সালাম : আমাদের স্বকীয়তা-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সালাম বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। ভালোবাসা ও সম্প্রীতির এ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামাজিক বন্ধন যেমন সুদৃঢ হয় তেমনি পরকালীন মুক্তিও এর সঙ্গে জড়িত।
দেখুন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বেহেশত লাভের জন্যও পারস্পরিক এ ভালোবাসার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেছেন : তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অন্যকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলব, যখন তোমরা তা করবে, তখন একে অন্যকে ভালোবাসবে। তোমরা তোমাদের মাঝে সালামের প্রচলন ঘটাও। (সহিহ মুসলিম-৫৪)

সালামের প্রচলন কীভাবে ঘটানো যায় তার একটি রূপরেখাও রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন যেন সে সালাম দেয়। এরপর কোনো গাছ কিংবা কোনো পাথর বা দেয়ালের আড়াল থেকে এসে যখন আবার তার সঙ্গে দেখা হয় তখনো যেন তাকে সালাম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ-৫২০০)

শুধু পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতিই নয়, সালামের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয় আমাদের আমলনামাও। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা.-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মজলিসে এসে এক ব্যক্তি ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ১০ (অর্থাৎ তুমি ১০ নেকি পেলে)।

এরপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ২০ (অর্থাৎ তুমি ২০ নেকি পেলে)। এরপর তৃতীয় আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’ বলে সালাম দিলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ৩০ (অর্থাৎ তুমি ৩০ নেকি পেলে)। (সুনানে আবু দাউদ-৫১৯৫)

সালামের আরেক সুফলÑ সালাম মানুষকে অহঙ্কার থেকে মুক্ত রাখে। তবে এ জন্য শর্ত হলো আগে সালাম দেয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আগে সালাম দেয় সে অহঙ্কার থকে মুক্ত।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি-৮৪০৭) মানুষ যখন বড় হয়, তা বয়সের বিবেচনায়ই হোক, কিংবা যশ-খ্যাতি সম্মান বা অর্থসম্পদের দিক দিয়েই হোক, আর পদমর্যাদা ও ক্ষমতা দিয়েই হোক, সে চায় তার অধীনস্তরা কিংবা তার চেয়ে ছোট যারা তারা তাকে সম্মান করুক। অন্যদের সম্মানে সে তৃপ্তি পায়।

তাই কেউ বড় হয়ে গেলে ছোটদের নিয়ে এ মানসিকতা থাকা স্বাভাবিকÑ আমি কেন তাকে সালাম দেবো; বরং সে আমাকে সালাম দেবে! এ মানসিকতা থেকেই অহঙ্কারের সূচনা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মানসিকতাকেই শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলেছেন। তাঁর বাণী ও শিক্ষা অনস্বীকার্যÑ যে যত বড়ই হোক, সামাজিকভাবে যত উচ্চ মর্যাদার অধিকারীই হোক, আগে বেড়ে সে যখন অন্য কাউকে সালাম দেবে তখন তার মন থেকে অহঙ্কার বিদায় নিতে বাধ্য।

প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ছিলেন মদিনা মুনাওয়ারার বিদ্বান সাহাবিদের অন্যতম। তাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠে হাদিস চর্চার পাঠশালা। অথচ তিনি হাদিসের মজলিস রেখে মাঝে মধ্যেই বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। উদ্দেশ্য-অধিক সংখ্যক মানুষকে সালাম দেয়া। তার শিষ্য হজরত তুফায়েল ইবনে উবাই ইবনে কাবের বক্তব্য শুনুনÑ ‘আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নিকট এলাম। তিনি তখন আমাকে নিয়ে বাজারের দিকে রওনা করলেন। আমি তাকে বললাম, বাজারে গিয়ে আপনি কী করবেন?

আপনি তো কোনো কিছু কেনাবেচা করেন না, কোনো পণ্য সম্পর্কে কিছু জানতেও চান না, কোনো কিছু নিয়ে দামাদামিও করেন না, কারো সঙ্গে কোনো বৈঠকেও শরিক হন না, তবুও কেন আপনি বাজারে যাবেন? আপনি এখানে বসুন, আমরা হাদিস শুনব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তখন বললেন, আরে শোনো, আমরা তো কেবল সালাম দেয়ার জন্যই বাজারে যাই। যার সঙ্গে দেখা হয় তাকেই আমরা সালাম দিয়ে থাকি।’ (মুয়াত্তা মালেক-১৭২৬)

সালামকে যদি আমরা এভাবে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং যদি সালামের মর্ম আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের পরকালীন পুঁজি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সমাজে বয়ে যাবে আন্তরিকতা আর সম্প্রীতির স্নিগ্ধ হাওয়া। আমাদের পার্থিব জীবনও হয়ে ওঠবে শান্তি ও কল্যাণময়।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-১
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১
জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
আরও

আরও পড়ুন

রামু বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

রামু বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা, তিন পুলিশ সদস্য কারাগারে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা, তিন পুলিশ সদস্য কারাগারে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্দোলনে আহতের দেখতে ঢাকা পঙ্গু ও চক্ষু হাসপাতালে এমপি কায়কোবাদ

আন্দোলনে আহতের দেখতে ঢাকা পঙ্গু ও চক্ষু হাসপাতালে এমপি কায়কোবাদ

চাঁদপুর মেঘনায় মাটিবহনকারী দুটি বাল্কহেডসহ আটক ৯

চাঁদপুর মেঘনায় মাটিবহনকারী দুটি বাল্কহেডসহ আটক ৯

রামগঞ্জে নিখোঁজের চার দিন পর খাল থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

রামগঞ্জে নিখোঁজের চার দিন পর খাল থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

২০২৪ সালে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ তিনগুণ বৃদ্ধি,অক্সফামের চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২৪ সালে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ তিনগুণ বৃদ্ধি,অক্সফামের চাঞ্চল্যকর তথ্য

দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে উঠেছে: রিজভী

দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে উঠেছে: রিজভী

ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে: সিইসি

ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে: সিইসি

ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স বাংলাদেশের আয়োজনে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস মার্কেটিং ফেস্ট অনুষ্ঠিত

ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্স বাংলাদেশের আয়োজনে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস মার্কেটিং ফেস্ট অনুষ্ঠিত

বিরলে জুলাই আগষ্ট অভুত্থানে নিহত

বিরলে জুলাই আগষ্ট অভুত্থানে নিহত

সিআইপির খাল সমূহ পুনঃখনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ সাত দফা দাবি

সিআইপির খাল সমূহ পুনঃখনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সহ সাত দফা দাবি

চীনে গাড়ি হামলা-হত্যার দায়ে দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

চীনে গাড়ি হামলা-হত্যার দায়ে দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল কেনা হচ্ছে

বিজিবির জন্য সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল কেনা হচ্ছে

শহীদ আসাদের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ- খোকন

শহীদ আসাদের আত্মত্যাগেই আজকের বাংলাদেশ- খোকন

লিটনের ব্যাটে ঢাকার বড় সংগ্রহ

লিটনের ব্যাটে ঢাকার বড় সংগ্রহ

পীরগঞ্জের ৯ জন শিক্ষার্থী'র চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ

পীরগঞ্জের ৯ জন শিক্ষার্থী'র চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ

জাতীয় প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থান

জাতীয় প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থান

বঙ্গোপসাগরে নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ আহরণ, ভেস্তে যাচ্ছে উৎপাদন

বঙ্গোপসাগরে নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ আহরণ, ভেস্তে যাচ্ছে উৎপাদন

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি

‘জুলাই বিপ্লবের’ মাধ্যমে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে : সিইসি