সদাকায়ে ফিতর : পরিমাণ কত ও কী দিয়ে আদায় করব-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৪ এএম

গত আলোচনায় হাদিস থেকে সদাকায়ে ফিতরের আলোচনা করা হয়েছিল। এবার দেখা যাক মাজহাবের ইমামগণ উত্তম সদাকায়ে ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন।

উত্তম সদাকায়ে ফিতর : ইমাম শাফেয়ীর মতে, উত্তম হলো হাদিসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদাকা দেয়া। অন্যান্য ইমামের মতও এমনই। ইমাম মালিক রহ.-এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দেয়া উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১৩০০-১৪০০ টাকা প্রতি কেজি। ইমাম আহমদ রহ.-এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। (আল-মুগনী ৪/২১৯; আওজাযুল মাসালিক ৬/১২৮)।

ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর নিকটও অধিক মূল্যের দ্রব্যে ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দিয়ে আদায় করলে গরিবের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে মদিনায় গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীকালে হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।
হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদাকায়ে ফিতরের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হতো। (আল-ইসতিযকার : ৯/৩৫৫)। ইবনুল মুনযির বলেন, সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হলো তখন তারা আধা ‘সা’ গমকে এক ‘সা’ যবের সমতুল্য গণ্য করলেন। (ফাতহুল মুলহিম : ৩/১৫; আওজাযুল মাসালিক : ৬/১৩)।

তাহলে বোঝা গেল যে, হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে গম দিয়ে সদাকায়ে ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হলো, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে ওমর (রা.) সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দিয়েই সদাকায়ে ফিতর আদায় করতেন। তখন তাকে আবু মিজলায রাহ. বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদাকা করার, তবু কেন খেজুর দিয়ে তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দিয়ে এ জন্যই সদাকায়ে ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদিসে পাঁচ প্রকারের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সব শ্রেণির জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দিয়ে সদাকায়ে ফিতর আদায় করা কি করে সমীচীন হতে পারে?

বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সব শ্রেণির লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ১১০-১১৫ টাকা করে। মনে হয় সবাই ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যের)।
সুতরাং আমরা এদেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিশমিশ, খেজুর কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধনী শ্রেণির মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিশমিশের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়।

যেখানে রমজানে ইফতার পার্টির নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদিসের ওপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নাত জিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। সর্বোপরি এ দুঃসময়ে মানুষ কিছু দান অতিরিক্ত পাবে। গরিব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে।

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুই ঘন্টায় ভোট প্রদানের হার ১.৪৭

দুই ঘন্টায় ভোট প্রদানের হার ১.৪৭

৬ষ্ঠ প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

৬ষ্ঠ প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

হাকিমপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা ছুটছেন ভোট কেন্দ্রে

হাকিমপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা ছুটছেন ভোট কেন্দ্রে

কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম

কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম

ফুলপুরে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে ফেরার পথে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউএনও আহত

ফুলপুরে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে ফেরার পথে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউএনও আহত

টাঙ্গাইলে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে

টাঙ্গাইলে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে

মাগুরায় উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু

মাগুরায় উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু

রাগ হার্ট অ্যাটাকের কারণ, উঠে এল গবেষণায়

রাগ হার্ট অ্যাটাকের কারণ, উঠে এল গবেষণায়

নর্দার্ন হোয়াইট গন্ডারদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা

নর্দার্ন হোয়াইট গন্ডারদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী দুই যুবক নিহত

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী দুই যুবক নিহত

বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টির মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোট চলছে

বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টির মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোট চলছে

ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইউরোপে জিনপিং, কোন অঙ্ক কষছে বেইজিং?

ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইউরোপে জিনপিং, কোন অঙ্ক কষছে বেইজিং?

ভোট কিনতে গিয়ে এমপিপুত্রের শ্বশুরসহ আটক ৪

ভোট কিনতে গিয়ে এমপিপুত্রের শ্বশুরসহ আটক ৪

নিখোঁজ রিধীর লাশ উদ্ধার

নিখোঁজ রিধীর লাশ উদ্ধার

বাজার থেকে সব করোনা টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

বাজার থেকে সব করোনা টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুতল ভবনধস, এখনো নিখোঁজ ৪৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুতল ভবনধস, এখনো নিখোঁজ ৪৮

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

১৩৯ উপজেলায় ভোট চলছে

১৩৯ উপজেলায় ভোট চলছে

ফেনীতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সেই টিকটকার তরুণীর ধর্ষণ মামলা

ফেনীতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সেই টিকটকার তরুণীর ধর্ষণ মামলা

চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে হাসপাতালের মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যা মার্কিন স্বামীর

চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে হাসপাতালের মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যা মার্কিন স্বামীর