ঢাকা   সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আমল কবুলের কয়েকটি শর্ত-১

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজ্ব উপলক্ষে তখন মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করছিলেন। একদিন তিনি অসুস্থ সাহাবী সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.)-কে দেখতে গেলেন। হযরত সা’দ (রা.) এতোটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, যার ফলে তিনি মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচুর সম্পদের অধিকারী। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিস হওয়ার মতো ছিল তার একটি মাত্র কন্যা। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাকে দেখতে গেলেন, তিনি তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার যে কী কষ্ট হচ্ছে, তা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে আর বাঁচব না। আমার প্রচুর সম্পদ রয়েছে। অথচ আমার একটি মাত্র মেয়ে ছাড়া আমার ওয়ারিস হওয়ার আর কেউ নেই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তবে আমি অর্ধেক দান করে দিই? রাসূলুল্লাহ (সা.) এবারও বললেন, না।

এবারে তিনি জানতে চাইলেন, তবে এক-তৃতীয়াংশ? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এক-তৃতীয়াংশই তো অনেক। এরপর বললেন : সন্দেহ নেই, তোমার ওয়ারিসদেরকে তুমি যদি এমন অভাবীরূপে রেখে যাও, যার ফলে তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এ অবস্থার তুলনায় তাদেরকে তুমি সচ্ছলরূপে রেখে যাওয়া অনেক ভালো। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় তুমি যা কিছুই ব্যয় করবে, তোমাকে এর প্রতিফল দেয়া হবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দাও সেজন্যেও তুমি পুরস্কার পাবে। (সহীহ বুখারী : ৪৪০৯)।

এ হাদিসে আমরা দেখতে পাই : ১. দান-সদকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমলেও ভারসাম্য রক্ষা করতে বলছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)! পবিত্র কুরআন ও হাদিসের কতো জায়গায় কতোভাবে এ দান-সদকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে! অথচ সাহাবী সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) যখন তার সম্পদের অধিকাংশ, তিন ভাগের দুই ভাগ সদকা করে দিতে চাইলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাতে অনুমতি দিলেন না।

প্রত্যাখ্যাত হলো অর্ধেক সম্পদ দান করে দেয়ার প্রস্তাবও। অবশেষে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করার অনুমতি দিলেন আর বলে দিলেন, এতোটুকুই অনেক! হযরত সা’দ (রা.)-এর যে এর পেছনে নিজের মেয়েকে ঠকানোর মতো কোনো মন্দ উদ্দেশ্য ছিল না, তা বলাবাহুল্য। মন্দ উদ্দেশ্য থাকলে তিনি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে উপস্থাপন করতেন না। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করার পরও যা থাকবে, এক মেয়ের জন্যে অতোটুকুই অনেক।

বোঝা যাচ্ছে, একটি আমল আল্লাহ তাআলার নিকট মাকবুল ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কেবল নিয়তের শুদ্ধতাই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় বিশুদ্ধ নিয়তের পাশাপাশি আমলটি নেক ও সুন্দর হওয়াও। এজন্যে বরং জরুরি, বিশুদ্ধ নিয়ত ও সুন্দর আমলের পাশাপাশি আমলের পদ্ধতিটিও সুন্দর হওয়া; সুন্নাহসম্মত ও শরীয়তের নির্দেশিত পন্থায় হওয়া। এ তিনের মিশেলেই আমলটি আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে।

প্রিয় সাহাবী অসুস্থতার তীব্রতায় যখন মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলেন, সে মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সা.) এভাবেই তাকে একটি ভালো আমলের সুন্দর পদ্ধতি নির্দেশ করেছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, দান করতে চাইলে করো, তবে তা তোমার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নয়। ইসলামী শরীয়তে মৃত্যুকালে সম্পদ দান করা কিংবা মৃত্যুপরবর্তী সময়ের জন্যে ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে এটাই স্বীকৃত পন্থা, ওসিয়ত বা দান করতে হবে রেখে যাওয়া সম্পদের অনধিক এক-তৃতীয়াংশ। বাকিটুকু রেখে যেতে হবে ওয়ারিসদের জন্য।

২. নিয়ত যখন বিশুদ্ধ হয়, বাহ্যত মামুলি বিষয়ও হয়ে ওঠে অনেক মূল্যবান। হাদিসে দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার কথা। এক বিবেচনায় এটা এমন আর কী কাজ! আবার স্ত্রীর খাবারের ব্যবস্থা করা, তার পোশাকাশাক ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, এসব তো স্বামীর স্বাভাবিক দায়িত্বের অংশ। স্বামী যখন নিজের কাঁধে অর্পিত সে দায়িত্বটুকু পালন করছে আর ভাবছে এর মধ্যদিয়ে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের কথা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষ্যমতে, তার এ কাজটুকুও পুরস্কারযোগ্য!


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

করযে হাসানা : কিছু নির্দেশনা-১
ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
আরও

আরও পড়ুন

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা