কুরবানি ও কুরবানির তাৎপর্য : ইবাদত সম্পর্কে বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়
১১ জুন ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ১২:০৬ এএম
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। তাই এতে আকাইদ, ইবাদত, মুয়ামালাত, মুআশারাত, আখলাক ইত্যাদি সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি বিষয়েরই আলাদা গুরুত্ব আছে। ইসলামের কোনো অংশকেই গুরুত্বহীন মনে করার অবকাশ নেই। পূর্ণাঙ্গতার পাশাপাশি ইসলামের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যথার্থতা। কেননা, ইসলামই হলো আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা প্রদান করেছেন। তাই এর সকল বিধান মানবজাতির সকল শ্রেণীর জন্য পূর্ণ কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোত্তম বান্দাদের মাধ্যমে এই দ্বীনকে সংরক্ষণ করেছেন।
আকাইদ ও ইবাদত থেকে শুরু করে মুআশারাত ও সিয়াসাত পর্যন্ত ইসলামের সকল নির্দেশনা শক্তিশালী ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। একজন মুমিনের জন্য এই দুটি বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করা অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক মুসলমান ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও পূর্ণ সচেতন নয়। বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাদের আলোচনায় তা পরিষ্কার বোঝা যায়। কুরবানির মওসুমে কুরবানির তাৎপর্য আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে যেসব প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয় তাতে এই সমস্যা প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়।
একশ্রেণীর লেখকের আলোচনা থেকে অনুমিত হয় যে, ইবাদত প্রসঙ্গটি তাদের কাছে গুরুত্বহীন কিংবা এ বিষয়ে তাদের ধারণা পরিষ্কার নয়। এজন্য কুরবানির ইবাদতের দিকটি তুলে ধরার পরিবর্তে তারা অন্যভাবে এর তাৎপর্য ব্যক্ত করেন। কেউ ইসলামের যে অংশটি তার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ তা দিয়ে একে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন যে, রাজনৈতিকভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করাই কুরবানির উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন হয় যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠাই যদি কুরবানির মূল উদ্দেশ্য হতো তাহলে পশু যবেহর পরিবর্তে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কাজকর্মই কি অধিক উপযোগী ছিল না? সেক্ষেত্রে দাওয়াত, তালীম, জিহাদ ইত্যাদি বিষয়ই হতো কুরবানি দিবসের মূল কর্মকাণ্ড। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। কিছু কাব্যপ্রিয় মানুষ পশু-কুরবানিকে ‘পশুত্বের কুরবানি’র প্রতীক বলে ব্যাখ্যা করেন। অর্থাৎ তারা এটা অনুধাবন করেন যে, কুরবানি নিছক পশু যবেহ নয়, এতে আরো উচ্চতর তাৎপর্য রয়েছে। কিন্তু সেই তাৎপর্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় তারা এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে নিছক একটি প্রতীকে পরিণত করেন। অথচ কুরবানি হচ্ছে ‘ইবাদতে মাকসূদা’। অর্থাৎ এই কাজটিই আল্লাহর দরবারে ইবাদত হিসেবে গণ্য।
পক্ষান্তরে কিছু ইসলামবিদ্বেষী ও মুনকিরে শরীয়ত কখনো স্পষ্টভাবে আবার কখনো ইশারা-ইঙ্গিতে এ কথা বলে যে, পশু-যবেহ হলো উৎসবের একটি অনুষঙ্গ। ভোজের প্রয়োজনেই পশু যবেহর রীতি প্রবর্তিত হয়েছে! বলাবাহুল্য যে, এভাবে তারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকেই অস্বীকার করে। কেননা, কুরআন-সুন্নাহ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, কুরবানি একটি ইবাদত এবং তা শাআইরে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। একে শুধু ভোজের অনুষঙ্গ বলার অর্থই হচ্ছে এই ইবাদতটিকে অস্বীকার করা। এই সকল ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির মূলে রয়েছে ইবাদত সম্পর্কে গুরুত্বহীনতা এবং ইসলামী ইবাদতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা।
প্রকৃতপক্ষে কুরবানি হচ্ছে একটি খাঁটি উপাসনাধর্মী কাজ। ইসলামী পরিভাষায় খালিছ ইবাদত। কুরবানি নিছক পশু যবেহ নয়। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর নির্দেশিত পন্থায় নির্ধারিত পশু তাঁর নামে উৎসর্গ করা। এজন্য এর সুনির্ধারিত নিয়মকানুন আছে, যার অন্যথা হলে তা আর ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় না। আল্লাহ তাআলা যতো প্রাণী মানুষের জন্য হালাল করেছেন, সব প্রাণী দ্বারা কুরবানি করা যায় না। যেসব প্রাণী দ্বারা কুরবানি করা যায় সেসবের মধ্যেও নির্ধারিত বয়স ও বৈশিষ্ট্যের শর্ত রয়েছে। এরপর কুরবানির উপযুক্ত পশুও নির্ধারিত সময়ে যবেহ করা অপরিহার্য। এই কথাগুলো তো সবারই জানা আছে।
উপরন্তু নবী করীম (সা.) কুরবানির পশু ও গোশতের পশুর পার্থক্য পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। এসব বিষয় প্রমাণ করে যে, কুরবানি একটি উপাসনাধর্মী কাজ। তবে অন্য ধর্মের উপাসনার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। স্বরূপ, তাৎপর্য ও সম্পাদন-পদ্ধতি সব দিক থেকেই তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলামের ইবাদত সম্পূর্ণ তাওহীদ ভিত্তিক। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর জন্যই তা হতে পারে। অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা শক্তির জন্য হতে পারে না। যিনি উপাসনার উপযুক্ত একমাত্র তারই জন্য উপাসনা, অন্য কারো জন্য নয়-এটা হচ্ছে ইসলামের ইবাদতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয় পার্থক্য হচ্ছে, এর সম্পাদন-পদ্ধতি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশিত। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত এবং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর বিভিন্ন সহীহ হাদিসে এর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো ও সম্পাদন-পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে।
পক্ষান্তরে অন্য সকল ধর্মের উপাসনার মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিরক ও বিদআত। আল্লাহর সঙ্গে গায়রুল্লাহর উপাসনা এবং ধর্মনেতাদের প্রণীত পদ্ধতি অনুসরণ এটাই হল অন্যান্য ধর্মের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কুরবানি ও অন্য সকল ইবাদত সম্পর্কে এই মৌলিক বিষয়টি পরিষ্কার থাকা উচিত। তাহলে যেমন ইবাদতের তাৎপর্য খোঁজার জন্য ইবাদতকে অতিক্রম করার প্রয়োজন হবে না, তেমনি ইসলামের শত্রুরা তা অস্বীকার করতে চাইলে তারও সঠিক জওয়াব দেয়া সম্ভব হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু