কৃপণতা : সফলতা আর সমৃদ্ধির জন্য এ বাধা দূর করতেই হবে-১
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৮ এএম
আদমসন্তানকে পদে পদে বিভ্রান্ত করার যে প্রতিজ্ঞা শয়তান করেছিল, এর বাস্তবায়ন হিসেবেই নানান সময় নানানভাবে সে মানুষকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে। আল্লাহর পথ থেকে তাকে সরিয়ে দিতে শয়তানের চক্রান্তের কোনো অন্ত নেই। সুন্দরকে অসুন্দর আর অসুন্দরকে সুন্দর হিসেবে তুলে ধরতে সে সদা সচেষ্ট। এমন একটি চক্রান্তের বিষয়েই পবিত্র কুরআনে এভাবে সতর্ক করা হয়েছে : শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় এবং তোমাদেরকে কার্পণ্যের আদেশ করে। অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : ২৬৮)।
মহান প্রভুর এ বাণীর মর্ম তো খুবই সরল। আল্লাহ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন- সম্পদ ব্যয় করলে তিনি অনুগ্রহ করে সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন। এর বিপরীতে শয়তানের সতর্কবার্তা- সম্পদ যদি ব্যয় করে ফেল তাহলে তো গরিব হয়ে পড়বে, তাই নিজ সম্পদকে আঁকড়ে ধর, কৃপণতা অবলম্বন কর! কথাটি এভাবেও বলা যায়- কৃপণতা হচ্ছে শয়তানের একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে সে মানুষকে সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
নানা প্রয়োজনেই আমাদের সম্পদ ব্যয় করতে হয়। কখনো নিরেট ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মেটাতে আমরা সম্পদ ব্যয় করি। কখনোবা সামাজিক প্রয়োজন মেটাই। সমাজবদ্ধভাবে চলতে গিয়ে সমাজের নানা চাহিদা আর প্রয়োজনও পূরণ করতে হয়। সম্পদ ব্যয় করতে হয় কোনো কোনো ধর্মীয় বিধানের ক্ষেত্রেও। এক্ষেত্রে কখনো তো সম্পদ ব্যয় করাটাই হয় মুখ্য।
যেমন, যাকাত, সদাকাতুল ফিতর ইত্যাদি। আবার কখনো কোনো একটি ধর্মীয় বিধান পালন করতে গিয়ে আমাদের সম্পদ ব্যয় করতে হয়। টাকাপয়সা খরচ করে মক্কা মুকাররমায় গিয়ে হজ্ব পালন করতে হয়, কুরবানীর পশু কিনে কুরবানী আদায় করতে হয়। এভাবে সম্পদ ব্যয় কখনো হয় প্রয়োজনে, কখনো ইবাদত হিসেবে। আবার ব্যক্তিগত কিংবা দুনিয়াবি প্রয়োজনের তাগিদে যখন আমরা সম্পদ ব্যয় করি, নিয়তের বিশুদ্ধতায় তাও পুণ্য বয়ে আনতে পারে। মুমিনের সম্পদ ব্যয় কেমন হবে তার একটা সারগর্ভ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পাক কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা তো কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যেই (সম্পদ) ব্যয় করে থাক। আর যে সম্পদই তোমরা ব্যয় কর তোমাদেরকে তার প্রতিফল পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা : ২৭২)।
এ তো হলো সম্পদ ব্যয়ের নির্দেশনা। কিন্তু সম্পদ ব্যয় করতে গেলে যে কার্পণ্য নামক একটা অদৃশ্য বাধা সামনে এসে দাঁড়ায়, পবিত্র কুরআনে তাও বলা হয়েছে : এবং মানুষ লোভহেতু স্বভাবত কৃপণ। (সূরা নিসা : ১২৮)। এ কার্পণ্য মানুষের স্বভাবজাত। সম্পদ ব্যয়ের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে ক্ষমা ও দয়ার ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে স্বভাবজাত এ কৃপণতাকে জয় করতে হবে। নিজের প্রয়োজনে, অন্যের প্রয়োজনে এবং ইবাদতের জন্যে, সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের লক্ষ্যে মুমিনকে নিজ উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করে যেতে হবে। পরম করুণাময়ের এ সন্তুষ্টি ছাড়া আর মুমিনের চাওয়া-পাওয়ার কী আছে?
পবিত্র কুরআনে তিনি কতটা সরলভাবে সম্পদ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন লক্ষ্য করুন : হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা ব্যয় কর সেই দিন আসার পূর্বে, যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না। আর কাফেররাই জালেম। (সূরা বাকারা : ২৫৪)। সম্পদ যা কিছু আমাদের হাতে আছে তার সবই তো আল্লাহর দান। কোনো মুমিনই তা অস্বীকার করতে পারে না। এ আয়াতেও আল্লাহ তাআলা সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন : ‘আনফিক্বু মিম্মা রাযাক্বনাকুম’ অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো।
সম্পদ যখন আল্লাহ দিয়েছেন, তা ব্যয়ের নির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। কতটুকু ব্যয় করতে হবে, কতটুকু সঞ্চয় করতে হবে তার নির্দেশনাও দিয়েছেন এ পাক কুরআনেই। পড়ুন : তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৯)। অর্থাৎ সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্র যখন সামনে আসে তখন হাত পুরোপুরি গুটিয়েও রাখা যাবে না, আবার যত সম্পদ আছে তার সবই দান করে দেয়া যাবে না।
প্রয়োজনীয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে কার্পণ্যও করা যাবে না, অপ্রয়োজনে ব্যয় করে সম্পদের অপচয়ও করা যাবে না। স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা-অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে : যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। (সূরা ফুরকান : ৬৭)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই