জবান যেন সিক্ত থাকে জিকিরের বৃষ্টিতে
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
সারাদিন আমি যতো কথাবার্তা বলি, তার সিকি পরিমাণও কি যিকির করি! দরকারি-বেদরকারি, জায়েয-নাজায়েয কতো রকম কথাবার্তায় আমার দিনরাত অতিবাহিত হয়, কিন্তু যিকিরের জন্য সারাদিনের অল্প কিছু অংশও কি ব্যয় হয়? দুনিয়াবী ব্যস্ততা জীবন জুড়েই আছে। জীবন পার করার জন্য টেনেটুনে হলেও সেসব কাজ আমরা করি। কিন্তু সবসময় কি দুনিয়াবী কাজকেই প্রাধান্য দিব? তাহলে আমার আখেরাতের যিম্মাদারি কে নেবে? যতো দীর্ঘ আয়ুই পাই না কেন, দুনিয়ার জীবন তো অতি অল্প। আখেরাতের জীবনের সামনে দুনিয়ার জীবন তো কোনো হিসাবেই আসে না। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্যই যদি যিন্দেগীর পুরোটা এভাবে ক্ষয় করে ফেলি, বিশাল আখেরাতের জন্য তাহলে কী রইল? আমাকে যে করেই হোক আখেরাতের পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে, দুনিয়াবী সব কাজের উপর আখেরাতকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
কুরআনে কারীম এবং হাদিস শরীফে যিকির ও যিকিরকারীদের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন : আল্লাহর যিকিরই সবচেয়ে বড়। (সূরা আনকাবুত : ৪৫)। আরেক স্থানে ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ এবং নারী... বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরকারী পুরুষ এবং নারী এদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত এবং বিরাট আজর প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব : ৩৫)।
হাদিস শরীফে আছে, হযরত আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে উত্তম, তোমাদের রবের নিকট সবচেয়ে প্রিয়, তোমাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি উন্নতকারী, স্বর্ণ রৌপ্য আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার চেয়েও বেশি উত্তম এবং শত্রুর মুখোমুখি হয়ে শত্রুকে হত্যা করা এবং শত্রুর হাতে তোমাদের শহীদ হওয়ার চেয়েও বেশি উত্তম আমলের কথা বলব? সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার যিকির। (জামে তিরমিযী : ৩৩৭৭)।
এমন আরো অনেক ফযীলতপূর্ণ হাদিস বর্ণিত আছে। অনেক যিকির আছে, যেগুলো আদায় করতে খুব কম সময় লাগে, কিন্তু আজরের দিকে থেকে অনেক বড়। যেমন, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম। পড়তে কতক্ষণ লাগে? কিন্তু তার আজর! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই দুটি বাক্য পড়তে খুবই সহজ, অথচ সেগুলো রহমানের নিকট প্রিয় এবং মীযানের পাল্লায় হবে ভারী। (সহীহ বুখারী : ৬৪০৬)।
এই তাসবীহের আরো একটি ফযিলত বর্ণিত আছে। তা হলো, যে দিনে একশ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী পড়বে তার সকল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহীহ বুখারী : ৬৪০৫)। সারাদিন কতভাবেই তো সময় নষ্ট করি। কতো ধরনের কথাবার্তায় সময় পার করি। অথচ এসব সময়ে যিকির-তিলাওয়াত, অযীফায় মশগুল থাকলে দুনিয়া-আখেরাত উভয় দিক থেকে কতো লাভবান হতাম! যবানের গোনাহে আমলনামা ভরে উঠত না।
যিকিরের সাথে ইস্তিগফারের আমল করা খুবই জরুরি। কারণ, নাজায়েয কোনো কথা বলে ফেললে তারপরে যদি বেশি বেশি ইস্তিগফার বা যিকির করি তাহলে তা সেই গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়! আমাদের প্রিয় নবীজী (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও দিনে সত্তর বারের বেশি ইস্তিগফার করতেন। তাহলে গোনাহগার উম্মতের জন্য কী পরিমাণ ইস্তিগফার প্রয়োজন? আমাদের বেশিরভাগ গোনাহই যবানের দ্বারা হয়। তাই সারাদিন বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-কে খাদেমা দেয়ার বদলে তাসবীহ শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এই তাসবীহ গোলাম-বাদী থেকেও উত্তম। রাতে ঘুমানোর সময় তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদু লিল্লাহ, চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবার পড়া। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদেরকে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন দুআ শিখিয়েছেন। ঘুমানোর দুআ, ঘুম থেকে ওঠার পরের দুআ, খাওয়ার আগে-পরের দুআ, ইস্তিঞ্জার আগে-পরের দুআ, সকাল-সন্ধ্যার দুআ। যাতে এসকল দুআর মাধ্যমে সবসময়ই আল্লাহকে স্মরণ করতে পারি; কোনো অবস্থায়ই যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না থাকি। দৈনন্দিন দুআ-যিকিরের সাথে সাথে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াত, মুনাজাতে মাকবূল এবং অন্যান্য ওযীফাও আদায় করা উচিত।
আমি হয়ত বলতে পারি, সারাদিন আমার কতো কাজ! এতো কাজকর্ম সংসার সামলে এতো আমল করার সুযোগ কোথায়! কিন্তু পূর্ববর্তী মহীয়সী নারীদের জীবনের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, তাঁদেরও কাজকর্ম ছিল, সংসার ছিল, আমার চেয়েও তাঁদের ব্যস্ততা, সাংসারিক ঝামেলা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এতো কষ্ট, এতো ব্যস্ততা সত্ত্বেও তাঁদের জীবন ছিল আমলে-যিকিরে ভরপুর। এসব ছিল তাদের মূল কাজ। বাকিগুলো করতেন প্রয়োজনের তাকিদে। আমিও তাঁদের মতো হিম্মত করলে, দুনিয়া এবং আখেরাতকে তাঁদের মতো করে ভাবলে আমার জন্যও যিকির-আমল সহজ হয়ে যাবে।
তাছাড়া কাজ তো করি হাত-পা দিয়ে। মুখ তো অবসরই থাকে। তাই অবসর সময়ে তো বটেই, ব্যস্ত সময়েও যিকির, ইস্তিগফারে লেগে থাকতে পারি।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেরপুরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেপ্তার-৭
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী
চাঁদপুরে কিশোরচালক মহিন হত্যা মামলার ৩ আসামী আটক
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬২৯ জন