আমল কবুলের কয়েকটি শর্ত-২
০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
নিয়তের বিশুদ্ধতায় বাহ্যত একটি তুচ্ছ কাজ যেমন ফযীলতে-মর্যাদায় মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে, তেমনি দৃশ্যত অনেক মূল্যবান কাজও নিয়তের অশুদ্ধতায় হয়ে পড়তে পারে মূল্যহীন। এর দৃষ্টান্তও বর্ণিত হয়েছে হাদিস শরীফে। হাদিসটি বিখ্যাত এবং বহুল চর্চিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সকল আমল নিয়ত অনুসারেই মূল্যায়িত হয়। আর প্রত্যেকে তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে। ফলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে (অর্থাৎ তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে) হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে বলেই বিবেচিত হবে। আর যে হিজরত করে, পার্থিব কোনো বিষয় হাসিল করার জন্য, কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার লক্ষ্যে, তার হিজরতের মধ্যদিয়ে সে কেবল তার উদ্দিষ্ট বিষয়ই হাসিল করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম : ১৯০৭)।
হিজরত মানে স্বদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া। এ চলে যাওয়াটা সাময়িক নয়, স্থায়ী। মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে মুসলমানরা যখন অতিষ্ঠ, রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন অনুসারী মুসলমানদের নিয়ে আল্লাহর হুকুমে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। এ হিজরত ছিল তখন ঈমানের মানদণ্ড।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা তখন হিজরত না করে মক্কাতেই অবস্থান করছিল, তাদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআনের এ সতর্কবাণী : সত্যি, নিজেদের ওপর জুলুমরত অবস্থায় ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় (তাদেরকে) তারা বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, আমরা পৃথিবীতে অসহায় ছিলাম। তারা বলে, আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা তাতে হিজরত করবে? এদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, তা এক নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল! (সূরা নিসা : ৯৭)।
অষ্টম হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন হিজরতের এ আবশ্যিকতা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু এর আগে যখন মুমিনদের জন্য মক্কা থেকে হিজরত করা জরুরি ছিল, উপরোক্ত আয়াতের বর্ণনা মোতাবেক হিজরত না করার শাস্তি অনিবার্য জাহান্নাম, তখন মুসলমানদের একজন হিজরত করেছিলেন ‘উম্মে কায়েস’ নাম্মী এক নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে।
এতে সে পরিচিত হয়ে পড়ে ‘মুহাজিরে উম্মে কায়েস’ নামে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ হাদিসে এমন হিজরত সম্পর্কেই বলেছেন : পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার মানসে যে হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক হবে না, এ হিজরত ইসলামের জন্যে হিজরত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে না, এ হিজরতের মধ্যদিয়ে সে কেবল তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে।
নিয়তের শুদ্ধতার পাশাপাশি কর্মপদ্ধতির শুদ্ধতাও যে জরুরি, এ প্রসঙ্গে আরেকটি উদাহরণ দিই। তিন সাহাবী একদিন গেলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাড়িতে। তারা জানতে চাইলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) কেমন ইবাদত করেন? তাদেরকে যখন বিষয়টি জানানো হলো, তখন তাদের দৃষ্টিতে ইবাদতের সে পরিমাণ যেন কম মনে হলো। তারা তখন নিজেরাই বলাবলি করল, তিনি তো আল্লাহর রাসূল! তাঁর আগের-পরের সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কি আর আমাদের তুলনা চলে? এরপর তাদের একজন বলল, এখন থেকে আমি সারারাত কেবলই নামায আদায় করব। আরেকজন বলল, আমি সারাবছর রোযা রাখব।
তৃতীয়জন বলল, আমি কখনোই বিয়ে করব না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত হলেন। তাদেরকে তিনি বললেন : তোমরাই তো এমন এমন কথা বলছিলে, তাই না? শোনো, আল্লাহর কসম, আমিই তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তোমাদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বড় মুত্তাকী। অথচ আমি রোযা রাখি, রোযা ছাড়ি (রাতে), নামায পড়ি, আবার ঘুমাই, আমি বিয়েও করি। তাই যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয় সে আমার দলভুক্ত নয়! (সহীহ বুখারী : ৫০৬৩)।
হাদিসের বর্ণনায় কোনো জটিলতা নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) যে তিনজন সাহাবীকে এখানে তাঁর সুন্নত থেকে বিমুখ হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন তারা কেউই কোনো মন্দ চিন্তা বা ইচ্ছা করেননি। তারা একটু বেশি পরিমাণে ইবাদতই করতে চেয়েছিলেন। ইবাদতের মধ্যে নিজেদের সবটুকু সাধ্য বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর এক্ষেত্রে নিজেরা যেভাবে ভালো মনে করেছেন সেভাবেই করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতিকে শুধরে দিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত এ কথায় তাদেরকে তিনি এ বার্তা দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে আমিই সর্বাধিক আল্লাহভীরু, তা সত্ত্বেও আমি সারাবছর লাগাতার রোযা রাখি না, সারারাত জেগে কেবলই নামায পড়ি না, আমি মাঝে মধ্যে রোযা ছেড়ে দিই, রাতে আমি বিছানায় যাই, আমি বিয়েশাদিও করেছি, অন্যসব মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবনই আমি যাপন করি।
তাই আল্লাহকে পেতে চাইলে, আমার দলভুক্ত থাকতে চাইলে তোমাদের সামনেও একই পথ। অধিক পরিমাণে ইবাদত করার জন্যে বিয়ে না করা, নফল নামায পড়তে গিয়ে রাতে কখনোই না ঘুমানো, নফল রোযা বছরের কোনো দিনই বাদ না দেয়া। ইত্যাদি আমার পথ নয়। এ হচ্ছে নিয়তের বিশুদ্ধতার পাশাপাশি যথার্থ কর্মপদ্ধতির অনিবার্যতার কথা। এ দু’য়ের মাঝে আরেকটি বিষয়ও অপরিহার্য, সহীহ আমল। অর্থাৎ বিশুদ্ধ নিয়তে সহীহ আমলটি বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে করতে হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা