ইতিকাফ : আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহিমান্বিত ইবাদত-২
৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ইতিকাফ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি ইবাদত। যার ফায়েদা ও প্রভাব মানুষের মন ও মননে এবং জীবন ও জগতে অনেক গভীর হয়ে থাকে। ইতিকাফের উদ্দেশ্যে মানুষ যেহেতু আল্লাহর ঘর মসজিদে আসে, সেজন্য মানবীয় সাধ্যের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত। মনে রাখা উচিত, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পূত-পবিত্র। আল্লাহর ঘর সর্বোচ্চ সম্মানিত ও পবিত্রতম স্থান। তাই প্রথমে নিজের বাহ্যিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা গ্রহণ করা উচিত। স্মরণ করা উচিত কুরআন মাজীদের নিম্নোক্ত আয়াত : হে আদম-সন্তানেরা! যখনই তোমরা কোনো মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের শোভা অবলম্বন করবে (অর্থাৎ পোশাক পরে নেবে)। (সূরা আ’রাফ : ৩১)।
এই আয়াতে পোশাক পরে তাওয়াফ ও নামায আদায়ের নির্দেশ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে উত্তম পোশাক পরার কথাও। যে পোশাক পবিত্র ও সুন্দর এবং ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে শোভাবর্ধনকারী। (দ্র. তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৩/৪০৫)। পাশাপাশি নিজের অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতিও দৃষ্টি দেয়া কাম্য। কেননা অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা ছাড়া বাহ্যিক পবিত্রতা থেকে কাক্সিক্ষত ফায়েদা লাভ করা যায় না। সেদিকেও ইশারা করা হয়েছে একটি আয়াতে : হে আদম-সন্তানেরা! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং (ব্যবস্থা করেছি) সাজ-সজ্জার বস্তু। তবে তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম। (সূরা আরাফ : ২৬)।
মোটকথা, আল্লাহর ঘরে হাজির হওয়ার আগে প্রথম কাজ হল, সার্বিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন করা। তওবার মাধ্যমে নিজের অতীত গোনাহ ক্ষমা করিয়ে নেয়া এবং আল্লাহর ঘরের আদব রক্ষা করে থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং কায়মনোবাক্যে দুআ করা। এরপর নির্দিষ্ট সময় অবস্থানের জন্য যতটুকু সামানা না হলেই নয়, সেটুকু নিয়ে আসা। কোনো সামানাপত্রের বিষয়ে যেন অন্যের মুখাপেক্ষী হতে না হয়- সেই দিকটিও খেয়াল রাখা। সেইসাথে ইবাদতের চিন্তা ও মানসিকতা ধারণ করা। ধ্যান ও মনকে আল্লাহ-অভিমুখী করা এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তকে জাগরূক করা।
মসজিদ আল্লাহর ঘর। এ ঘরের মর্যাদা দুনিয়ার সকল ঘর থেকে বেশি। এ জায়গার সম্মান অন্য সকল জায়গার চেয়ে অধিক। হাদিস শরীফে এসেছে : আল্লাহ তাআলার কাছে সবচাইতে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ। সবচাইতে অপ্রিয় জায়গা বাজার। (সহীহ মুসলিম : ৬৭১)। ইতিকাফের সময় মানুষ যেহেতু এই পবিত্র মর্যাদাপূর্ণ স্থানেই অবস্থান করে, তাই এ ঘরের সম্মান ও মর্যাদার কথা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখা উচিত। হাদিস শরীফে মসজিদকে পবিত্র রাখার বিষয়েও জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ : ৪৫৫)। তাই নিজের কারণে যেন মসজিদে কোনো অপবিত্রতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সযত্ন খেয়াল রাখা।
ইতিকাফের সময় বান্দা যেহেতু মসজিদে থাকে, তাই মসজিদের যাবতীয় আদব রক্ষা করে থাকা উচিত। পুরো সময় সতর্কতার সাথে থাকা উচিত, যেন কোনো ধরনের কোনো গোনাহ না হয়। এছাড়াও নিম্নোক্ত আমলগুলোর ব্যাপারে খেয়াল রাখা। মসজিদের প্রধান আমল হলো, জামাতের সাথে ফরয নামায আদায় করা। তাই সর্বোচ্চ গুরুতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাকবীরে উলার সাথে আদায় করা।
ইতিকাফের সময় মানুষ যেহেতু দুনিয়াবি সকল কাজ কর্ম থেকে বিরত থাকে। তাই খুশু-খুযূর সাথে নামায আদায়ের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এসময় থেকেই খুশু-খুযূকে অভ্যাসে পরিণত করা। রমযান মাসে প্রতিটি আমলের আজর ও সওয়াব অন্য সকল সময়ের চেয়ে বেশি। সেজন্য অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের চেষ্টা করা। পুরো সময় কোনো না কোনো ইবাদতে মগ্ন থাকা। তবে অন্যের ইবাদত বা ঘুম-বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে, এমন উদ্যোগ পরিহার করা।
কারো সাথে কোনো কটু কথা না বলা। ঝগড়া-তর্ক তো সব সময়ই মন্দ কাজ। মসজিদে, রমযান মাসে এবং ইতিকাফরত অবস্থায় সেটা আরো মন্দ কাজ। অতএব সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা। অধিক পরিমাণে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। সালাফে সালিহীনের রমযান-কেন্দ্রিক কুরআন তিলাওয়াতের ঘটনাগুলো স্মরণ করা। সে অনুযায়ী বেশি থেকে বেশি কুরআন খতমের চেষ্টা করা। (যাদের পক্ষে সম্ভব) অর্থ মর্ম খেয়াল করে করেই তিলাওয়াত করা। অন্তত কিছু সময় তিলাওয়াতকৃত আয়াতের তরজমা, তাফসীর খেয়াল করে করে পড়া।
নফল নামাযের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া। কিছু নফল নামায তো বিভিন্ন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট। যেমন তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, যাওয়াল, আওয়াবীন ইত্যাদি। সাধারণ সময়ে নানা কর্মব্যস্ততার দরুন নিয়মিত এ নামাযগুলো আদায় করা হয় না। ইতিকাফের দিনগুলোতে যেন এর কোনোটি না ছোটে সে ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া।
ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে অবস্থানই একটি স্বতন্ত্র নেক আমল। অতএব তিলাওয়াত, যিকির ও অন্যান্য আমলে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা কিংবা কিছুক্ষণ শুধু নীরবতাও অবলম্বন করা যায়। অনর্থক গল্প-কথাবার্তার চেয়ে সেটিই বেশি উত্তম।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই মহিমান্বিত আমলে শরীক হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমাদের ইতিকাফকে কবুল করুন এবং তাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ওসীলা করুন। ইতিকাফের মাধ্যমে আমাদের ঈমান, আমল ও ইবাদতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাজানো আগুনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা
নাটকীয়তার পর সিটিই চ্যাম্পিয়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সমালোচনার ঝড়
এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বনানী সেলস অফিস উদ্বোধন করলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী ‘বিধ্বস্ত’ হেলিকপ্টারের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ হয়েছে
'ভুয়া তথ্য' ছড়িয়ে বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
এখনও নিখোঁজ ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীনে নতুন রুট চালু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনগুলো
বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা
কুমিল্লায় ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড, সাতজনের যাবজ্জীবন
জাতীয় এসএমই মেলায় সোনালী ব্যাংকের অংশগ্রহণ
বঙ্গবন্ধু কন্যার লড়াইয়ের গল্প গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই হোক অঙ্গীকার : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ
এখন প্রতি সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত সেভিংস খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপে
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি’র কৃষি সহায়তা প্রকল্প
কুমিল্লায় উপজেলা নির্বাচনে এমপির ভূমিকায় ভোটের পরিবেশ বিঘ্নিতের আশঙ্কা
শীঘ্রই বাজারে আসছে টেকনো ক্যামন ৩০ সিরিজের ফোন
মাঝে মাঝে তার নম্বর খোলা পাওয়া যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে : ডিবি প্রধান
এমপি আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি খুলছেন আবার বন্ধ করছেন: ডিবি
লুটপাট করে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আ'লীগ: প্রিন্স