শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ এ দু’মাস শীতকাল। শীতকাল কারো কারো জন্য আনন্দের বিষয়। শীত মানেই কুয়াশা-মোড়ানো ভোরে চুলোর পাশে বসে পিঠা খাওয়া। ঝড়া পাতা জড়ো করে জ্বালিয়ে আগুন তাপানো। গল্পের আসরে বসে ধুমায়িত চা-কফির উষ্ণ স্বাদ। দীর্ঘ রাতে লেপ-কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন শত আরাধনার ধন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও নেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সড়কের পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে যবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তার গায়ে গরম কাপড় জুটবে কোত্থেকে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?
সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হবে মানবিক সেতুবন্ধন। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এ সকল দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। এর জন্য কি অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া প্রয়োজন?
মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরাও করতে পারেন অনেক কিছু। এ সকল অসহায়দের প্রতি তাদেরও রয়েছে কিছু নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি এ সকল অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে বিন্দু বিন্দু সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
বড় অংকের অর্থ দান করা জরুরি নয়। আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে অল্প দানও অনেক মূল্যবান। তাছাড়া আমাদের অতিরিক্ত সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল ইত্যাদি শীতবস্ত্র দান করার মাধ্যমেও আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ‘মানবতার দেয়াল’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। যা সকলের নজর কেড়েছিল। এ সকল দেয়ালে মানুষের প্রয়োজনীয় কাপড় ও শীতবস্ত্র থাকে। যাদের অতিরিক্ত কাপড় আছে তারা সে দেয়ালে তা রেখে যায়। সেখান থেকে যে কেউ তার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে পারে। এটা ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। সামাজিক উদ্যোগে এ ব্যবস্থাটি আরো সুন্দর করা যেতে পারে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তির অতিরিক্ত বাহনজন্তু বা বাহনের খালি জায়গা আছে সে যেন বাহনহীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। কোনো ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত পাথেয় থাকে তাহলে সে যেন পাথেয়হীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী এভাবে আরো অনেক ধরনের সম্পদের কথা বললেন। তাতে আমাদের মনে হতে লাগল যে প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই। (সহীহ মুসলিম : ১৭২৮)।
কিছু মানুষের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগও ভালো লেগেছে। শীতবস্ত্র বিতরণের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় বিতরণ করলে তুলনামূলক সচ্ছল মানুষও শীতবস্ত্র নিয়ে যায়। এতে প্রকৃত অসহায়রা বঞ্চিত হয়ে যায়। তাই তারা রাতে এগারটা-বারটার দিকে বিভিন্ন স্টেশনে অসহায় মানুষদের থাকার জায়গায় ঘুরে ঘুরে শীতে কষ্ট করা মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। যেন প্রকৃত হকদাররাই এ দানে উপকৃত হন। তাদেরকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। এ জাতীয় উদ্যোগ ব্যক্তিগতভাবেও গ্রহণ করা যেতে পারে।
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও এ ধরনের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সাধ্য ও সামর্থ্য অনুসারে আমরা তাদের সাথেও শরিক হতে পারি। অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও বিবেচ্য যে, উপযুক্ত পাত্রের হাত পর্যন্ত তা পৌঁছাচ্ছে কি না। তাই স্বাভাবিকভাবে এদিক-ওদিক দেয়ার চেয়ে খুঁজে খুঁজে যথাস্থানে অনুদান পৌঁছে দেয়ার বিষয়টিও খেয়াল করার মতো।
নবী কারীম (সা.) বলেন : প্রকৃত অভাবী সে নয়, যে এক-দু লোকমার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ফেরে; বরং প্রকৃত অভাবী তো সেই, যার সামর্থ্য নেই অথচ (সে মানুষের কাছে মুখ ফুটে চাইতে) লজ্জাবোধ করে। অথবা (তিনি বলেছেন), মানুষের কাছে গায়ে পড়ে চায় না। (সহীহ বুখারী : ১৪৭৬)। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো শুধু সামাজিক দায়িত্বই নয় এটা মুসলিমের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।
আল্লাহ তাআলা একটি কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে বনী ইসরাঈলের একজন ব্যাভিচারিণী নারীকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। তাহলে ভেবে দেখুন, যে ব্যক্তি একজন মানুষকে খাওয়াবে, পানি পান করাবে, বিপদাপদে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে, তার সাথে আল্লাহ তাআলা কীরূপ আচরণ করবেন! তাই আসুন, অসহায়দের সাহায্যে আমরা এগিয়ে আসি। শীতার্ত মানুষগুলো উষ্ণ হয়ে উঠুক আমাদের ভালোবাসায়।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা