে কিছু নেওয়া যেত।

খিযির আলাইহিস সালাম তখন মুসা আলাইহিস সালামকে জানালেন, এই প্রাচীর জনপদবাসীর কল্যাণে ঠিক করা হয়নি। তা করা হয়েছে দুই এতিম বালকের জন্য! তিনি তা নিজের মর্জিতেও করেননি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁকে এই প্রাচীর ঠিক করার আদেশ করেছেন!

দুই এতিম বালক কোত্থেকে এলো? এই প্রাচীর ঠিক করার সাথে তাদের কী সম্পর্ক? কেন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই প্রাচীর ঠিক করার নির্দেশ দিলেন? এই সব প্রশ্নের জবাব শুনুন খিযির (আ.)-এর জবানিতে, আর প্রাচীরটি ছিল এই শহরে বসবাসকারী দুই এতিম বালকের। এর নিচে তাদের গুপ্তধন ছিল। আর তাদের পিতা ছিল নেক লোক। সুতরাং আপনার প্রতিপালক চেয়েছেন, ছেলে দু’টো যেন প্রাপ্তবয়সে উপনীত হয় এবং তাদের গুপ্তধন বের করে নিতে পারে। (সূরা কাহাফ : ৮২)।

প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার আগে প্রাচীর ভেঙে পড়লে অন্যরা গুপ্তধন নিয়ে যাবে। তাই আল্লাহ তায়ালা খিযির (আ.) কে প্রাচীর ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বালকদ্বয়ের পিতা ধন-সম্পদ তো সঞ্চয় করেছিলেন কিন্তু সন্তানদের প্রতিপালন করার সুযোগ তিনি পাননি। তাদের হাতে সম্পদ বুঝিয়েও দিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু তার মাঝে একটি বিশেষ গুণ ছিল। ব্যক্তি জীবনে তিনি নেককার ছিলেন। তাই তাঁর অবর্তমানে খোদ আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর সন্তানদের সম্পদের জিম্মাদারি নিয়েছেন, হেফাজতের ব্যবস্থা করেছেন।

এ ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই, সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে অন্যতম করণীয় হলো, খোদ বাবা-মা নেককার হওয়া। পিতা-মাতা সত্যিকারার্থে নেক্কার হলে তাদের অবর্তমানেও আল্লাহ তায়ালা সন্তান-সন্ততির দেখভালের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

এ ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, আগত প্রজন্মের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েজ। কিন্তু পার্থিব সম্পদ আগত প্রজন্মের জন্য আসল সম্পদ নয়। আসল সম্পদ হলো, নেককাজ। নেককাজ এমন এক ধন, যার সুফল শুধু নেককারগণই ভোগ করেন না, বরং পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত এর সুফল ভোগ করে। এমনকি কখনো তা পরবর্তী প্রজন্মের পার্থিব ধন-সম্পদের সুরক্ষা পর্যন্ত নিশ্চিত করে।

আল্লাহ তায়ালার রহম ও করুণার ধারা বর্ষিত হোক কুরআনে উল্লেখকৃত সেই ‘মহান পিতা’র প্রতি যিনি আপন নেককাজ দিয়ে সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের পথ সুগম করার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-১
শান্তির সমাজ পেতে ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই
দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণকামিতা
ইসলামে এসো, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে
নিরাশা নয় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-২
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো