যে যত দুনিয়ামুখী, সে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে তত দূরে
২৯ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৯ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
সূরা তাকাসুরে ইরশাদ হয়েছে : (পার্থিব ভোগসামগ্রীতে) একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ। কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। আবারো (শোন), কিছুতেই এরূপ সমীচীন নয়। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। কখনও নয়। তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের সাথে যদি একথা জানতে (তবে এরূপ করতে না)। তোমরা জাহান্নাম অবশ্যই দেখবে। তোমরা অবশ্যই তা দেখবে চাক্ষুস প্রত্যয়ে। অতঃপর সেদিন তোমাদেরকে নিআমতরাজি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে (যে, তোমরা তার কী হক আদায় করেছ?) (সূরা তাকাসুর : ১-৮)।
এ সূরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের একটি মন্দ স্বভাবের কথা উল্লেখ করে সে সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। সূরার শুরুতে ইরশাদ করেছেন : ‘(পার্থিব ভোগসামগ্রীতে) একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টা তোমাদেরকে উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরস্থানে পৌঁছ।’ এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষের লোভ ও ভোগবাদী স্বভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। এ স্বভাব মানুষকে প্রতিনিয়ত প্ররোচিত করতে থাকে ইহজাগতিকতায় অন্যের চেয়ে এগিয়ে যেতে। অন্যের চেয়ে ভালো পোশাক পরতে, ভালো খাবার খেতে, অন্যের বাসস্থানের চেয়ে ভালো বাসস্থানে বসবাস করতে। একে একে নিজের জাগতিক সবকিছু যেন অন্যের চেয়ে ভালো হয়। ফলে কোনো ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে খারাপ থাকলে দুঃখ লাগে। মনে অতৃপ্তি দানা বাঁধে। তা লাভ করার লালসা জন্ম নেয়।
আবার কোনো ক্ষেত্রে অন্যের চেয়ে এগিয়ে গেলে সুখবোধ হয়। অব্যহত এগিয়ে থাকার প্রতিযোগী মানসিকতা জেগে ওঠে। এভাবে মানুষের ভোগবাদী স্বভাব দুনিয়ামুখিতায় মানুষকে একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রাখে। এ মানসিকতা ধীরে ধীরে মানুষকে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বিমুখ করে ফেলে। তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? তার গন্তব্য কোথায়? তার করণীয় কী এবং সাফল্য লাভের কী উপায়Ñ এ ব্যাপারে সে উদাসীন হয়ে যায়। যে যতো বেশি দুনিয়ামুখী হয়, সে তার প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গন্তব্য থেকে ততো বেশি দূরে সরে যায়।
অথচ দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। পরকালের তুলনায় এ জীবন এক মুহূর্তেরও নয়। এ সামান্য সময়ের জন্য কী ব্যাপক আয়োজন, কী বিপুল সমারোহ। তবুও সম্পদের চাহিদা মানুষের কখনোই শেষ হয় না, সে তৃপ্ত হতে পারে না। আর যতটুকু সম্পদ অর্জন করে, তা থেকেও খুব অল্পই ভোগ করতে পারে। বস্তুত মানুষের নিজের সম্পদ কেবল এতটুকু, যতোটা সে ভোগ করে যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রা.) থেকে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে গেলেন, তখন নবীজী (সা.) এ সূরাটি অর্থাৎ সূরা তাকাসুর তিলাওয়াত করছিলেন।
নবীজী বললেন : আদম-সন্তান বলে, আমার ধন, আমার সম্পদ। অথচ তুমি যা দান-সদকা করে (পরকালের জন্য) জমা করেছ, যা কিছু খেয়ে শেষ করেছ, যে কাপড় পরে পুরোনো করে ফেলেছ, তাছাড়া আর কোনো কিছুই তোমার নয়। (জামে তিরমিযী : ৩৩৫৪)। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আদম সন্তানের যদি এক উপত্যকা ভর্তি সম্পদ থাকে, তাহলে সে দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ চাইবে। মাটি ছাড়া আর কোনো কিছু তার মুখ ভরতে পারবে না। আর যে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। (সহীহ বুখারী : ৬)।
কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন স্থানে পার্থিব সামগ্রী সৃষ্টির কারণ বর্ণনা করে দিয়ে মানুষকে ভোগ-বিলাসী স্বভাব থেকে সতর্ক করেছেন। বহু আয়াতে নানান দৃষ্টিকোণ থেকে ইহজগৎ, তার স্বরূপ ও তা সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং এ সম্পর্কে মানুষের করণীয় ব্যক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)ও হাদিস শরীফে আমাদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু তবুও এ ব্যাপারে বহু মানুষের স্বভাব ও আচরণ হল, তারা পার্থিব সকল ক্ষেত্রে আধিক্য লাভের চেষ্টায় মত্ত ও সাফল্য পেতে মুখিয়ে থাকে। এ লোভ ও লালসা মৃত্যু পর্যন্ত তাদের পিছু ছাড়ে না। আল্লাহ তাআলা সে কথাই এ সূরার শুরুতে উল্লেখ করেছেন।
অন্যত্র সূরা আ‘লাতে ইরশাদ হয়েছে : কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখেরাত কত বেশি উৎকৃষ্ট ও কত বেশি স্থায়ী। (সূরা আ‘লা : ১৬-১৭।)। এ মন্দ স্বভাবকে দমন ও বর্জন করে এ ক্ষেত্রে সকলেরই কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা ধারণ করা এবং মেনে চলা আবশ্যক। তাহলে দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও সহজ হবে এবং আখেরাতে সফলতা লাভ হবে। জাগতিক ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশনা হলো, দৃষ্টিকে অবনমিত রাখা।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কেউ যদি সম্পদ ও শারীরিক ক্ষেত্রে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কাউকে দেখে, তাহলে সে যেন তার চেয়ে নিম্নস্তরের কারো দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। (সহীহ বুখারী : ৬৪৯০)। নিজের চেয়ে ধনীর দিকে না তাকিয়ে দরিদ্রদের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে কত অযুত লক্ষ মানুষ থেকে ভালো রেখেছেন। কতশত নিআমত দান করেছেন। তখন কৃতজ্ঞ মনোভাব জেগে উঠবে এবং হৃদয় প্রশান্ত থাকবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু