ব্যক্তি ও কর্মের ভালো-মন্দ-২
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

ভালো-খারাপ শব্দ দুটি মন্তব্য ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত, মন্তব্যটি জ্ঞানভিত্তিক হওয়া এবং বাস্তবসম্মত ও ন্যায়ানুগ হওয়া। জ্ঞানভিত্তিক না হলে তা হয় মনগড়া বা ধারণাপ্রসূত মন্তব্য আর বাস্তবসম্মত ও ন্যায়ানুগ না হলে তা হয় অন্যায় ও অবাস্তব মন্তব্য। মূল্যায়নের শব্দে বা শিরোনামে হলেও এগুলো আসলে উপহাস, পীড়ন, অবিচার ও সত্যের অপলাপ যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে কিছু আলোচনা করা হয়েছে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও কিছু সাধারণ কথা মনে রাখা দরকার যার মধ্য থেকে দুটি কথা এখানে আলোচনা করছি।
প্রথম কথা : কর্মের মূল্যায়ন ও ব্যক্তির মূল্যায়ন এক নয়। এক হচ্ছে কোনো একটি বিশেষ কর্ম বা অবস্থার মূল্যায়ন, আরেক হচ্ছে সমগ্র ব্যক্তিটির মূল্যায়ন। ব্যক্তির কোনো একটি কাজ অগ্রহণযোগ্য হলেই ব্যক্তিটিকে অগ্রহণযোগ্য বলা বৈধ হয়ে যায় না। অর্থাৎ ‘কাজটি ভালো নয়’ আর ‘ব্যক্তিটি ভালো নয়’- এই দুটি এক কথা নয়। এমন খুব হতে পারে যে, ‘কাজটি ভালো নয়’ বলা গেলেও ওই কারণে ‘ব্যক্তিটি ভালো নয়’ বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে অনেক উদ্ধৃতিই দেয়া যায়। এই মুহূর্তে আমি শুধু একজন মনীষীর উদ্ধৃতি এখানে তুলে ধরছি।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ শাফেয়ী (রাহ.) বলেন, এমন কে আছে যার আনুগত্যের সাথে কিছু না কিছু অবাধ্যতা নেই- সুতরাং যার (কর্ম ও জীবনে) আনুগত্যের প্রাধান্য তিনি ‘বিশ্বস্ত’ আর যার জীবন ও কর্মে নাফরমানীর প্রাধান্য সে ‘অবিশ্বস্ত’। (আল কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়ায়াহ ৭৯ আসসুনানুল কুবরা বাইহাকী ১০)। ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) যদিও একথা একটি বিশেষ শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেছেন কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বাণী ও যুক্তিটি সাধারণ। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে সাধারণ ও সামগ্রিক মূল্যায়ন হয় তার গোটা কর্ম ও জীবনের ভিত্তিতে। সেখানে ভালোর প্রাধান্য হলে ব্যক্তিটি ভালো যদিও তার কিছু দোষ-ত্রুটি রয়েছে। আর সেখানে মন্দের প্রাধান্য হলে ব্যক্তিটি মন্দ যদিও তার কিছু গুণ ও বিশিষ্টতা রয়েছে।
তাহলে বিশেষ কোনো কর্ম, আচরণ বা অবস্থাকে ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ বলা এক কথা আর কোনো ব্যক্তিকে ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ উপাধীতে আখ্যায়িত করা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। তবে হ্যাঁ, এখানে আরেকটি দিকও রয়েছে। আর তা হচ্ছে, ভাষার ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রেই ‘সাধারণ’ শব্দ প্রয়োগ করে ‘বিশেষ’ অর্থ গ্রহণ করা হয়। যেমন, ভালো-মন্দ শব্দ দুটি সাধারণ হলেও কারো প্রয়োগে এর অর্থ হতে পারে ‘সচ্চরিত্র’ ও ‘দুশ্চরিত্র’।
আগেই বলা হয়েছে নিশ্চিতভাবে কারো সচ্চরিত্র বা দুশ্চরিত্র হওয়া জানা না থাকলে এ শব্দের প্রয়োগ মিথ্যা। আর জানা থাকলেও তা প্রয়োগ করা যাবে কিনা, গেলে কোন ক্ষেত্রে করা যাবে, কী কী শর্তে করা যাবে সেটাও এক আলাদা প্রশ্ন। তো ভালো-খারাপ শব্দ দুটি যে অর্থেই প্রয়োগ করা হোক প্রয়োগটি ‘মূল্যায়ন’ হওয়ার জন্য যথার্থ জ্ঞান ভিত্তিক হওয়া জরুরি। অন্যথায় তা কটূক্তি ও অন্যায় বলেই সাব্যস্ত হবে।
দ্বিতীয় কথা : কর্ম ও বিশ্বাস ব্যক্তি থেকে আলাদাও নয়। তাহলে ব্যক্তির মূল্যায়ন ও কর্মের মূল্যায়ন এক কথা নয় এবং বিশেষ কোনো একটি কর্ম ভালো না হওয়ার কারণেই সমগ্র ব্যক্তিটিকে ‘ভালো নয়’ বলে দেয়া ন্যায়সঙ্গত নয়। তবে একই সাথে এও তো অনস্বীকার্য যে, ব্যক্তির ভালো ও মন্দ অবশেষে কর্মের ভালো ও মন্দের দ্বারাই নির্ধারিত হয়। একটি বিশেষ কর্ম যদিও ব্যক্তির সবটা নয় কিন্তু তা ব্যক্তি থেকে আলাদাও নয়। সুতরাং ‘এ তো একটিমাত্র কর্ম’- একথা বলে অবহেলারও অবকাশ নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পোষাকের বিষয়ে বলা হয়, ‘পোষাক দ্বারা ব্যক্তির ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয় না।’ খাঁটি কথা। কিন্তু ‘পোষাক’ কি ব্যক্তির কর্ম ও জীবনের অংশ নয়? ব্যক্তির চিন্তা ও কর্ম, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে পোষাকের কি কোনোই সম্পর্ক নেই? তাহলে শুধু পোষাক দ্বারা ব্যক্তির ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয় না- একথা যেমন সত্য তেমনি পোষাককে ভালো-মন্দ থেকে একেবারে আলাদাও করা যায় না- একথাও সত্য।
বিশেষ পোষাকের প্রতি বিশেষ শ্রেণির মানুষের অনুরাগ-বিরাগও এক বাস্তব ব্যাপার। সুতরাং ‘পোষাকে কী আসে যায়’ এমনটা বলার অবকাশ নেই। পোষাকে আসলে অনেক কিছুই আসে যায়। আর এ কারণেই পোষাক নিয়ে এতো তর্ক-বিতর্ক এবং বিশেষ ধরনের পোষাকের প্রতিষ্ঠা বা প্রতিরোধ নিয়ে সব পক্ষের এতো মাথা ব্যথা!
পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কেও কারো মনে হতে পারে, এতে কী আসে যায়। নিজে ভালো তো জগৎ ভালো। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সঙ্গ ও পরিবেশ কি ব্যক্তির চিন্তা ও কর্ম-গঠনে কোনোই ভূমিকা রাখে না? পরিবেশের অনুকূলতা ও প্রতিকূলতার কি কোনোই প্রভাব নেই মানবের কর্ম ও চিন্তার ক্ষেত্রে? ভালো-মন্দই শুধু নয়, ভালো-মন্দ বিচারের মানদ-ও তো গঠিত ও পরিবর্তিত হয় সঙ্গ ও পরিবেশের কারণে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো