শয়তান যেভাবে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট করে-২
০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম
শয়তান যে সকল কূটকৌশল ব্যবহার করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে পবিত্র কুরআনে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। মুসলমানদের মনে পরোপকারিতা, অন্যের কল্যাণকামিতা ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনা দুর্বল হয়ে পড়া এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের অন্যতম কারণ। ইসলামের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা হৃদয়ে না থাকলে মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও ইসলামী ঐক্যের গুরুত্ব মনে না থাকাই স্বাভাবিক। তখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়াকে আর দোষের কিছু মনে হয় না।
মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে দুর্বল ও নিস্তেজ করে দেওয়ার দ্বিতীয় মৌলিক মাধ্যম হলো, এক মুসলমান অপর মুসলমানের প্রতি কুধারণা পোষণ করা। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে কুধারণা থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে এবং অমূলক ধারণাকে গুনাহ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কুধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (সহীহ বুখারী : ৫১৪৩)।
কুধারণা থেকে গীবত ও অপবাদের মতো বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি জন্ম নেয়। কারো প্রতি কুধারণা সৃষ্টি হলে মনের ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোষগুলো মনের আনন্দে বর্ণনা করার একটা পঙ্কিল ধারা তখন শুরু হয়ে যায়। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করাকে গীবত বলা হয়।
কুরআনের দৃষ্টিতে গীবত মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার নামান্তর। গীবত এত সূক্ষ্ম গুনাহ যে, কোনো কোনো পরহেজগার ব্যক্তিও এ গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তখন এটা গুনাহ হওয়ার বিষয় তাদের মনে জাগ্রত থাকে না। কারণ অন্যের দোষ বর্ণনা করার মধ্যে মন এক ধরনের মিথ্যা আনন্দ খুঁজে পায়। তাই মধু মনে করে এ বিষ পান করতে থাকে।
চতুর্থ বিষয় ভুল ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা। কারো প্রতি ঘৃণা জন্মালে অনেক সময় তা শুধু গীবতের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তখন অলীক সব কল্পকাহিনী বানিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সত্য-মিথ্যা কথা প্রচার করা হয়। কখনো তো মূল ব্যাপারটি একরকম থাকে তবে এর সাথে নিজ থেকে বিভিন্ন কথা জড়িয়ে রঙ লাগিয়ে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ দেওয়া হয়। বাস্তবতা তখন পুরোপুরি বদলে যায়।
অনেক কবীরা গুনাহের সমন্বয়ে এ পরিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মিথ্যা, গীবত, অপবাদ, মুসলমানকে লাঞ্ছিত করা, মনে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি কবীরা গুনাহ এর সাথে জড়িয়ে থাকে। তাই কারো ব্যাপারে কোনো কিছু শুনলে যাচাই-বাছাই ছাড়া তা বিশ্বাস করা এবং সত্য মনে করে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনে আদেশ করা হয়েছে। সেই সাথে এমন অবাস্তব সংবাদদাতাদের ফাসিক আখ্যায়িত করে তাদের অবিশ্বাসযোগ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
একে অন্যের বিরুদ্ধে যখন এমন ভুল ও মিথ্যা সংবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকে তখন পরস্পরের মাঝে শত্রুতার আগুন জ্বলে ওঠে। ফলে মুসলমানদের যে সময় ও শক্তি কাফেরদের মোকাবিলায় ব্যয় হওয়া উচিত ছিল তা নিজেদের কোন্দল ও রেষারেষির মাঝেই ব্যয় হয়ে যায়। প্রত্যেকেই অন্যকে দোষী প্রমাণিত করে খাটো করে দেখানোর জন্য নিজের সমস্ত মেধা ও প্রতিভা খরচ করে।
এভাবে মুসলমানদের সময় ও শক্তি, যোগ্যতা ও প্রতিভা এবং ধন-সম্পদ নিজেদের মাথা ফাটাফাটিতে শেষ হয়ে যায়। আর ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকে। কারণ, এ অবস্থায় মুসলমানেরা নিজ শত্রুদের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারবে না। আফসোস! বর্তমানে পুরো মুসলিম সমাজ এ ভয়াবহ শাস্তির আগুনেই জ্বলছে।
মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং লড়াই ও ঝগড়া বাধানোর জন্য শয়তানের আবিষ্কৃত কিছু কিছু উপায় এমন, যা কেউ খারাপ চোখে দেখে না। এ বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য শয়তান কখনো ধর্মের পথ বেছে নেয় এবং কিছু চিন্তা-বিভ্রান্ত লোকের মাথায় নিত্যনতুন ধারণা প্রসব করতে থাকে। কখনো রাজনীতির অঙ্গন বেছে নেয় এবং মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামার আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
কখনো আঞ্চলিক ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের মূর্তি নির্মাণ করে কিছু ‘সামেরীকে’ তার পূজায় লাগিয়ে দেয়, যারা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে মুসলিম উম্মাহকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কখনো শ্রেণিগত বৈষম্য উসকে দিয়ে মুসলমানদের রক্তপাত ঘটাতে এবং সমাজ ও পরিবেশকে রণক্ষেত্রে পরিণত করতে উদ্বুদ্ধ করে। এসব কিছু আজ মুসলিম সমাজকে জাহান্নামের নমুনা বানিয়ে দিয়েছে।
আর শয়তানের তৈরি এ জ্বলন্ত অগ্নিস্ফুলিঙ্গে মুসলমানরাই ইন্ধনে পরিণত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং শয়তানের সমস্ত চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন। অনুবাদ : শাহাদাত সাকিব।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে
কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট