রাসূলুল্লাহ (সা.) : বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা

Daily Inqilab মাওলনা মুহাম্মাদ শীছ ইদরীস

০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম

রাসূলুল্লাহ (সা.) যৌবনকাল থেকেই ছিলেন একজন শান্তিপ্রিয়, ন্যায়নিষ্ঠ ও হকতরফদার মানুষ। সীরাতে ইবনে হিশামে আছে, মক্কায় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এবং নিপীড়িত মানুষের সাহায্যার্থে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়, যে সংগঠনে রাসূলুল্লাহও (সা.) শরীক ছিলেন। অথচ সে সময়ে তাঁর বয়স ছিলো মাত্র পনের থেকে ষোল বছর।

একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন : (আমি আবদুল্লাহ বিন যা‘দানের ঘরে যেখানে ‘হিলফুল ফুযূল’ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল) এমন একটি চুক্তিতে শরীক ছিলাম, যার মূল্য আমার কাছে লাল উটনীর চেয়েও বেশি। এই ইসলামের যামানায়ও যদি সেই চুক্তি ও অঙ্গীকার পূরণের জন্য ডাকা হয় তাহলেও আমি লাব্বাইক বলব। (মুসনাদে আহমদ : ১৬৫৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বয়স যখন তেত্রিশ তখন কুরাইশরা কা‘বা ঘরের পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে। তখন হজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে গোত্রগুলোর মাঝে ভীষণ দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং যুদ্ধের উপক্রম হয়। প্রত্যেক গোত্রই এই সৌভাগ্যকে শুধু নিজেদের হক বলে মনে করতে থাকে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জ্ঞান ও বিচক্ষণতাই তাদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টিতে যে কোন মানুষের জান ছিল অত্যন্ত মূল্যবান, যার কারণে তিনি অন্যায় হত্যাকে কবীরা গোনাহ বলে ঘোষণা করেছেন। বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন : লোক সকল! তোমাদের পরস্পরের জান-মাল তোমাদের উপর এমন সম্মানিত যেমন আজকের দিন, এই মাসে ও এই শহরে।

এখন নারী স্বাধীনতা ও নারীঅধিকারের দাবি নিয়ে শোনা যায় অসংখ্য শ্লোগান তবুও নারী আজ পদেপদে লাঞ্ছিত অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন প্রেরিত হলেন তখন পৃথিবীতে এরকম অবস্থাই বিরাজ করছিল। সে সময় নিজ ইচ্ছায় কোনো নারীর বেঁচে থাকারও অধিকার ছিল না। এমন পরিস্থিতিতেই নবীয়ে রহমত (সা.) নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের শিক্ষা-দীক্ষা প্রদানের গুরুত্ব ও ফজীলত বর্ণনা করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনজন মেয়ে-সন্তানকে লালন-পালন করে, উত্তম শিক্ষা ও তারবিয়াত প্রদান করে এবং (বিবাহের উপযুক্ত হলে) বিবাহ দিয়ে দেয়; সর্বোপরি তাদের সাথে উত্তম আচরণ করে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। তিনি আরো ইরশাদ করেন : যার কোনো বোন বা মেয়ে হয় (এবং সে তাকে জিন্দা কবর না দেয় গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ পরীক্ষা করে গর্ভ নষ্ট করে দেয়াও উক্ত কাজের শামিল, তাকে অনর্থক মনে না করে এবং ছেলে-সন্তানকে অগ্রাধিকার না দেয়) তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। (জামে তিরমিযী : ১৯১২)।

তৎকালীন সময়ে আরবে ন্যায় ও ইনসাফের হিসাব করা হতো শুধু নিজ বংশ, গোত্র, বর্ণ ও আত্মীয়তার মধ্যে এবং এখনো সারাবিশ্বে তাই চলছে। রাষ্ট্র, ধর্ম ও দলের ভিত্তিতে বিচারের ফয়সালা হচ্ছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সকল ব্যবধানকে মিটিয়ে দিয়ে ন্যায় ও ইনসাফের এমন নীতি প্রবর্তন করেছেন, যার মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষ ইনসাফ লাভ করেছে এবং ইনসাফের প্রশ্নে কারো বংশ-মর্যাদা, ধনী-দরিদ্র, দল, গোত্র ও রাষ্ট্র বাধা হতে পারেনি।

একবার মাখযূম গোত্রের ফাতেমা নামে এক মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়ল। তখন নববী-আদালত থেকে তার হাত কেটে দেয়ার ফায়সালা জারি হলো। বিষয়টিকে কেউ কেউ সমর্থন করতে না পেরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খুবই প্রিয় একজন সাহাবী হযরত উসামা বিন যায়েদ (রাযি.) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে সুপারিশ করল যে, এমন সম্মানিত একজন মহিলাকে এতো বড় একটি অপমানজনক শাস্তি না দেয়া হোক। রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত উসামা (রাযি.)-এর উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, তুমি কি আল্লাহ তায়ালার একটি বিধান বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, লোকসকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ভ্রষ্টতার কারণ এটাই ছিল যে, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। আর ‘হদ’ আরোপ করা হতো দুর্বল কেউ চুরি করলে। আল্লাহর কছম! আমার কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে আমি তারও হাত কেটে দেব। (সহীহ বুখারী : ৬৮৮৭)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-১
শান্তির সমাজ পেতে ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই
দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণকামিতা
ইসলামে এসো, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে
নিরাশা নয় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-২
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো