ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কৃপণতা : সফলতা আর সমৃদ্ধির জন্য এ বাধা দূর করতেই হবে-৩

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

কার্পণ্য যেমনই হোক, যে স্তরেরই হোক, তা নিন্দনীয়। স্তরভেদে নির্ণীত হবে তার নিন্দার পরিমাণ। এ নিন্দা সমাজের মানুষের চোখেও, শরীয়তের দৃষ্টিতেও। নিরেট দুনিয়াবি বিষয়ে কার্পণ্যকেও শরীয়ত পছন্দ করে না। যার যেখানে যতটুকু ব্যয় করা দায়িত্ব, তা তো করতেই হবে। যাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব, তা করতে হবে। এমনকি এ দায়িত্বের বাইরেও ব্যক্তিগত ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যে প্রয়োজনগুলো সামনে এসে হাজির হয় সেগুলোও সাধ্যমতো পূরণ করতে হবে।

নিজের, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্যে সাধ্যমতো কিছুটা আরামের ব্যবস্থা করা, তাদের জন্যে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা, নিজের অবস্থানুসারে গায়ের জামাটাও একটু ভালো হওয়া- এগুলো শরীয়ত অপছন্দ করে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে শরীয়তের নির্দেশনা এমনই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : অবশ্যই আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহের নিদর্শন দেখতে ভালোবাসেন। (জামে তিরমিযী : ২৮১৯)।

তবে কথা হলো, সম্পদ ব্যয় করার আগে একটু ভেবে নিতে হবে- ব্যয়ের এ খাত শরীয়তের দৃষ্টিতে কাক্সিক্ষত কিংবা সমর্থিত কি না। শরীয়ত যেখানে অনুমোদন করে না, সমাজের নিন্দার চোখেও সেখানে সম্পদ ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান করে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যে ভালোবাসে আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যে ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্যেই যে বিয়ে দেয়, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল। (জামে তিরমিযী : ২৫২১)।

কোনো অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিপদগ্রস্তকে সহায়তা করা- এসব তো ধর্ম ও সমাজ উভয় দৃষ্টিতেই পরম কাক্সিক্ষত বিষয়। এখানে যে পিছিয়ে থাকে, নিন্দার তীরে সে আক্রান্ত হবেই। অসুস্থকে যে সেবা করে না, অভাবীকে যে সাহায্য করে না, তার জন্যে কতটা ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে, খুবই পরিচিত একটি হাদিস। হাদিসের ভাষায় তা পড়ুন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। সে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি যে বিশ্বজগতের প্রভু! তিনি বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল আর তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে?

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি কী করে আপনাকে খাওয়াব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন! তিনি বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তখন তুমি তাকে খেতে দাওনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে তা আমার কাছে পেতে?

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! কীভাবে আমি আপনাকে পানি পান করাব, আপনি তো সারা জাহানের প্রভু! তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে, তা আমার কাছে পেতে। (সহীহ মুসলিম : ২৫৬৯)।

আসলে আমরা ভয় পাই দারিদ্র্যকে। এ ভয় থেকেই আঁকড়ে থাকি আমাদের উপার্জিত সব সম্পদ। নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা, সন্তানের ভবিষ্যত-চিন্তা ইত্যাদি আমাদেরকে সম্পদ ব্যয়ে নিরুৎসাহিত করে। অথচ হাদিস শরীফে উচ্চারিত হয়েছে একইসঙ্গে সুসংবাদ ও সতর্কবার্তা। একটি-যে সম্পদ ব্যয় করে তার জন্য, আরেকটি-যে সম্পদ জমিয়ে রাখে তার জন্য। লক্ষ্য করুন : প্রতিদিন সকালেই দুইজন ফেরেশতা নেমে আসে। তাদের একজন দুআ করে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ ব্যয় করে তাকে আপনি এর বদলা দান করুন। অপরজন বলে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ জমিয়ে রাখে তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী : ১৪৪২)।

বোঝা যাচ্ছে, শুধু পরকাল নয়, দুনিয়ার জীবনের সমৃদ্ধির জন্যেও কার্পণ্যের এ দেয়াল টপকাতেই হবে। মুমিনের সফলতার জন্য এর বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা : অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদেরকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর : ৯)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
আরও

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে