আল্লাহর অনুগত শাসকের করণীয়
১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে বলেছেন, যারা জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকাজে বাধা দেবে এবং নামায রোযা যাকাত ইত্যাদি দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদিসহ আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় বিধিবিধান বাস্তবায়ন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাহায্য করবেন এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন।
অপরদিকে যারা জমিনে অশান্তি বিস্তার করবে, অনাচার ও পাপাচার ছড়িয়ে বেড়াবে, জোর-জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে একসময় ধ্বংস করে দেবেন। কারণ যাদের চারিত্র্যিক অবক্ষয় ও মানবিক বিপর্যয় ঘটে, এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তা‘আলা অনিবার্যভাবে তাদের জাগতিক মান-মর্যাদাও কেড়ে নেন। এ দুই শ্রেণির মধ্যে যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অনুুগত, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তারা এমন যে, আমি যদি দুনিয়ায় তাদেরকে ক্ষমতা দান করি, তবে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। সব কাজের পরিণতি আল্লাহরই হাতে। (সূরা হজ্ব : ৪১)।
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি যারা আনুগত্যশীল, তারা যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে, তখন তাদের করণীয় কী? কিছুটা সংক্ষেপে উপরিউক্ত আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। যদিও আয়াতটি কুফরের বিরুদ্ধে জিহাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু আয়াতের মর্ম অনেক ব্যাপক। এর পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ও তাদেরকে সাহায্য করবেন। কুরআন কারীমের ভাষায় আল্লাহকে সাহায্য করার অর্থ, তাঁর বান্দাদেরকে সাহায্য করা এবং তাঁর দ্বীনকে জমিনে প্রতিষ্ঠা করা। যারা আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে, তারা আল্লাহর অনুগত বান্দা।
আল্লাহ তাঁর এই অনুগত বান্দাদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় উপায়ে সাহায্য পেতে থাকবে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তাদের কর্তব্য- নামায রোযা যাকাত ইত্যাদি দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলি পালনকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করা। সৎকাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজে বাধা দেওয়া। নিজেরাও ফেতনা-ফাসাদ না করা, অন্যদেরকেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ও ছড়াতে না দেওয়া। এভাবে মুসলিম সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, গড়ে উঠবে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ- মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। এই উম্মতের এক শ্রেণির মানুষ তা নিষ্ঠার সাথে সর্বদা পালন করে বিধায় এ উম্মত এই দিক থেকেও অপরাপর উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন : (হে মুসলিমগণ!) তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করে থাক ও অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাক এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।
কাজেই সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ছেড়ে দিলে আল্লাহ প্রদত্ত একটি গুরুদায়িত্বে চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হবে এবং এ উম্মত অন্যান্য সম্প্রদায় অপেক্ষা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের একটি দিক হারাবে। কাজেই সরকারের কর্তব্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ-এর দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকি করা। সরকারের একটি বিভাগ বা মন্ত্রণালয় থাকবে, যারা সমাজের সর্বস্তরে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ)-এর কাজ পরিচালনা করবে। আর এ কথা তো বলা বাহুল্য, সৎ ও অসৎ কাজের মানদণ্ডের একমাত্র নির্ধারক আল্লাহ তা‘আলা। তাঁর নীতি-নির্ধারণ অনুযায়ীই ন্যায় ও অন্যায় কাজের বিচার-বিবেচনা হবে।
আল্লাহর অনুগত শাসকের আরেকটি কর্তব্য হল, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কোনো অবস্থায়ই নিজেরাও জুলুম ও সীমালঙ্ঘন না করা, আবার জনগণের মধ্যেও শক্তিমান যেন দুর্বলের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকা। এমনকি নিজে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হওয়ার পরে ক্ষমতা লাভ হলে জালেমের ব্যাপারেও প্রতিশোধ পরায়ণ না হওয়া। হয়তো ক্ষমা প্রদর্শন করা, অথবা ইনসাফ-সম্মতভাবে বিচার করা।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়ে ইরশাদ করেন : তোমাদেরকে মসজিদে হারামে (প্রবেশ করতে) বাধা দিয়েছিল- এই কারণে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে (তাদের প্রতি) সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়েদা : ২)।
মসজিদে হারামে ইবাদত করা যে কত বড় প্রাপ্তি তা প্রত্যেক মুমিনেরই জানা রয়েছে। যে মসজিদে হারামে ইবাদত এমনকি তাতে প্রবেশ করতেও যারা দিনের পর দিন বাধা দিয়েছিল, অকথ্য নির্যাতন করেছিল, সেইসব কাফের-মুশরিকদের প্রতিও আল্লাহ তা‘আলা জুলুম করতে ও প্রতিশোধ পরায়ণ হতে নিষেধ করেছেন। এটাই ইসলামের মহা আদর্শিক শিষ্টাচার।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেরপুরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেপ্তার-৭
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী
চাঁদপুরে কিশোরচালক মহিন হত্যা মামলার ৩ আসামী আটক
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬২৯ জন