ঢাকা   সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিচারিক কাজে প্রয়োজন আদল ও ইনসাফ

Daily Inqilab এ.কে.এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম

ইসলাম বিচার বিভাগীয় কর্মকাণ্ডের সর্বত্র আদল ও ইনসাফের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত কর্তব্য বলে নির্দেশ করেছে। সুতরাং বিচার বিভাগীয় কর্মকাণ্ডে আদল ও ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু তাই নয়, লিখিত দলিল-দস্তাবেজের ক্ষেত্রেও তা একান্ত প্রয়োজনীয়।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনের ঘোষণা করা হয়েছে : ক. এবং তোমাদের চুক্তিপত্রগুলো যেন কোনো লেখক ইনসাফের সাথে লিখে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)। খ. তারপর যার জিম্মায় এ দায়িত্ব পড়বে, যদি সে স্বল্প বুদ্ধির হয়, কিংবা মা’জুর হয়, কিংবা নিজে উদ্দেশ্য পূরণে অপারগ হয়, তাহলে তার অভিভাবক যেন ইনসাফের সাথে চুক্তির ভাষা বলে দেয়। (সূরা বাকারাহ: রুকু ৩৯)।

বস্তুত, সাক্ষ্যদান এবং বিচার মীমাংসার সময় অধিকাংশ লোকের ঈমান টল টলায়মান হয়ে যায়। একদিকে অভিযোগ পেশকারী যদি স্বীয় আত্মীয়, প্রতিবেশী হয় অথবা এর প্রতি সাক্ষী কিংবা বিচারকের যদি শত্রুতা থাকে, তাহলে বিষয়টি আরও কঠিনরূপ ধারণ করে। কিন্তু ইসলামের নৈতিক শিক্ষা এ অবস্থায়ও আদল ও ইনসাফের সীমারেখা অতিক্রম করাকে বৈধতা দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. এবং (সাক্ষ্য দিতে হোক অথবা ফায়সালা করতে হোক) যখন কথা বলবে, তখন (বাদী ও বিবাদী পক্ষ) নিজের আত্মীয় পরিজন হলেও ইনসাফকে অগ্রাধিকার দিবে। (সূরা আনয়াম: রুকু ১৯)। খ. ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনের প্রতি প্ররোচিত না করে, তোমরা সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার অধিক নিকটতর।’ (সূরা মায়িদাহ: রুকু ২)।

এখানে প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে, পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত যেন তোমাদেরকে সুবিচার থেকে বিরত না রাখে। এবং দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে যে, কারও দুশমনী যেন তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিরত না রাখে। কেননা, সকল অবস্থায় আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে তাকওয়ার নিদর্শন।

বর্তমান সময়ের মতো, পূর্বেও ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন ছিল। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জবান মোবারক হতে অহীয়ে ইলাহীর এই বাণী ঘোষিত হয়েছে, ‘বল আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি এবং আমি তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি, আল্লাহপাকই আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক। আমাদের কর্ম আমাদের ওপর এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের ওপর বর্তাবে। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো বিবাদ-বিসম্বাদ নেই। আল্লাহই আমাদের একত্রিত করবেন এবং তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সূরা বাকারাহ: রুকু ২)।

এই আয়াতে কারীমায় যে আদল ও ইনসাফের কথা বলা হয়েছে, তার কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন- ১. যে সত্যতা আমার নিকট এসেছে তাকে আমি বারবার তোমাদের নিকট পৌঁছে দেব। ২. শুধু কেবল ধর্মীয় বিরোধিতার কারণে তোমাদের প্রতি বে-ইনসাফী করা যাবে না। বরং তাই করা হবে, যা আদল ও ইনসাফের পরিচায়ক।

৩. এতদিন পর্যন্ত তোমাদের মাঝে বিভিন্ন অভিযোগের ফায়সালায় যে দিকটি জারী আছে, বিত্তবান ও কুলীনদের প্রতি সমীহ ভাব পোষণ করা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা, আমার প্রতিপালক এমনটি করতে আমাকে নিষেধ করেছেন এবং ণ্ডকুম দিয়েছেন যে, আম ও খাস, আমীর ও গরিব সকলের সাথে একই রকম সমতাসুলভ ব্যবহার করবে। কেননা, আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপালক এক। আমরা সবাই তার বান্দাহ বা দাস। তাই, তার বান্দাহদের জন্য একই আইন হওয়া দরকার। আমরা এবং তোমরা সকলেই নিজ নিজ আমলের প্রতিফল ভোগ করব। এতে বিবাদ বিসম্বাদের কোনোই হেতু নেই। সকলকেই কিয়ামতের দিন তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যার কাজ তিনি পছন্দ করবেন তাকে পুরস্কৃত করবেন এবং যার কাজ মন্দ বলে বিবেচিত হবে, তাকে শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

উপরোক্ত আলোচনা ও আয়াতসমূহের আলোকে আদলের খেলাফ এক একটি চিহ্নকে মূল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে যে, ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে আদল ও ইনসাফের সহায়তা করা যেন সর্ববস্থায় তোমাদের মূল উদ্দেশ্য হয়।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

করযে হাসানা : কিছু নির্দেশনা-১
ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
আরও

আরও পড়ুন

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা