কুরআনে নারীর অধিকার : প্রসঙ্গ মোহর
১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ইসলামের যে বিধানগুলো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বারবার বিভিন্ন আয়াতে বয়ান করেছেন তার অপরিহার্যতা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের অবহেলা ও অমনোযোগিতার কারণে সেসব বিধান সমাজের চোখে গুরুত্বহীন হয়ে গেলেও আল্লাহর কাছে তা গুরুত্বহীন নয়।
ওইসব বিধানের অন্যতম হচ্ছে নারীর মোহর। কতো প্রসঙ্গে কতোভাবে যে আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ এই বিধানটি বয়ান করেছেন! বিবাহ-বন্ধনের প্রসঙ্গে, বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রসঙ্গে, ঈমানদার ব্যক্তি ও সমাজের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে, জাহেলী-সমাজের বর্বরতা রোধ প্রসঙ্গে মোটকথা অনেকভাবে অনেক জায়গায় মোহরের বিধান বর্ণনা করেছেন। তাই কুরআন মজীদে যেমন আছে এর আইন ও বিধানগত দিক তেমনি আছে নৈতিক ও মানবিক দিক, যা মুমিনের চিন্তা ও মস্তিষ্কের পাশাপাশি আলোড়িত করে তার কলব ও হৃদয়কেও।
এই সকল কিছুর সাথে মুমিন নর-নারীকে স্মরণ করানো হয়েছে আল্লাহর আদালত ও বিচার-দিবসের অমোঘ সত্যের কথা। তাই একমাত্র কুরআনই পারে নারী-পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সঠিক পথের দিশা দিতে যদি তারা সমর্পিত হয় কুরআনের বিধান ও শিক্ষার প্রতি।
বিয়েতে মোহর অপরিহার্য। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা : ২৪)।
এই আয়াতে বিয়ে-শাদি সম্পর্কে কিছু মৌলিক বিধান দেয়া হয়েছে, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে হাদিস শরীফে। এই আয়াত থেকে যে বিধানগুলো পাওয়া যায় তা হচ্ছে : ১. ‘মুহাররামাত’ (যাদের সাথে বিবাহ হারাম করা হয়েছে) ছাড়া অন্যদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। কুরআন মজীদে ও হাদিস শরীফে মুহাররামাতের বিবরণ ও আনুষঙ্গিক বিধানাবলি দেয়া হয়েছে। ২. মোহর ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না।
৩. স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে মোহর পরিশোধ করা। ৪. বিয়ের পর সহবাস হলে (কিংবা একান্তে সাক্ষাত হলে, যাকে পরিভাষায় ‘খালওয়াতে সহীহা’ বলে), পূর্ণ মোহর আদায় করা অপরিহার্য। সুতরাং আকদের সময় মোহর ধার্য করা হলে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আর ধার্য না হয়ে থাকলে মোহরে মিছ্ল দিতে হয়। ৫. ধার্যকৃত মোহর থেকে স্ত্রী যেমন কিছু ছেড়ে দিতে পারে তেমনি স্বামীও কিছু বেশি দিতে পারে। স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে হলে এতে কোনো দোষ নেই। ৬. মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য।
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। হাদিস, আছার ও শরীয়তের অন্যান্য দলীলে তা বলা হয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম। ৭. বিয়েতে ইজাব-কবুল ও সাক্ষী অপরিহার্য। এই শর্তগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাদিস শরীফে রয়েছে। (দেখুন : আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৪০-১৪৬)।
উপরোক্ত বিধানগুলো ছাড়াও একজন মুমিন এই আয়াত থেকে আরো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন : ১. মোহর যদিও একটি মধুর লেনদেন এবং ওইভাবেই তা আদায় করা উচিত, তবে তা নিছক উপহার নয় যে, ইচ্ছা হলে দেয়া যায়, ইচ্ছে হলে বিরত থাকা যায়; বরং তা হল স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। স্ত্রী যেমন প্রীতি ও ভালবাসার সাথে নিজেকে অর্পণ করেছে, স্বামীরও কর্তব্য সম্মান ও মর্যাদার সাথে তার মোহর আদায় করা।
২. স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদিস শরীফে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যভিচারী’। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)। ৩. অনেক বড় অংকের মোহর ধার্য করা যেমন শরীয়তে কাম্য নয় তেমনি তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত নয়। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই, যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ রীতি এক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ।
এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস : আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি (উম্মুল মুমিনীন) আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী (সা.) কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি বললেন, ‘নবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরকে সাড়ে বারো উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ’ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (সহীহ মুসলিম : ১৪২৬)।
উম্মুল মুমিনীনদের মাঝে উম্মে হাবীবা (রা.)-এর মোহর বেশি ছিল। তাঁর মোহর ছিল চার হাজার দিরহাম। হাবশার বাদশাহ নাজাশী তাঁকে নবী (সা.)-এর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন এবং মোহরও তিনিই পরিশোধ করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ : ২১০৭)। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া (চারশ’ দিরহাম)। (সুনানে নাসায়ী ৬/১১৭)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা