হজ : সবরের পাঠশালা-২
০২ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৪, ১২:০২ এএম
ঝগড়া না করার নির্দেশ ইসলামে সবসময়ের। তবে হজ্বের সময় এ নির্দেশটি আরো গুরুত্বের সাথে দেয়া হয়েছে। কারণ হজ্বের সময় ঝগড়া-বিবাদের অনেক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটা কুরআন মাজিদের এক অনুপম উপস্থাপন-রীতি। যে জিনিসের বেশি প্রয়োজন কুরআন মাজিদ তা বিশেষভাবে উল্লেখ করে। মাতা-পিতা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন কুরআন মাজিদ তাদের সাথে নম্র আচরণের কথা বলেছে। ইরশাদ হয়েছে : মাতা-পিতা উভয়ে অথবা তাদের কোনো একজন যদি তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয় তখন তাদেরকে সামান্যতম কষ্টদায়ক কথাও বলো না। তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে উত্তম ও নম্র কথা বলো। (সূরা বানী ইসরাইল : ২৩)।
এই যে পিতা-মাতার সাথে নম্র আচরণ করার, তাদেরকে ধমক না দেয়ারও তাদের সামনে বিরক্তি প্রকাশ না করার বিধান এ কি শুধু পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলেই প্রযোজ্য, না সব সময়ের জন্যে প্রযোজ্য? অবশ্যই সব সময়ের জন্যে প্রযোজ্য। কিন্তু মাতা-পিতার সাথে সমত্মানের দুর্ব্যবহারের আশঙ্কা বেশি হয়ে থাকে তাদের বার্ধক্যের সময়। তাই এ অবস্থায় যেন সন্তান মা-বাবাকে কষ্ট না দেয় সে জন্যে কুরআন বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে।
হজ্বের মধ্যে ঝগড়া না করার নির্দেশের বিষয়টিও তেমনি। কারণ হজ্বের সফরে এমন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকে যাতে ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক। এ জন্যে কুরআন মাজিদ হজ্বের সফরে ঝগড়া থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ বিশেষভাবে দিয়েছে। তুমি তো আল্লাহর ঘরের মেহমান। তুমি বাইতুল্লাহর মুসাফির। আল্লাহর ঘরের মেহমানের জন্যে কি সাজে কারো সাথে ঝগড়া করা? যদি কোনো মুসলিম কুরআনের এ নির্দেশ পালন করার জন্যে প্রতিজ্ঞা করে, আমাকে যতো কষ্ট দেয়া হোক, আমার সাথে যতো দুর্ব্যবহারই করা হোক, আমার সাথে যতো ওয়াদাখেলাফি করা হোক-কুরআন যখন বলেছে, হজ্বের মধ্যে কোনো ঝগড়া নেই সুতরাং আমি কারো সাথে ঝগড়া করব না।
যদি কোনো মুসলিম এ প্রতিজ্ঞা করে তাহলে হজ্বের মাধ্যমে যে ধৈর্য ও সহনশীলতা এবং সবর ও সংযমের গুণ তার অর্জিত হবে তার কি কোনো তুলনা হতে পারে? কুরআন এভাবেই আমাদেরকে নম্র-ভদ্র ও সুশীল করে গড়ে তুলতে চায়। আমরা চাইলে কুরআন থেকে সুন্দর আখলাক ও মহৎ চরিত্রের শিক্ষা লাভ করতে পারি।
হজ্বের সফরের আরেক অনুষঙ্গ হচ্ছে আল্লাহর মুহব্বত নিয়ে সফর করা। এখন তো সফর অনেক সহজ হয়ে গেছে। আগের যুগে সফর অনেক কঠিন ছিল। পথ অনেক দীর্ঘ ও দুর্গম ছিল। মানুষ এক মাস দু’ মাস তিন মাসের পথ পাড়ি দিয়ে আসত বায়তুল্লাহর যিয়ারতের জন্যে। একমাত্র আল্লাহ তাআলার মুহব্বত ও ভালোবাসা তাদেরকে এতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে উদ্ব্দ্ধু করত। তো আমরাও যখন সফর করব তখন আল্লাহর মুহাব্বত ও ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি সমর্পণ ও উৎসর্গের প্রেরণা নিয়ে সফর করব। তাহলে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। তাআল্লুক মাআল্লাহর মতো সম্পদ লাভ করতে পারব।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘এক ওমরা থেকে অন্য ওমরা মাঝের গুনাহসমূহের জন্যে কাফফারা স্বরূপ আর ‘হজ্বেব মাবরুর’-এর একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (সহীহ বুখারী : ১৩৪৯)। যার হজ্ব মাকবুল হবে আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাতের ফায়সালা করে রেখেছেন। অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা হজ¦ ও ওমরা বারবার কর। কারণ ওমরা ও হজ্বের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পাপ ও দারিদ্র্য এমনভাবে দূর করে দেন যেমনভাবে হাপর লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
অনেকে ভয় করে, এতো টাকা খরচ হবে! অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যে যদি কেউ এ খরচ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ধনসম্পদে এতো বরকত দান করবেন যে, তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে। অনেকে ভয় পায়, হজ্ব করলে তো আর গোনাহ করা যাবে না। হজ্ব করলে তো দাড়ি কাটা যাবে না। অথচ আমার এখন দাড়ি রাখার বয়স হয়নি! যেন হজ্ব করার আগ পর্যন্ত গোনাহ করা জায়েয! দাড়ি কাটা জায়েয!! (নাউযুবিল্লাহ) এগুলো শয়তানের ধোঁকা।
হজ্ব থেকে আসার পর আল্লাহ যদি গোনাহ থেকে বাঁচার তাওফীক দান করেন তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা আছে গোনাহ থেকে বাঁচতে! মৃত্যু কখন এসে যায়, মালাকুল মউত কখন হাজির হয়ে যায় তা কি কেউ বলতে পারে? কারো উপর যদি হজ্ব ফরয হয় আর সে হজ্ব না করে তাহলে তার জন্যে এটা অনেক বড় আশঙ্কার বিষয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : যার হজ্ব করার সামর্থ্য আছে তার জন্যে বায়তুল্লাহর হজ্ব করা অপরিহার্য, ফরয। যারা কুফরী করে মনে রেখ , আল্লাহ তাআলা জগতবাসী থেকে বেনিয়ায, অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।
এখানে ‘কাফারা’ শব্দের ব্যবহার অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। এটা হলো কর্মগত কুফরী। সামর্থ্য থাকার পরও হজ্ব না করা আল্লাহপাকের এমন অবাধ্যতা যাকে আল্লাহ কুফরী শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৭ বছর পর ফিফার বর্ষসেরা একাদশে নেই মেসি
ফের ফিফার বর্ষসেরা গোলরক্ষক মার্তিনেজ
ফিফার বর্ষসেরা ভিনিসিয়ুস
আইয়ুব-সালমানের রেকর্ড জুটিতে জয় দিয়ে শুরু পাকিস্তানের
পঞ্চদশ সংশোধনী রায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একধাপ অগ্রগতি
বন্দরে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস পালন
নির্বাচিত সরকারই সংসদে পরিপূর্ণ সংস্কার করবে : আমীর খসরু
সাংবাদিক সামাদের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
টানা তৃতীয়বার সিডিপির সদস্য হলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ছিনতাইকারীর কবলে সোনারগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি
খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ পাবে মৌলিক অধিকার
সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে ইইউ’র পূর্ণ সমর্থন রয়েছে
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ও জাহাঙ্গীর-তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রেল যাত্রীদের ভোগান্তি
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি কমেছে, বেড়েছে ভিয়েতনাম-ভারত থেকে
বাংলাদেশে অংশীদারিত্বে বড় সম্ভাবনা দেখছি সুইডেনের : নিকোলাস উইকস
এশীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে
স্টিভ ব্যাননের দাবি : ট্রাম্প তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবেন
‘সমগ্র বিশ্ব রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে রয়েছে’ : রাশিয়ার পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিহত