শীতকাল : ইবাদতের সহজ সুযোগ কাজে লাগাই-২
২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
শীতে সুস্থ থাকার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং শীতজনিত রোগের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। কিন্তু এই সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও থাকে না। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। রাস্তার পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষ দেখা যায়।
আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম, শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। শীতে গরিব-অসহায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে এবং নানা রকম রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আমাদের উচিত শীতার্ত গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?
শীতকালের জন্য বিশেষ কোনো বিধান নেই। গরমকালে যা করণীয় শীতকালেও তাই করণীয়। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা গরমেও করণীয়। হাঁ, শীতকালে তা অধিক প্রাসঙ্গিক বা সহজ। আবার কিছু নেক কাজ এমন আছে, যা শীতকালে কষ্ট হয়। বিশেষত যখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়, শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। যেমন- ওযু করা, ফজর নামাযে মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি।
শীত আমাদের জন্য অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা যদি এ জাতীয় আমলগুলো শীতকালেও সুন্দরভাবে করি, তাহলে অধিক সওয়াব মিলবে ইনশাআল্লাহ। ওই আমল করার সওয়াব মিলবে, সঙ্গে শীতের কষ্টের কারণে অতিরিক্ত সওয়াব মিলবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী (সা.) বললেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করব না, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? তাঁরা বললেন, হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন : (তা হল-) কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি হাঁটা এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত (সীমান্ত প্রহরা)। (সহীহ মুসলিম : ২৫১)।
লক্ষ্য করুন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযু করলে কত বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে। এই কষ্টের মধ্যে শীতের কষ্টও অন্তর্ভুক্ত। কনকনে শীতে পানির স্পর্শ কষ্ট বৈকি। সারকথা হলো, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের সহজ সুযোগ নিয়ে আসে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ঈমান ও কল্যাণের পথে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। আমীরুল মুমিনীন উমর (রা.) যথার্থই বলেছেন : শীতকাল ইবাদতগুজারের জন্য গনীমত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা-৯৮৩৫)।
রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর অনেক ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে দেবেন এবং বিনা হিসাবে দেবেন। রোযাদারকে তিনি কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন। রোযাদার ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সিদ্দিকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবেন। রোযাদারের দুআ কবুল হয়। রোযা জান্নাত লাভের পথ। জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। গোনাহের কাফফারা। রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
রোযার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে : ১. ফরয রোযা। ২. নফল রোযা। নফল রোযা সারা বছর রাখা যায়। তবে কিছু নফল রোযা আছে, যেগুলো বিশেষ সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট এবং হাদিসে এগুলোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের রোযা। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন : নবী (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইহতিমাম করতেন। (জামে তিরমিযী : ৭৪৫)।
যারা নফল রোযা রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে দিন বেশ ছোট হয়। এ সময় সহজে রোযা রাখা সম্ভব। তাই আমরা এ সময় বেশি বেশি রোযা রাখতে পারি। বিশেষত, সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের রোযাসমূহ। শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়। বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) একদিন তাঁর শিষ্যদের বললেন : আমি কি তোমাদেরকে সহজ গনীমত সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, শীতকালে রোযা রাখা। (সুনানে বায়হাকী ৪/২৯৭)। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা