কেমন ছিল মিরাজের সফর
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। নবী কারীম (সা.) বুরাকের উপরই ছিলেন। একে একে প্রতি আকাশের দ্বার তাঁর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলো। প্রথমে দুনিয়ার দৃশ্যমান আসমানে এসে জিবরাইল (আ.) দ্বার উন্মুক্ত করতে অনুরোধ করেন। অপর প্রান্ত হতে প্রশ্ন হয়, কে আপনি? তিনি বললেন, আমি জিবরাইল। প্রশ্ন করা হয়, কে আছেন আপনার সাথে? বললেন, মুহাম্মাদ। প্রশ্ন হয়, আপনি কি তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছেন? বললেন, হাঁ। অতঃপর প্রথম আসমানের দ্বার খুলে দেয়া হয়। তাঁরা এর উপরে উঠে আসেন। নবীজী বলেন, ওখানে এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, যার ডানদিকে রূহের একটি ঝাঁক দেখা গেল, বামদিকেও তেমনি একটি ঝাঁক। ওই ব্যক্তি ডানদিকে তাকালে হাসেন আর বামদিকে তাকালে ক্রন্দন করেন। তিনি আমাকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেন, মারহাবা হে মহান পুত্র! মারহাবা হে মহান নবী। নবীজী জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? তিনি বললেন, তিনি আদম (আ.)। তাঁর ডান ও বামদিকে যাদের দেখলেন তারা তাঁর আওলাদ। ডানদিকে যারা তারা জান্নাতী; আর বামদিকে যারা, তারা দোযখী। আর তাই তিনি ডানদিকে তাকিয়ে হাসেন এবং বামদিকে তাকিয়ে কাঁদেন। (বুখারী : ৩৪৯)।
এরপর জিবরাইল (আ.) নবীজীকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের পানে ছুটলেন। সেখানে হযরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো।
তাঁরা উভয়ই নবীজীকে মারহাবা বলে দু’আ করলেন। সেখানে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সাথে মুলাকাত হলো। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গোটা রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেকটাই দান করেছিলেন। তিনিও নবীজীকে মারহাবা বলে উষ্ণ অভিবাদন জ্ঞাপন করলেন।
একই পদ্ধতিতে চতুর্থ আকাশে পৌঁছালে সেখানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। নবীজী বলেন, আমরা যখন সেখান থেকে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলাম, তখন হযরত মূসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয়। সেখান থেকে নবীজীকে সপ্তম আকাশে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে দেখলেন, তিনি বায়তুল মা’মুরে ঠেস দিয়ে উপবিষ্ট। বায়তুল মা’মুর সেই স্থান যেখানে প্রত্যহ এমন সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করার জন্য প্রবেশ করে, যাদের পালা এরপর আর কখনও আসে না।
হযরত ইব্রাহীম (আ.)ও নবীজীকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন। অতঃপর তিনি নবীজীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম বলুন এবং তাদেরকে অবগত করুন যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র, এর পানি সুমিষ্ট। জান্নাত হচ্ছে খুব পরিচ্ছন্ন ও সমতল। এর বৃক্ষ হচ্ছে : সুবহানাল্লাহ, ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলীয়্যুল আযীম। (তিরমিযী : ৩৪৬২)।
অতঃপর নবী কারীম (সা.)-কে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। পৃথিবী থেকে যে সকল বস্তু অথবা রূহ উপরে আরোহণ করে, সেগুলো এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তদ্রƒপ ঊর্ধ্বজগৎ থেকে নিম্নে আগমনকারী সব কিছু এখানে এসে থেমে যায়। অতঃপর, আল্লাহ নবীজীকে যা দিবার ছিল তা দিলেন। তিনি দিন-রাত্রিতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করলেন। ফিরে আসতে হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি নবীজীকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের উপর কী ফরয করেছেন?
নবীজী বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায। তিনি বললেন, আপনি মহান রবের কাছে ফিরে যান এবং আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। এতটুকু পালনের সাধ্য আপনার উম্মতের নেই। আমি তো বনী ইসরাঈলকে এর চেয়ে অনেক কম ফরয দিয়ে খুব পরীক্ষা করে দেখেছি। নবীজী ফের মহান রবের কাছে ফিরে গেলেন এবং বললেন, রাব্বুল আলামীন! আমার উম্মতের জন্য নামায আরও হ্রাস করুন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। ফিরে আসার সময় পঁয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাযের কথা হযরত মূসা (আ.)- কে জানালে তিনি বললেন, আপনার উম্মতের এতটুকু পালন করার সামর্থ্য নেই। অতএব আরও হ্রাস করার আবেদন করুন।
নবীজী বললেন, আমি এমনিভাবে বারবার আপন রব ও মূসা (আ.)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। আর প্রতিবারই পাঁচ-পাঁচ করে কমতে থাকল। অবশেষে আল্লাহপাক ইরশাদ করলেন, মুহাম্মাদ! দিবা-রাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই মাত্র। প্রত্যেক নামাযের জন্য দশ নামাযের সওয়াব, ফলে সেই পঞ্চাশ নামাযই হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি সৎকাজের ইচ্ছা করবে, এরপর তা আমলে পরিণত করবে না, তার জন্যও একটি নেকী লেখা হবে। আর যে ইচ্ছা করার পর আমলেও পরিণত করবে, সে দশটি নেকী পাবে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি মন্দ কর্মের কেবল ইচ্ছা করে, আমলে পরিণত করে না, তার কোনো গুনাহ লেখা হবে না। আর যদি আমলেও পরিণত করে তবে একটি মাত্র গুনাহ লিপিবদ্ধ হবে।
অবশেষে জান্নাত, জাহান্নাম ও সপ্তাকাশের দীর্ঘ সফর করে মহান মাওলার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে নবীজী ফিরে এলেন মক্কায়। নবীজী (সা.) এ পবিত্র রজনীতে মুসলমানদের জন্য তিনটি বিষয় হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে এসেছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ এবং পুরো উম্মতের মধ্যে শিরক থেকে আত্মরক্ষাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত ও ক্ষমার ঘোষণা। এ ছিল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য মিরাজের পুরস্কার। (মুসলিম : ২৭৯)। এ ছিল মিরাজুন্নবী (সা.)-এর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা