নববী জীবন : জীবন ও কর্মের আলোকবর্তিকা
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
জীবনের অপর নাম ব্যস্ততা। আর তাই জীবিত মানুষমাত্রই ব্যস্ত। এতো বিক্ষিপ্ত ও বিচিত্র এই ব্যস্ততা যে, তা লিখে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর নানা পেশার, নানা যোগ্যতার, নানা রুচি-প্রকৃতির অসংখ্য মানুষ সবাই ব্যস্ত। কেউ কথায় ব্যস্ত, কেউ কাজে ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত চিন্তা-ভাবনায়, কর্ম-পরিকল্পনায়। দৃশ্যত অতি বিচিত্র ও বিক্ষিপ্ত হলেও জীবনব্যাপী আমাদের এই ব্যস্ততা কিন্তু সাধারণ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।
জীবিকা-অন্বেষণ, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজনের লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা, যোগাযোগ, আত্মীয়তা, সামাজিকতা এবং এ রকম আরো কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করেই গোটা পৃথিবীর মানুষ ব্যতিব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল কলরবে গোটা মানব-বসতি যেন তরঙ্গায়িত।
কিন্তু এখানেও একটা ছক আছে। সারাদিনের কোলাহল দিন শেষে কমে যেতে থাকে। একসময় সব কোলাহল থেমে যায়, ব্যস্ততার তরঙ্গে তরঙ্গায়িত মানববসতি সম্পূর্ণ নিস্তরঙ্গ হয়ে পড়ে। চারদিকে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। ঘুমন্ত মানববসতিকে মনে হয় যেন এক বিরান গোরস্তান। কিন্তু পরের দিন আবার সূর্য ওঠে। ঘুমিয়ে পড়া বসতি আবারো জেগে ওঠে। আবার মানুষ ছুটতে থাকে। কোলাহল-কলরবে পাড়া-মহল্লা, শহর-নগর আবারো দুলতে থাকে। সময়ের স্রোতে এভাবেই ভেসে চলেছে আমাদের জীবন।
ভেবে দেখার বিষয় হলো, দিবস-রজনীর এই প্রাকৃতিক নিয়মে, নিদ্রা ও জাগরণের এই প্রাত্যহিকতায়, কোলাহল-নীরবতার এই দু-রঙ্গা ফ্রেমে আমাদের জীবনকে কে বন্দী করলেন? জীবনের সকল বিক্ষিপ্ততাকে কে এভাবে বিন্যস্ত করলেন? যা অতিক্রম করে যাওয়ার সাধ্য আমাদের নেই। অতিক্রম চেষ্টায় কোনো লাভ নেই। তিনি আল্লাহ। আমাদের রব। গোটা সৃষ্টি-জগতের প্রভু-পরওয়ারদেগার।
আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে- তা যতোই বিচিত্র হোক, সকল কাজ-কর্মে- তা যতোই বিক্ষিপ্ত হোক, আছে ইসলামের সঠিক নির্দেশনা। আমাদের ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন, সবক্ষেত্রেই আছে ইসলামের সুমহান নীতি ও আদর্শ, যে আদর্শের অনুসরণে জীবনের সকল ব্যস্ততা, তার সকল বৈচিত্র্য সত্ত্বেও, ভিতরে-বাহিরে এক কল্যাণ-আদর্শের ছাঁচে-ঢালা হয়ে যায়। জীবনব্যাপী নানাবিধ কর্ম-তৎপরতার খণ্ড খণ্ড অংশগুলো একত্র হয়ে অখণ্ড রূপ লাভ করে। জীবনের গতি হয় একমুখী। জ্বী, মহান আল্লাহমুখী।
জীবন ও কর্মের এই একমুখিতা, অখণ্ডতা মানুষকে দান করে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি। বিক্ষিপ্ততা, বিচ্ছিন্নতা ও লক্ষ্যহীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে, ছোট-বড়, স্বকল্পিত, মানব-রচিত অসংখ্য প্রভুর দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ লাভ করে এক বেহেশতি অনুভূতি, যার তুলনা এই মাটির পৃথিবীর আর কোনো কিছুর সাথেই হতে পারে না। মানুষের মুক্ত-স্বাধীন, পরিতৃপ্ত হৃদয় থেকে তখন উৎসারিত হয়- আলহামদু লিল্লাহ; সকল প্রশংসা আল্লাহর।
এই পবিত্র আদর্শ মহান রাব্বুল আলামীনের অতি বড় দান। তাঁর রবুবিয়্যাতের সুমহান প্রকাশ। মানুষের জীবন-ধারনের জন্য যিনি চারপাশের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য উপাদান তিনিই মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য দান করেছেন সুমহান আদর্শ- দ্বীন ইসলাম। এই মহান দ্বীন যে মহামানবের সূত্রে আমরা লাভ করেছি, তিনি আমাদের প্রিয়নবী (সা.)। তাঁর উপর কোরবান আমাদের জান-মাল সবকিছু। কোরবান আমাদের সকল স্বজন-প্রিয়জন-প্রিয় বস্তু।
তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সমগ্র মানবতার মুক্তির দূত। এই পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তাঁর আনীত আদর্শই অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। তাঁরই উপর নাযিল হয়েছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব- আল কুরআন। আর তাঁর পবিত্র জীবন ও কর্ম হচ্ছে আল কুরআনের প্রায়োগিক ব্যাখ্যা। তাঁর পবিত্র সীরাত কিয়ামত পর্যন্ত সকল আল্লাহমুখী বান্দার চোখের জ্যোতি, আত্মার দ্যুতি, হৃদয়ের আলো, জীবন ও কর্মের আলোকবর্তিকা। মানবজাতির জন্য তিনি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিআমত।
তাঁর উপর ঈমান আনা ছাড়া কেউ আল্লাহর কাছে মুমিন গণ্য হয় না। তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর ইবাদত হয় না। তাঁর ইত্তিবা ও অনুসরণ ছাড়া কোনো ভালো কাজ নেক আমল হয় না। তাঁর জীবনাদর্শের অনুসরণ ছাড়া কোনো জীবন আদর্শ জীবন হয় না।
তাঁকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। তাঁর আনুগত্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়। তাঁর পবিত্র জীবনের অনুসরণ দুনিয়া-আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি। যে আদর্শের অনুসরণে জীবন আল্লাহমুখী হয়, মানুষ আল্লাহওয়ালা হয়, জীবনের সকল কাজ-কর্ম আল্লাহমুখিতার আলোকিত সূত্রে সুবিন্যস্ত-আলোকিত হয়ে যায় তিনি সেই আদর্শের শ্রেষ্ঠ নমুনা।
যুগে যুগে তাঁরই পবিত্র সীরাতের স্পর্শে কতো অর্থহীন জীবন হয়েছে অর্থপূর্ণ। কতো সংকীর্ণ কূপমণ্ডুক জীবন পরিণত হয়েছে কুলকিনারাহীন বিশাল সিন্ধুতে। কতো লক্ষ্যহীন অস্থির জীবন পেয়েছে স্থির লক্ষ্যের সন্ধান। কতো বিচ্যুত জীবন উঠে এসেছে জীবন ও আদর্শের আলোকিত রাজপথে। শুধু নিজেই উঠে আসেনি বরং তুলে এনেছেন আরো অসংখ্য জীবনকে। কেমন ছিলেন সেই মানুষটি, যাঁর সাহচর্যে ‘মৃত’ মানুষ শুধু ‘জীবন’ই লাভ করেনি বরং পরিণত হয়েছে সঞ্জীবনী পরশপাথরে, যার স্পর্শে দিকে দিকে জ্বলে উঠেছে হেদায়েতের অনির্বাণ শিখা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আহমেদাবাদ শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ৩৫ ইরানি ছবি
কিউই সিরিজের কথা ভুলে অস্ট্রেলিয়ায় হ্যাটট্রিকের অভিযানে ভারত
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া, ড. ইউনূসের সঙ্গে কুশল বিনিময়
সউদী আরবের ফ্যাশন শো নিয়ে যেসব কারণে ক্ষুব্ধ ইসলামী পণ্ডিতরা
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত’ : প্রধান উপদেষ্টা
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছিল -আ ন ম বজলুর রশীদ
বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে চায় পাকিস্তান
দুর্গাপুরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার।
রাজশাহী মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু ছুরিকাঘাত
নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে
মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা
শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস
চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স
৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট
খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত
ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া
সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২
সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা