ঢাকা   সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চির সাফল্যের পথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস-১

Daily Inqilab মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম

১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সাফল্য-প্রত্যাশী মানুষ সাফল্যের পথে সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করে এবং যে পথে দ্রুত সাফল্য অর্জিত হয় সে পথ অবলম্বন করে। তারা সাফল্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্ভাবনাগুলোকেও অবহেলা করে না। সর্বোপরি তারা গ্রহণ করে অভিজ্ঞ ও সফল মানুষের পথ-নির্দেশনা। পার্থিব সামান্য ও ক্ষণস্থায়ী সাফল্যের জন্য যখন এই নীতির প্রয়োজন হয়, তখন মানুষের চিরস্থায়ী সফলতার জন্যও এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

প্রশ্ন হলো, মানুষের সবচেয়ে বড় সফলতা কী? এ প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াতে প্রদান করেছেন : যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হবে সেই সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। এই মহা সাফল্য অর্জন করা কি কঠিন? না, কঠিন নয়, বরং এটা অর্জন করা খুবই সহজ। আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার করুণায় বান্দার জন্য জান্নাতের অধিকারী হওয়াকে সহজ করে দিয়েছেন এবং তাঁর রাসূলগণের মাধ্যমে জান্নাত লাভের পথ বাতলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তারা অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সূরা আহযাব : ৭১)। তাই রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে জান্নাতের অধিকারী হওয়া সম্ভব।

রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে এমন অনেক সহজ আমলের কথাও বলেছেন, যা সাধারণ বিবেচনায় সামান্য মনে হলেও এর মাধ্যমে মহা সাফল্য জান্নাত লাভ করা যায়। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এমন চল্লিশটি আমল আছে যার কোনো একটির উপর কেউ যদি সওয়াবের আশায় বিশ্বাসের সঙ্গে আমল করে, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো দুধ পান করার জন্য কাউকে বকরী দান করা। (সহীহ বুখারী : ২৬৩১)।

এই হাদিসে সর্বোচ্চ আমলটি চিহ্নিত করা হলেও অন্যগুলোকে অনির্দিষ্ট রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ কোনো ক্ষুদ্র আমলকেও তুচ্ছ ভেবে পরিত্যাগ না করে। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু জুরাই আল হুজাইমী (রা.) বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম, আমরা একটি বেদুঈন গোত্র, আমাদেরকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাত দান করবেন।

তখন নবী করীম (সা.) বললেন, কোনো ভালো কাজ তুচ্ছ ভেবে ছেড়ে দিও না। হোক তা কাউকে রশির একটি টুকরা দান করা বা নিজের পাত্র থেকে অন্যের পাত্রে কিছু পানি ঢেলে দেয়া, কিংবা মুসলিম-ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা বা নিঃসঙ্গ বিষণ্ন ব্যক্তিকে সঙ্গ দিয়ে তার বিষণ্নতা দূর করা অথবা মূল্যহীন একটা জুতার ফিতা দান করা। (সুনানে নাসায়ী-কুবরা : ৯৬৯৪)।

বস্তুত, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টই সবচেয়ে বড় জিনিস। তিনি যেমন সমুদ্র পরিমাণ গোনাহ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্র একটি ভালো কাজের উপর সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাত দিতে পারেন, তেমনি উহুদ পাহাড়সম নেকী থাকা সত্ত্বেও একটি গোনাহের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে জাহান্নামেও নিক্ষেপ করতে পারেন।

এক হাদিসে নবী করীম (সা.) বলেছেন, এক মুসাফির পথ চলতে চলতে প্রচণ্ড পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েছিল, কিছুক্ষণ পর সে একটি কূপ দেখতে পেল এবং তাতে নেমে পানি পান করে উপরে উঠে এলো। এমন সময় সে দেখল যে, একটি কুকুর পিপাসায় অস্থির হয়ে সেখানে এসেছে। লোকটি ভাবল, এই প্রাণীটিও পিপাসায় আমার মতোই কষ্ট পাচ্ছে। তখন সে তার পায়ের চামড়ার মোজা খুলল এবং কূপে নেমে মোজায় পানি ভরে মোজাটি মুখে নিয়ে উপরে উঠে এলো এবং কুকুরটাকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার এ কাজে এতো সন্তুষ্ট হলেন যে, তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং জান্নাতে দাখিল করলেন। (সহীহ বুখারী : ২৩৬৩)।

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পিপাসার যন্ত্রণায় মৃতপ্রায় একটি কুকুর একটা কূপের চারপার্শ্বে চক্কর দিচ্ছিল। কুকুরটির এ অবস্থা দেখে বনী ইসরাইলের একজন ব্যভিচারিনী নারী নিজের পায়ের মোজা খুলল এবং তা দিয়ে পানি উঠিয়ে কুকুরটাকে পান করাল, আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সে জান্নাতী হয়ে গেল। (বুখারী : ৩৪৬৭)। অন্যদিকে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন মহিলা শুধু এই জন্য জাহান্নামী হয়েছে যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে অনাহারে হত্যা করেছিল। সে নিজেও বিড়ালটিকে কিছু খেতে দেয়নি আর তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। (সহীহ বুখারী : ২৩৬৫, ৩৪৮২)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

করযে হাসানা : কিছু নির্দেশনা-১
ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
আরও

আরও পড়ুন

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা