ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ব্যক্তি ও কর্মের ভালো-মন্দ-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

ব্যক্তি বা কর্মের মূল্যায়ন এক বিষয় আর কারো প্রতি কটূক্তি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এ দু’য়ের শব্দ-বাক্য এক হয়ে থাকে। এ কারণে খুব মনোযোগের সাথে লক্ষ্য না করলে কারো কাছে কটূক্তিকে মূল্যায়ন কিংবা মূল্যায়নকে কটূক্তি বলে মনে হতে পারে। ‘ভালো-খারাপ’ শব্দ দুটি প্রয়োগের বিচারে সাধারণ দুটি শব্দ। এরা যেমন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তেমনি কটূক্তির ক্ষেত্রেও হয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে এই দুই শব্দের প্রয়োগ শুদ্ধ কি অশুদ্ধ, ন্যায় কি অন্যায় তা নিরূপণ করতে হলে প্রথমেই নিরূপণ করতে হবে শব্দ-দুটির প্রয়োগ কোন প্রকারের অন্তর্ভুক্ত- সিদ্ধান্ত ও মূল্যায়ন, না কটূক্তি ও পীড়ন।
এ বিষয়ে সূরায়ে হুজুরাতের ১১ ও ১২ নম্বর আয়াত খুবই প্রাসঙ্গিক। আমি শুধু এই দুই আয়াতের তরজমা তুলে দিচ্ছিÑ ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী থেকে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর ফিস্ক বিশেষণে ভূষিত হওয়া কতো মন্দ। যারা তাওবা করে না তারাই যালেম।’

‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা পরিহার করো। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা পাপ এবং তোমরা (গোপন বিষয়) অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? তোমরা তো একে ঘৃণাই মনে করো। আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’

এখানে যে বিষয়গুলো খুব পরিষ্কারভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা নি¤œরূপ : ১. কাউকে উপহাস করা, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। ২. কাউকে মন্দ উপাধী বা বিশেষণে ভূষিত করা। কুরআন মাজিদে পরিষ্কার ভাষায় একে ফাসেকী কাজ বলা হয়েছে। ৩. ধারণার অনুসরণ করা। শুধু ধারণার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া, কোনো কথা বলা বা কোনো আচরণ করা। ৪. কারো দোষ বা দুর্বলতা অন্বেষণ করা। ৫. কারো গীবত করা বা পশ্চাতে নিন্দা করা। হাদিস শরীফের সুস্পষ্ট ভাষ্য অনুযায়ী গীবত হচ্ছে কারো বাস্তব দোষ চর্চা করা। যে দোষ কারো মধ্যে নেই তা কারো প্রতি আরোপ করা তুহমত বা মিথ্যা অপবাদ, যা গীবতের চেয়েও মারাত্মক।

তো সূরা হুজুরাতের ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে উপরের সবগুলো কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাধারণভাবে। নারী-পুরুষ সবার জন্য তা নিষেধ এবং সবার ক্ষেত্রে নিষেধ। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষে যেমন কোনো পার্থক্য নেই তেমনি নারীতে নারীতেও কোনো পার্থক্য নেই। কটূক্তি ও পীড়ন সবার জন্য হারাম। সবার ক্ষেত্রে হারাম। একটি সভ্য-সুন্দর, শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য বিধানের এই সাম্য সবার আগে প্রয়োজন, যা কুরআনী বিধান চৌদ্দশ বছর আগেই নিশ্চিত করেছে।

বর্তমান সমাজ যেহেতু কুরআনী শিক্ষা ও বিধান থেকে দূরে এজন্য এ সমাজে উপহাস, তাচ্ছিল্য, কটূক্তি, মিথ্যা অপবাদ, পরনিন্দা ইত্যাদির ব্যাপক চর্চা ও বিস্তার রয়েছে। এ সব অন্যায় শুধু নারীর প্রতিই করা হয় না পুরুষের প্রতিও হয়ে থাকে। এবং শুধু একশ্রেণির নারীর প্রতিই হয় না সব শ্রেণির নারীর প্রতিই হয়ে থাকে। এখানে আমি দ্বীনদার ইসলামী বিধানের অনুসারী পুরুষের কথা বিশেষভাবে বলব, এই সমাজে তারা কত উপহাস, তাচ্ছিল্য, মিথ্যা অপবাদ ও পীড়নের শিকার! দ্বীনদার, পর্দানশীন নারীগণও নানা কটূক্তি ও তাচ্ছিল্যের শিকার- জঙ্গি, গোঁড়া, মৌলবাদী, কট্টরপন্থী- আরও কত উপাধী তাদের শুনে যেতে হয় শুধু হিজাব-নিকাব ধারণের কারণে।

সুতরাং শুধু ভার্সিটি বা হলে থাকলেই মেয়েদের সম্পর্কে কটূক্তি করা হয় বিষয়টা এমন নয়। হিজাব-নিকাব ধারণ করলেও এবং সমাজের গলিত গড্ডালিকায় ভেসে না গেলেও কটূক্তি করা হয়। সুতরাং সমাজকে সভ্য সুন্দর করতে হলে সমাজ-চিন্তকদের পক্ষপাতদুষ্ট বা একদেশদর্শী চিন্তা-ধারা পরিহার করতে হবে এবং সাধারণভাবে সবধরনের অন্যায়-পীড়নের মানসিকতা থেকেই সমাজ-সদস্যদের মুক্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষে বা নারীতে-নারীতে পার্থক্য বা বৈষম্যের কোনো অবকাশ নেই। সূরায়ে হুজুরাতের উপরোক্ত আয়াতগুলোতে এবং কুরআন-সুন্নাহর আরো বহু জায়গায় এই শিক্ষা ও বিধান পরিষ্কারভাবে রয়েছে। এরই চর্চা ও প্রতিষ্ঠা এখন বড় প্রয়োজন।

********************


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্বাধীনতার মাস : ইয়া আল্লাহ! এই জাতিকে সর্বকল্যাণে ভূষিত করুন
সালাম : আমাদের স্বকীয়তা-২
সালাম : আমাদের স্বকীয়তা-১
ব্যক্তি ও কর্মের ভালো-মন্দ-২
পানাহার হালাল না হলে নেক আমলের মূল্য থাকে না
আরও

আরও পড়ুন

ফ্যাসিস্ট সরকারের আট বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের আট বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু

খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু

বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর

বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর

কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন

কিশোরগঞ্জে সড়ক সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন