সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহর নিকট একটি ঘৃণ্য বিষয়
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
দুই দিনের এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমাদের খুবই সামান্য কিছু সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। জগতের সেরা ধনী যে সেইবা কতটুকু সম্পদের অধিকারী? দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যত নিয়ামত আমরা ভোগ করি সচেতনভাবে ও অবচেতনভাবে, কারো পক্ষে কি এর এক ক্ষুদ্র অংশেরও বিনিময় আদায় করা সম্ভব? জগতের যা কিছু সবই তো আল্লাহর। তিনিই প্রকৃত মালিক-ঈমানদার যে কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে।
অল্প সময়ের জন্য তিনি কিছু সম্পদের বাহ্যিক মালিকানা আমাদের দান করেন। এ মালিকানা পরিবর্তনও হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়। পথের ভিখারি রাজা হয়, রাজা সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামে। চার পাশে এ বাস্তবতা দেখার পরও আমরা আমাদের মালিকানাধীন সম্পদকে প্রকৃত অর্থেই আমাদের সম্পদ মনে করে ভুল করি।
এ থেকেই সৃষ্টি হয় অপচয়ের মানসিকতাÑ আমার টাকা আমি আমার ইচ্ছামতো খরচ করব, এতে কার কী বলার আছে! আল কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করছেন আমাদের এই বলে : তোমরা তাদের (অর্থাৎ তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের) আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। (সূরা নূর : ৩৩)।
এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দান করেছেন, উক্ত আয়াতে তা আল্লাহর সম্পদ বলে আলোচিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরাও বলিÑ এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য। এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নিয়ামত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও।
তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা-অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হবে। হাদিসের ভাষ্য খুবই স্পষ্ট এবং কঠিন! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে নাÑ তার জীবন সে কিসে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কিসে নষ্ট করেছে? (জামে তিরমিযী : ২৪১৭)।
অর্থাৎ নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শারীরিক আরাম বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করলেই তাতে নিজের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। এ সম্পদ যেহেতু আমাদের হাতে আমানত, তাই এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের দায়িত্ব। এখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো সুযোগ নেই। খরচ করতে চাইলে যিনি এর প্রকৃত মালিক, তার অনুমতিক্রমেই তা খরচ করতে হবে। অন্যথায় আটকে যেতে হবে কিয়ামতের ময়দানের সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে।
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন : ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা/না জেনে আন্দাজে কথা বলা, ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। (সহীহ বুখারী : ১৪৭৭)।
বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি ঘৃণ্য বিষয়। এ সম্পদ যখন তিনি মানুষকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে বলেছেন, তা যদি নষ্ট করা হয়, অনর্থক খরচ করা হয়, তাহলে তিনি তা অপছন্দ করবেনই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সম্পদরূপী এ নিয়ামতের কদর অবশ্যই করতে হবে। অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় যেকোনো বিষয়ই ইসলাম অপছন্দ করে। অহেতুক কথা, অহেতুক কাজ, অহেতুক ব্যয়-বর্জনীয় সবই।
আমাদের হাতে থাকা আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত এ ধনসম্পদ ব্যয় করতে গেলে এ দুই বিষয় অবশ্যই সামনে রাখতে হবেÑ ব্যয়ের খাতটা প্রয়োজনীয় কি না এবং প্রয়োজনটা বৈধ প্রয়োজন কি না। তাহলেই সম্ভব অপচয়ের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার প্রয়োজন পূরণ হয় কতটুকুতে তাও অবশ্য লক্ষণীয়। হাদিসের ভাষ্যানুসারে, নদীর পাড়ে বসেও যদি কেউ ওজু করে তবুও অপ্রয়োজনীয় পানি ব্যয় করার অনুমতি তার নেই। এটাও অপচয়।
অপচয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার অর্থ এই নয় যে, আবার কার্পণ্যে জড়িয়ে যেতে হবে। অপচয়ের মতো কার্পণ্যও মানবচরিত্রের এক মন্দ দিক। স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনাÑ অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
পবিত্র কোরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে : যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। (সূরা ফুরকান : ৬৭)। তাই কেবল ব্যয়সঙ্কোচন নয়, বরং ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেখানে যা প্রয়োজন, তা ব্যয় করতে হবে। আর প্রয়োজন না হলে ছোট-বড় যে কোনো পরিমাণের ব্যয় থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত
ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া
সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২
সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা
শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য
নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী
পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার
সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন
বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া
যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের
সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ
সেনাবাহিনী যেতেই রাস্তা ছেড়ে পালালেন রিকশাচালকরা!
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে কোরিয়া
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তাদের মতামত জোর করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতো
ফরিদপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল মা ও মেয়ের
পতিত স্বৈরাচারের দোসর বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়া আলাউদ্দিন নাসিম এখন কোথায়?
টঙ্গীবাড়ীতে সার ও বীজ আলু ডিলাদের সাথে ইউএনওর মত বিনিময় সভা